মসজিদে নববীতে ইফতার : মুসলিম ভ্রাতৃত্বের এক অনন্য দৃষ্টান্ত

Iftarমসজিদে নববী। মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর রওজা শরীফ রয়েছে এখানেই। এই মসজিদ তাই সারা বিশ্বের মুসলমানদের কাছে অতি পবিত্র এক স্থান। পবিত্র রমজানে সেখানে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের ধর্মপ্রাণ মুসলমানের ঢল নামে। ইফতারের সময় সৃষ্টি হয় এক নয়নাভিরাম দৃশ্য। হাজার হাজার মানুষ একসঙ্গে ইফতার করছেন। কোথাও কোনো বিশৃঙ্খলা নেই। লাইন ধরে বসে সবাই ইফতার করছেন। কোনো জাতি, বর্ণ, গোত্র, ভাষার ব্যবধান নেই। সবাই মিলেমিশে এ সময় এক হয়ে যান। তাদের একটিই পরিচয়, তারা মুসলমান।
পবিত্র মক্কার গ্র্যান্ড মসজিদের কথা বাদ দিলে বিশ্বে আর কোথাও খাবার নিয়ে হাজার হাজার মানুষে এমন সুশৃঙ্খল-সম্প্রীতির নজির কেউ দেখতে পাবেন না।
আল মদিনা আরবি পত্রিকার সাংবাদিক আবদুল রহিম আল হাদাদি বলেন, এমন নয়ন কাড়া দৃশ্য আপনি পুরো রমজানেই সূর্যাস্তের সময় দেখতে পাবেন। আমি দেখেছি, বিভিন্ন বর্ণের, সংস্কৃতির, গোত্রের মানুষ কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে ইফতার করছেন। তারা একে অন্যকে সহযোগিতা করছেন। অন্যের যত্ন নিচ্ছেন। এর মধ্যে সবচেয়ে নজর কাড়া দৃশ্য এটিই। কারণ, একজন মানুষ তার পাশে বসা মুসলিম ভাই কি খাচ্ছেন বা পান করছেন তা দেখভাল করছেন। এমনটা সবাই করেন।
মদিনার অধিবাসী আদনান দাবোর। তিনি বলেন, আগে আছরের নামাজের আগেই শহরের বেশিরভাগ মানুষ সমবেত হতেন মসজিদে নববীতে। তারা চেষ্টা করতেন রওজা শরীফের কাছে জায়গা করে নিতে। তিনি বলেন, এখন থেকে ৫০ বছর আগে আমরা এই রীতি অনুসরণ করতাম। তখন রমজানে অল্প সংখ্যক বিদেশি অতিথি এই মসজিদে আসতেন। আমরা পানি, বিভিন্ন রকম খেজুর, রুটি, মদিনার স্পেশাল খাবার নিয়ে আসতাম সেহরির জন্য। এখনও আমরা তা করি। এর মধ্য দিয়ে আমরা পবিত্র রমজানের সওয়াব পাওয়া ও রমজানকে উপভোগ করার চেষ্টা করি। আমরা বিশ্বের বিভিন্ন স্থানের মুসলিম ভাইদের সঙ্গে একত্রে মাগরিব, এশা ও তারাবি নামাজ আদায় করি। কোনো সমস্যা ছাড়াই হাজার হাজার মানুষ এখানে ইফতার করেন। এটা এক বিস্ময়কর ব্যাপার।
মসজিদে নববীতে ২০ বছর ধরে পুরনো কিছু বন্ধুকে নিয়ে ইফতার করেন ফয়েজ আল আহমাদি। তিনি পবিত্র রমজানের এই নেয়ামত থেকে বঞ্চিত হতে চান না। বলেন, আমরা আমাদের প্রপিতামহের কাছ থেকে এই রীতিটি পেয়েছি। আমরা যখন শিশু ছিলাম তখন তারা আমাদের সঙ্গে নিয়ে আসতেন এখানে। মসজিদে নববীতে মুসলিমদের মধ্যে ভালো কাজ করার যে প্রতিযোগিতা, তা দেখে আমি ভীষণ আনন্দিত। এই মসজিদে যেসব মুসলিম নামাজ পড়তে আসেন তাদের সংখ্যা ক্রমশ বাড়ছে। তাদের চাহিদা পূরণ করার জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণে খেজুর, রুটি, দই, পানির বোতল সরবরাহ দেয়া হয়। এ অবস্থা অনেক বছর ধরে মসজিদে নববীতে দেখে আসছেন আবদুল ওয়াহাব আল বেলুচি। তিনি বলেন, শৈশব থেকেই আমরা মসজিদে নববীতে ইফতার করতে চাই। এ সময় পিতা, আত্মীয়-স্বজন সঙ্গে করে নিয়ে যান দই, খেজুর, রুটি, চা, কফি। এ মসজিদেই আমরা আছর, মাগরিব, এশা ও তারাবি নামাজ আদায় করি।

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button