শরণার্থী সংখ্যা সর্বকালের সর্বোচ্চ : জাতিসংঘ
যুদ্ধের কারণে ঘরছাড়া শরণার্থীর সংখ্যা এক নতুন রেকর্ডে পৌঁছেছে বলে জানিয়েছে জাতিসংঘ। ওই শরণার্থীদের মধ্যে রয়েছেন জীবন বাঁচাতে ভিনদেশে পারি দেয়া মানুষ, রাজনৈতিক আশ্রয়প্রত্যাশী এবং অভ্যন্তরীণ ঘরছাড়া মানুষ।
জাতিসংঘের তথ্যমতে, ২০১৫ সালের শেষ নাগাদ প্রায় ৬ কোটি ৫৩ লাখ মানুষ শরণার্থী হয়েছে। পুরো পৃথিবীর ১১৩ জন মানুষের মধ্যে একজন শরণার্থী। যা এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ শরণার্থীর রেকর্ড। বিশ্ব শরণার্থী দিবস উপলক্ষে প্রকাশিত জাতিসংঘের এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য প্রকাশ করা হয়।
এই সংখ্যাটা ইউরোপের জন্য আতঙ্কের কারণ হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। শরণার্থীদের একটা বড় অংশ ইউরোপের বিভিন্ন দেশে আশ্রয়ের জন্য জড়ো হচ্ছেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে আতো বড় শরণার্থী সংকট মোকাবেলা করতে হয়নি ইউরোপকে। আর এই অবস্থা ইউরোপে উগ্র ডানপন্থা এবং শরণার্থী-বিরোধী নীতিকে উসকে দিচ্ছে বলে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি-র এক প্রতিবেদনে বলা হয়।
জাতিসংঘের ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, শরণার্থীদের অর্ধেকই সিরিয়া, আফগানিস্তান এবং সোমালিয়ার যুদ্ধে আক্রান্ত। প্রতিবেদন অনুসারে, ইউরোপে শরনার্থীদের ঢল নামলেও ওই শরনার্থীদের ৮৬ শতাংশই স্বল্পোন্নত বা মধ্যম আয়ের দেশে রয়েছেন।
গত বছর ইউরোপে ১০ লাখ ১১ হাজার ৭০০ জন শরণার্থী সমুদ্রপথে ইউরোপে প্রবেশ করেছে। এছাড়াও স্থলপথেও ৩৫ হাজার মানুষ ইউরোপে প্রবেশ করেন বলে জানিয়েছে ইন্টারন্যাশনাল অর্গানাইজেশন ফর মাইগ্রেশন (আইওএম)।
ইউএনএইচসিআর প্রধান ফিলিপো গ্রান্ডি বলেন, সংঘাত ও দমন পীড়নের ফলে অসংখ্য মানুষ নিজেদের বাড়িঘর ছেড়ে পালাচ্ছে এবং শরণার্থী বিরোধী রাজনৈতিক ভাবধারার কারণে তাদেরকে পুনর্বাসনের আগ্রহ আটকে রয়েছে।
জাতিসংঘের তথ্যানুযায়ী, ২০১৫ সালের মধ্যে বাস্তুচ্যুত লোকের সংখ্যা বেড়ে হয় ৫ কোটি ৮০ লাখ। বিশ্বের লোকসংখ্যা ৭৩৪ কোটি ৯০ লাখ ধরে জাতিসংঘ জানায়, প্রতি ১১৩ জনের একজন হয় অভ্যন্তরীণভাবে বাস্তুচ্যুত বা একজন শরণার্থী। এ সংখ্যা ব্রিটেন বা ফ্রান্সের জনসংখ্যার চেয়েও বেশি।
১৯৯০ এর দশকের মাঝামাঝি থেকে বাস্তুচ্যুত মানুষের সংখ্যা বাড়তে থাকলেও ২০১১ সালে সিরিয়ায় গৃহযুদ্ধ শুরু হওয়ার পর এ সংখ্যা লাফিয়ে লাফিয়ে বেড়েছে। বিশ্বে এখন মোট ৬ কোটি ৫৩ লাখ লোক বাস্তুচ্যুত হয়েছে। এর মধ্যে ৪ কোটি ৮০ লাখ নিজেদের দেশের মধ্যে বাস্তুচ্যুত হয়েছে এবং ২ কোটি ১৩ লাখ সীমান্ত পাড়ি দিয়ে অন্য দেশে আশ্রয় নিয়েছে। শরণার্থীদের মধ্যে ফিলিস্তিনী নাগরিকের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি এবং এ সংখ্যা ৫০ লাখেরও বেশি। এর পরের অবস্থানে রয়েছে সিরিয়া। দেশটির মোট শরণার্থীর সংখ্যা ৪৯ লাখ। তারপরে রয়েছে আফগানিস্তান (শরণার্থীর সংখ্যা ২৭ লাখ) এবং সোমালিয়া (শরণার্থী ১১ লাখ)। -বিবিসি