স্বাধীনতা দিবস নাকি দুর্যোগের আভাস
ঐতিহাসিক এক গণভোটে ব্রিটেনের বেশীরভাগ মানুষ ইউরোপীয় ইউনিয়ন ছাড়ার পক্ষে ভোট দিয়েছেন, আর এর প্রতিক্রিয়া এরই মধ্যে পড়তে শুরু করেছে বিশ্বজুড়ে।
ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন পদত্যাগের ঘোষণা দিয়েছেন, অন্যদিকে ইউরোপীয় ইউনিয়নে থাকার পক্ষের শিবির ভাবছে কেন এই ফলাফল হলো।
গণভোটের এই ফলাফলের কারণে ৪৩ বছর পরে ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে আসতে যাচ্ছে ইউরোপের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ দেশটি।
গণভোটের ফলাফলে দেখা যাচ্ছে, ৫২ শতাংশ ব্রিটিশ নাগরিক ইইউ ত্যাগের পক্ষে ভোট দিয়েছেন।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের থাকা না থাকার এই ভোট, যাকে ব্রেক্সিট হিসেবে চিহ্নিত করা হচ্ছিল, তাতে ইংল্যান্ড এবং ওয়েলসের বেশীরভাগ মানুষ ইউরোপ ছাড়ার পক্ষে রায় দিয়েছেন।
নাইজেল ফারায ইউরোপীয় ইউনিয়ন ছাড়ার পক্ষের প্রচারণায় সামনের সারিতে ছিলেন
অন্যদিকে, রাজধানী লন্ডন, স্কটল্যান্ড আর উত্তর আয়ারল্যান্ডে বেশী ভোট পড়েছে ইউরোপীয় জোটে থাকার পক্ষে।
ইউরোপীয় ইউনিয়ন বিরোধী রাজনৈতিক দল হিসেবে পরিচিত ইউকেআইপি’র নেতা নাইজেল ফারায গণভোটের ফলাফলকে ‘স্বাধীনতা দিবস’ বলে স্বাগত জানিয়েছেন।
অন্যদিকে, ইউরোপীয় ইউনিয়নে থাকার পক্ষের শিবির একে চিহ্নিত করেছে দুর্যোগ হিসেবে।
ব্রেক্সিটের ফলাফল এরই মধ্যে বিশ্বজোড়া প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে। ব্রিটিশ মুদ্রা পাউন্ডের দাম ১৯৮৫ সালের পর সবচেয়ে নিচে নেমে গেছে।
ব্যাংক অব ইংল্যান্ড জানিয়েছে, আর্থিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করতে সব ধরণের ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।
ইউরোপের শেয়ারবাজারগুলোতে প্রতিক্রিয়া হয়েছে ব্যাপক। লন্ডনের মূল শেয়ার সূচক দিনের শুরুতেই সাত শতাংশ পড়ে গেছে।
এশিয়াতেও শেয়ারের দাম পড়েছে। টোকিয়োতে সূচক পড়েছে আট শতাংশ।
অনেকেই বলছেন, ২০০৮ সালের আর্থিক সংকটের পর বাজারের এ ধরণের অস্থিতিশীলতা তাঁরা আর লক্ষ্য করেননি।
ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী ফিলিপ হ্যামন্ড বলেছেন, ভোটাররা পরিষ্কার ভাষায় তাদের মতামত জানিয়েছেন।
প্রধানমন্ত্রী ক্যামেরন পদত্যাগের ঘোষণা দেয়ার আগে তিনি বলেছিলেন, মি. ক্যামেরন ব্রিটিশ জনগণের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করবেন।
তবে মি. ফারায ফলাফল ঘোষণার পরপরই প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ দাবী করেন।
ইউরোপীয় ইউনিয়ন ত্যাগের পক্ষের সবচেয়ে সুপরিচিত নেতা বরিস জনসন অবশ্য এক চিঠিতে ফলাফল যাই হোক না কেন, মি. ক্যামেরনকে নিজের পদে থেকে যেতে আবেদন জানিয়েছিলেন।
জার্মানীর পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াল্টার স্টেইনমিয়ের গণভোটের ফলাফলকে ‘ইউরোপ ও ব্রিটেনের জন্যে একটি দুঃখের দিন’ হিসেবে বর্ণনা করেন।
গণভোটের ফলাফল যুক্তরাজ্যের অন্তর্ভুক্ত রাজ্যগুলোর ক্ষেত্রে কী ধরনের প্রতিক্রিয়া তৈরী করে, সেটি গভীর আগ্রহ নিয়ে সবাই লক্ষ্য করবেন।
স্কটল্যান্ড যুক্তরাজ্যে থাকার প্রশ্নে আরেকটি গণভোট করবে বলে ধারণা আরও জোরদার হচ্ছে।
স্কটল্যান্ডের প্রতিটি জেলায় ইউরোপীয় ইউনিয়নে থাকার পক্ষে বেশী ভোট পড়েছে।
স্কটল্যান্ডের ফার্স্ট মিনিস্টার নিকোলা স্টারজন বলেছেন, স্কটিশরা তাদের ভবিষ্যৎ ইউরোপে থাকার মধ্যে দেখতে পাচ্ছে।
উত্তর আয়ারল্যান্ডের সবচেয়ে বড় জাতীয়তাবাদী দল সিন ফেন বলছে, এই ভোট একটি ঐক্যবদ্ধ আয়ারল্যান্ডের পক্ষে গণভোট আয়োজনে তাদের দাবীকে আরও জোরালো করবে।
আর আয়ারল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী এন্ডা কেনি বলেছেন, ব্রিটিশ ভোটের গুরুত্বপূর্ণ প্রতিক্রিয়া নিয়ে তাঁর সরকারের মধ্যে আলোচনা করা হবে। -বিবিসি