যুক্তরাষ্ট্রে বহিষ্কারের মুখে অর্ধকোটি অভিবাসী
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের এক নির্বাহী আদেশের পর ভেবেছিলেন এত দিনের দুঃসহ অভিবাসন জীবনের অবসান ঘটতে যাচ্ছে তাদের। কিন্তু সে আশায় গুড়ে বালি। গতকাল বৃহস্পতিবার এক রায়ে লক্ষাধিক বাংলাদেশিসহ অর্ধকোটি অবৈধ অভিবাসীকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে বহিষ্কারের মুখে ঠেলে দিলেন মার্কিন সুপ্রিম কোর্ট।
রয়টার্স জানায়, ২০১৪ সালের ২০ নভেম্বর মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা এক নির্বাহী আদেশের ঘোষণা দেন। তাঁর ওই আদেশবলে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত ৫০ লাখ অবৈধ অভিবাসীর বৈধতা পাওয়ার পথ সুগম হয়েছিল।
প্রেসিডেন্টের নির্বাহী ক্ষমতাবলে ওবামা আদেশ দিয়েছিলেন, পাঁচ বছরের বেশি সময় ধরে যারা অবৈধভাবে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করছেন, তারা বৈধতার জন্য আবেদনের মাধ্যমে নিবন্ধন করতে পারবেন। উচ্চ ডিগ্রিধারী ও দক্ষ প্রযুক্তিকর্মীদের জন্য এ সুযোগ আরো সম্প্রসারণ করা হয়েছিল।
শুধু তাই নয়, এসব অভিবাসীকে কাজ করে জীবিকা নির্বাহের জন্য ‘ওয়ার্ক পারমিট’ ইস্যুর প্রক্রিয়াও শুরু হয়েছিল। এ আদেশের নাম ছিল ‘ডেফার্ড অ্যাকশন ফর প্যারেন্টস অব আমেরিকান অ্যান্ড লফুল পারমানেন্ট রেসিডেন্টস’ তথা ‘ডাপা’।
তবে ওবামার এমন ঘোষণায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছিলেন রিপাবলিকানরা। তাঁদের দাবি ছিল, কংগ্রেসকে পাশ কাটিয়ে এ ঘোষণা দেওয়ার এখতিয়ার প্রেসিডেন্টের নেই। প্রেসিডেন্টের ওই ঘোষণার বিপক্ষে আদালতেও গিয়েছিলেন রিপাবলিকানরা।
স্থানীয় সময় গতকাল বৃহস্পতিবার দেওয়া সুপ্রিম কোর্টের ওই রায়ে বিচারপতিরা কোনো স্পষ্ট সিদ্ধান্ত দিতে পারেননি। ফলে মার্কিন প্রেসিডেন্টের দেয়া নির্বাহী আদেশ স্থগিত হয়ে গেল।
বিবিসি জানিয়েছে, রায় দেওয়ার সময় বিচারপতিরা দুভাগে বিভক্ত হয়ে যান। অর্থাৎ আট বিচারপতি সমান দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়ায় প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার একটি নির্বাহী আদেশ স্থবির হয়ে পড়ল।
এদিকে সুপ্রিম কোর্টের এই বিভক্ত রায়ে বাংলাদেশীসহ যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে অভিবাসীদের মধ্যে ক্ষোভ এবং হতাশা ছড়িয়ে পড়েছে। সুপ্রিম কোর্টের এ রায়ের সংবাদ প্রচারের পরই নিউইয়র্ক, ওয়াশিংটন ডিসি, লস অ্যাঞ্জেলেস, ফ্লোরিডা, টেক্সাস, আরিজোনা প্রভৃতি স্থানে বিক্ষোভ-সমাবেশ হয়েছে।
সংবাদমাধ্যমের তথ্য অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রে বর্তমানে প্রায় এক কোটি ১০ লাখ লোক অবৈধভাবে বসবাস করছেন। সাম্প্রতিক সময়ে এই অবৈধ অভিবাসীদের একটি অংশকে সরকার দেশে ফেরত পাঠানোর উদ্যোগ নিলে পরিস্থিতি জটিল আকার ধারণ করে, কেননা তাদের একটি বড় অংশের সন্তানরা বৈধ নাগরিক হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করছেন।