ধারাবাহিক লোকসানের মুখে বন্ধ হওয়ার পথে সিটিসেল
ক্রমাগত গ্রাহক কমতে থাকা এবং লোকসান দিন দিন বৃদ্ধি পাওয়ায় বন্ধ হওয়ায় পথে বাংলাদেশের প্রথম ও একমাত্র সিডিএমএ মোবাইল অপারেটর সিটিসেল।
সিটিসেলের সবচেয়ে বড় অংশীদার সিঙ্গাপুরভিত্তিক সিংটেল গত বছর এক প্রতিবেদনে জানায়, ২০১১ সালের এপ্রিল থেকে ২০১২ সালের মার্চ পর্যন্ত তাদের লোকসান হয়েছে ২ কোটি ৯০ লাখ সিঙ্গাপুরী ডলার। তার আগের বছর তাদের লোকসানের পরিমাণ ছিল ১ কোটি ৬০ লাখ সিঙ্গাপুরী ডলার।
সিটিসেল, অর্থাৎ প্যাসিফিক বাংলাদেশ টেলিকম লিমিটেডের ৪৫ শতাংশ মালিকানা রয়েছে সিংটেল এশিয়া প্যাসেফিক ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেডের হাতে। এছাড়া ফার ইস্ট টেলিকম লিমিটেড ২৩ দশমিক ৫৭ শতাংশ এবং প্যাসেফিক মোটর লিমিটেড ৩১ দশমিক ৪৩ শতাংশ শেয়ারের মালিক।
এদিকে, তৃতীয় প্রজন্মের মোবাইল প্রযুক্তির সেবার নিলামের জন্য যোগ্য বিবেচিত হওয়ার পরও ‘আর্থিক সমস্যার কারণে’ সিটিসেল বৃহস্পতিবার দুই কোটি ডলারের আর্নেস্ট মানি জমা দিতে পারেনি। ফলে প্রতিযোগিতা থেকে ছিটকে পড়েছে ১৯৮৯ সাল থেকে কার্যক্রম চালিয়ে আসা প্রতিষ্ঠানটি।
সিটিসেলের এই আর্থিক সঙ্কটের কারণও বেশ স্পষ্ট। দেশের মোবাইল ফোন গ্রাহকের সংখ্যা দশ কোটি ৬৯ লাখ ৩৪ হাজার ছাড়িয়ে গেলেও প্রতি মাসেই গ্রাহক হারাচ্ছে সিটিসেল।
বিটিআরসির তথ্য অনুযায়ী, কেবল জুলাই মাসে সিটি সেলের গ্রাহক সংখ্যা ১৩ লাখ ৮০ হাজার থেকে ১৩ লাখ ৬১ হাজারে নেমে এসেছে।
গত মে মাসে প্রতিষ্ঠানটির গ্রাহক সংখ্যা ছিল ১৪ লাখ। বছরের শুরুতে তাদের সেবা নিত ১৫ লাখের বেশি গ্রাহক। গত ৩ বছরে সিটিসেল ৫ লাখ ৯২ হাজার গ্রাহক হারিয়েছে।
এই সঙ্কট কাটিয়ে উঠতে ইতোমধ্যে ব্যবসায়িক কৌশল বদলানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে সিটিসেল কর্তৃপক্ষ।
বিটিআরসির হিসাবে গত জুন পর্যন্ত বাংলাদেশে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা ৩ কোটি ৫৬ লাখের বেশি, যাদের মেধ্যে ৩ কোটি ৩৯ লাখ ব্যবহার করেন মোবাইল ইন্টারনেট।
অবশ্য প্রযুক্তিগত কৌশলের অংশ হিসাবে গতবছর শেষ দিকে সিটিসেলকে জিএসএম প্রযুক্তিতে রূপান্তরের জন্য বিটিআরসির কাছে আবেদন করেছিল প্রতিষ্ঠানটি। কিন্তু সেজন্য একশ কোটির বেশি টাকা তাদের জমা দেয়ার কথা ছিল, যা তারা আর পরে দেয়নি।
এছাড়া টুজি লাইসেন্স নবায়নের জন্য সিটিসেলের যে অর্থ দেয়ার কথা, তার প্রায় ১০০ কোটি টাকা এখনো বাকি আছে বলে বিটিআরসির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
বিটিআরসির কর্মকর্তা বলেন, “বর্তমানে মোবাইল ফোন শুধুমাত্র কথা বলাতেই সীমিত নয়। মোবাইল ফোনের মাধ্যমে গ্রাহকরা বহুমাত্রিক সেবা নিচ্ছে, বিশেষ করে তৃণমূল পর্যায়ে গ্রাহক সংখ্যা বাড়ছে।”
বেসরকারি অপারেটরগুলো থ্রিজি সেবা চালু করার পর গ্রাহক সংখ্যা আরো বাড়বে বলে আশা প্রকাশ করেন।
চলতি বছরের জুলাই মাস পর্যন্ত বিটিআরসির হিসাব অনুযায়ী, রাষ্ট্রায়াত্ব মোবাইল ফোন অপারেটর টেলিটকসহ ও চার বেসরকারি অপারেটরের মধ্যে চারটি প্রতিষ্ঠানের গ্রাহক সংখ্যা জুন মাসের তুলনায় বেড়েছে, কমেছে কেবল সিটিসেলের।
ওই সময় পর্যন্ত দেশের সবচেয়ে বড় অপারেটর গ্রামীণফোনের গ্রাহক সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৪ কোটি ৪৭ লাখ, যা জুন মাসে চার কোটি ৪০ লাখ ছিল। বাংলালিংকের গ্রাহক সংখ্যা ২ কোটি ৭০ লাখ থেকে বেড়ে ২ কোটি ৭৩ লাখ হয়েছে। রবির গ্রাহক সংখ্যা ২ কোটি ২৯ লাখ থেকে বেড়ে হয়েছে ২ কোটি ৩০ লাখ।
এয়ারটেলের গ্রাহক ৭৮ লাখ থেকে ৭৯ লাখ এবং টেলিটকের ১৯ লাখ ১০ হাজার থেকে বেড়ে ১৯ লাখ ২০ হাজার হয়েছে। কেবল সিটিসেলের ক্ষেত্রে এক মাসে গ্রাহক কমেছে প্রায় ১৯ হাজার। ১৩ লাখ ৮০ হাজার থেকে কমে হয়েছে ১৩ লাখ ৬১ হাজার।