ফ্রান্সে ভিড়ের মধ্যে ট্রাক নিয়ে হামলা, নিহত ৮০
ফ্রান্সের নিস শহরে এক উৎসবে জমায়েত জনতার ওপর দিয়ে ট্রাক চালিয়ে দেয়ার ঘটনায় নিহত হয়েছেন কমপক্ষে ৮০ জন। আহত হয়েছেন আরো অনেকে। বাস্তিল দিবস উপলক্ষে আয়োজিত আতশবাজি দেখার জন্য ওই শহরে জড়ো হয়েছিলেন হাজারো মানুষ।
পুলিশ ওই ট্রাকচালককে গুলি করে হত্যা করে ট্রাক থামায়। তবে পুলিশ গুলি চালানোর আগেই ট্রাকচালক গুলি ছুঁড়েছিল বলে জানা গেছে। এখনও পর্যন্ত এই হামলার দায় স্বীকার করেনি কোনো সংগঠন। ফরাসি কর্তৃপক্ষ এই হামলাকে সন্ত্রাসী হামলা বলে অভিহিত করেছে। এই ঘটনার পর ফ্রান্সের জরুরি অবস্থার মেয়াদ আরো তিন মাস বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট ফ্রাঁসোয়া ওঁলাদে। এই হামলার নিন্দা জানিয়েছেন বিশ্বনেতারা।
খবরে বলা হয়, বৃহস্পতিবার রাতে বাস্তিল দিবস উদযাপন করতে ফ্রান্সের দক্ষিণাঞ্চলীয় শহরে নিসের বিখ্যাত চত্বর প্রমেনেদে দেস অঁলেতে জমায়েত হয়েছিলেন হাজারও মানুষ। ওই চত্বরে আয়োজন করা হয় আতশবাজির। স্থানীয় সময় রাত সাড়ে ১০টার কিছু সময় পর শেষ হয় আতশবাজি। আর তখনই ওই ‘সন্ত্রাসী’ ট্রাক ঢুকে পড়ে প্রমেনেদে চত্বরে।
ফ্রেঞ্চ কর্তৃপক্ষ জানায়, ২৫ টন ওজনের ওই ট্রাকটি জনাকীর্ণ ওই চত্বরে মানুষের ওপর দিয়ে প্রায় ২ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করে। আর তাতে ট্রাকের আঘাতে নিহত হন কমপক্ষে ৮০ জন। এর মধ্যে রয়েছেন কয়েকজন নারী ও শিশু। এই ঘটনায় আহত হয়েছেন আরো শতাধিক মানুষ।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বার্নার্ড কাজেনিউভ জানিয়েছেন, আহতদের মধ্যে কমপক্ষে ১৮ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়, ওই ট্রাকচালককে গুলি করে হত্যা করে থামানো হয় ট্রাকটি। তবে পুলিশ গুলি করার আগেই ট্রাক চালক গুলি ছুঁড়তে শুরু করে পুলিশকে লক্ষ্য করে।
স্থানীয় সরকারর একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ওই ট্রাকের মধ্যে অস্ত্র ও গ্রেনেড পাওয়া গেছে। ফ্রেঞ্চ পুলিশ এখনও ওই ট্রাকচালকের পরিচয় উদ্ধার করতে পারেনি। দেশটির সন্ত্রাসবিরোধী তদন্তকারীরা তার পরিচয় উদ্ধারে কাজ করছেন। তবে স্থানীয় পত্রিকা নিস-ম্যাটিন একটি সূত্রকে উল্লেখ করে জানিয়েছে, ৩১ বছর বয়সী ওই ট্রাকচালক ছিলেন তিউনিসিয়া বংশোদ্ভূত। পুলিশ এই হামলাকে সন্ত্রাসী হামলা বলেই উল্লেখ করেছে। তবে হামলার পর ৮ ঘণ্টা পেরিয়ে গেলেও এখনও পর্যন্ত এই হামলার দায় স্বীকার করেনি কোনো সংগঠন বা গোষ্ঠী।
গত বছরের নভেম্বর মাসে ফ্রান্সের প্যারিস শহরে আইএসের হামলার পর আবারো সংঘটিত হলো বড় ধরনের সন্ত্রাসী হামলা। ওই হামলার পর থেকেই ফ্রান্সে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করা রয়েছে। ২৬শে জুলাই শেষ হওয়ার কথা এই জরুরি অবস্থার মেয়াদ। কিন্তু এই হামলার পর তা আরো তিন মাসের জন্য বাড়ানোর কথা জানিয়েছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট ফ্রাঁসোয়া ওঁলাদে। হামলার পর ভোররাতের দিকে জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ দেন তিনি।
ফ্রান্সকে মারাত্মকভাবে আঘাত করা হয়েছে উল্লেখ করে ওঁলাদে বলেন, এ ধরনের হামলার বিরুদ্ধে লড়াই করতে আমাদের সামর্থ্য অনুযায়ী সবকিছু করতে হবে।
তিনি বলেন, এই ঘটনার পর ফ্রান্স দুঃখভারাক্রান্ত। দেশের সামরিক ও পুলিশ বাহিনীর সহায়তায় মজুদ সৈন্যদেরও নিয়োজিত করা হবে এবং বিশেষ করে সীমান্ত এলাকায় কঠোর নজরদারি করা হবে বলে জানান তিনি। ওঁলাদে বলেন, ফ্রান্সের জাতীয় দিবসে পরিচালিত এই হামলা ফ্রান্সের স্বাধীনতার ওপর হামলা। আর এই হামলা পরিচালনা করেছে মানুষের অধিকারকে তুচ্ছ গণ্য করা ‘ফ্যানাটিকরা’।
এদিকে বাস্তিল দিবসে ফ্রান্সের এই ‘সন্ত্রাসী’ ট্রাক হামলার ঘটনায় নিন্দা জানিয়েছেন বিশ্বনেতারা। মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা এই ঘটনার নিন্দা জানিয়ে বলেন, এটি একটি ভয়ংকর সন্ত্রাসী হামলা। এই ঘটনায় যারা প্রাণ হারিয়েছেন তাদের জন্য আমরা প্রার্থনা করি।
দেশটির জাতীয় নিরাপত্তা কাউন্সিলের মুখপাত্র নেড প্রাইস জানান, ওবামা সার্বক্ষণিক এই হামলার খোঁজখবর রাখছেন। মার্কিন প্রেসিডেন্সিয়াল নির্বাচনের দুই আপাত মনোনীত প্রার্থী হিলারি ক্লিনটন ও ডোনাল্ড ট্রাম্পও নিন্দা জানিয়েছেন এই হামলার।
ট্রাম্প বলেছেন, এটা একটা যুদ্ধ। আর হিলারি বলেছেন, এতে তারা ভীত নন। ইউরোপিয়ান কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড টাস্ক হামলার নিন্দা জানিয়ে বলেছেন, তারা ফ্রান্সের পাশেই রয়েছেন। তিনি বলেন, এটা দুঃখজনক যে ওই সময় ফ্রান্সের মানুষ স্বাধীনতা, ভাতৃত্ব উদযাপন করছিলেন। সহিংসতা ও ঘৃণার বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যেতে নিহতদের পরিবারসহ ফ্রান্সের জনগণ ও প্রশাসনের পাশেই তারা থাকবেন বলে জানান টাস্ক। চীনের প্রিমিয়ার লি কেকিয়াংও নিন্দা জানিয়েছেন এই সন্ত্রাসী হামলার। নিন্দা জানিয়েছেন এস্তোনিয়ার প্রধানমন্ত্রী, বেলজিয়াম ও স্পেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী।