মিসরের করুণ পরিণতি থেকে শিক্ষা নিয়েছে তুর্কী জনগণ

তিন বছর আগে গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত একজন প্রেসিডেন্টকে যখন সেনা অভ্যুত্থানের মাধ্যমে উৎখাত করা হয়েছিল তখন বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো অভ্যুত্থানকারীদের সমর্থনে রাস্তায় নেমে এসেছিল।
ঘটনাটি মিসরের এবং এর মাধ্যমে গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত প্রথম মিসরীয় প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মুরসির অমানবিক পতন ঘটেছিল।
মুরসির অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ মিত্র ও তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রজব তৈয়ব এরদোগান জানতেন যে, তার নিজ দেশের সেনাবাহিনীও যেকোনো মুহূর্তে একই ঘটনা ঘটাতে পারে। কিন্তু সত্যিই যখন অভ্যুত্থানকারীরা সরকার উৎখাতে ইস্তাম্বুল ও আঙ্কারার রাস্তায় নেমে আসলো তখন এরদোগানের প্রতিক্রিয়া হলো সম্পূর্ণ ভিন্ন। এরদোগানের ডাকে ঘোষিত কার্ফ্যু অমান্য করে হাজার হাজার সাধারণ জনগণ রাস্তায় নেমে এসে অভ্যুত্থানকারীদের প্রতিরোধ করে।
কুর্দিপন্থী এইচডিপিসহ সকল বিরোধীদল অভ্যুত্থানকারীদের নিন্দা জানায় এবং গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত রাখার জন্য সরকারকে সমর্থন জানায়। দিনশেষে বিরোধী রাজনৈতিক দল ও সাধারণ মানুষের অভূতপূর্ব সমর্থনের কারণে প্রেসিডেন্ট এরদোগানকে সরানোর চেষ্টা ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়।
সাধারণ তুর্কিদের বক্তব্য, যতই কর্তৃত্বপরায়ণই হোক না কেন দুই বছরেরও কম সময় আগে গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট এরদোগান অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলকারী জেনারেলদের তুলনায় শাসক হিসেবে অনেক শ্রেয়। এর কারণ অনুসন্ধানে জানা যায়, মিসরের করুণ পরিণতি থেকে শিক্ষা নিয়েছে তুর্কি জনগণ। গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত প্রসিডেন্ট মুরসিকে সরিয়ে ক্ষমতা দখলকারী সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল আবদেল ফাত্তাহ আল সিসির সরকার মুসলিম ব্রাদারহুডসহ উদারপন্থী দলগুলোর কর্মী-সমর্থকদের ওপর নজিরবিহীন দমন-পীড়ন চালিয়ে আসছে। জেল-জুলুম, গুম, খুন, বিচারবহির্ভূত হত্যার মাধ্যমে বিরোধীদের দমিয়ে রাখা হচ্ছে। নির্যাতন থেকে বাদ যাচ্ছে না সাধারণ মানুষও।
সিসি সরকারকে স্বীকৃতি দিতে অস্বীকারকারী এরদোগান প্রায়ই তার দেশবাসীকে অভ্যুত্থান পরবর্তী মিসরের অবস্থা স্মরণ করিয়ে দিতেন। তিনি বলতেন, মিসরের বর্তমান অবস্থা ২০১১ সালের আরব বসন্তের পূর্বে হোসনি মোবারকের শাসনকালীন দুরবস্থাকেও অতিক্রম করেছে।
শুক্রবার রাতেও অনেক তুর্কির মনে সেই ভয় উঁকি দিয়ে উঠেছিল। ইস্তাম্বুলের রাস্তায় অবস্থানকারী জনগণ তাই বারবার চার আঙ্গুলের ‘রাবিয়া’ চিহ্ন প্রদর্শন করছিলো।
২০১৩ সালের আগস্টে কায়রোর রাবিয়া স্কয়ারে সমবেত মুসলিম ব্রাদারহুড সমর্থকদের ওপরে সিসি সরকারের পুলিশ বাহিনী অমানবিক হামলা চালায়। তখন থেকে সিসির নির্যাতনকে ‘রাবিয়া’ চিহ্ন দ্বারা প্রকাশ করা হয়। এই চিহ্নটি অধিকাংশ তুর্কির নিকট পরিচিত। কারণ ওই ‘ট্র্যাজিক’ ঘটনার পর কয়েক মাস যাবৎ ‘রাবিয়া’ চিহ্নিত ব্যানার প্রধান প্রধান শহরগুলোর মোড়ে মোড়ে প্রদর্শন করা হয়েছে।
আপাতত সকল প্রকার অশুভ শক্তিকে পরাভূত করে নিজেদের দেশকে রক্ষা করতে সমর্থ হয়েছে তুর্কিরা। মিসরের প্রেসিডেন্ট মুরসির করুণ পরিণতি বরণ করতে হচ্ছে না প্রেসিডেন্ট এরদোগানকেও। এখন সময় রাজনৈতিক ঐক্যের। সে পথেও ভালোমতই অগ্রসর হয়েছেন এরদোগান।
প্রধান বিরোধীদলসহ সকল রাজনৈতিক দল জাতীয় ঐক্য গঠনে একমত হয়েছে। তুরস্ককে এগিয়ে নিতে শপথ নিয়েছেন রাজনীতিবিদসহ সর্বস্তরের মানুষ।
ক্যারিশম্যাটিক নেতৃত্বের গুণে নিজ দেশ তো বটেই আন্তর্জাতিক রাজনীতিতেও নিজেকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গেলেন এরদোগান। এর ফলে আরো একবার প্রমাণিত হলো রাজনীতিবিদ হিসেবে এরদোগান কতটা দূরদর্শী।

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন...
Close
Back to top button