আমার নামাজ : শয়তান বড়ই শক্তিশালী
ইঞ্জি: ফিরোজ আহমাদ: কি মুশকিল। গভীর রাত। রাতের নামাজে দাঁড়িয়েও কেন ভুল হলো? অথচ শীতের রাতের আরামের বিছানা ত্যাগ করি কঠিন শপথ নিয়ে। জীবনসঙ্গিনী স্ত্রীর মধুর মহব্বত, গরম লেপ-তোষকের আকর্ষণ সব কিছুকেই পদাঘাত করে ঘর থেকে বের হলাম। আগে-পরে দোয়া করে শরীয়তের পূর্ণ অনুসারী হয়ে অজু করলাম। অজুর পর আকাশের দিকে তাকিয়ে অজুর পরের দোয়াও ঠিকমতো পড়লাম। পবিত্র দেহে পবিত্র মনে পবিত্র বিছানায় বসে ১০ বার করে সেরা কালেমা আল্লাহর গুণ প্রশংসার আয়াতমালা পড়ে মনকে আল্লাহর উলুহিয়াতের দিকে ঝুঁকিয়ে দিয়ে সবদিক থেকে ফিরে এক আল্লাহকেন্দ্রিক নিজেকে প্রস্তুত করলাম। এরপর ধীরেসুস্থে কিবলামুখী হয়ে আল্লাহর সামনে দাঁড়িয়ে গেলাম। মনোযোগের সাথেই আউয়ুযুবিল্লাহ বিসমিল্লাহ, ছানা, সূরা ফাতিহাসহ অন্য সূরা, রুকু-সিজদা করে তাশাহুদ পড়ে দুই রাকাত নামাজ পড়তে ১২ মিনিট সময় লাগিয়ে দেই প্রতিদিনের মতো আজও। এক এক করে আট রাকাত নফল ও ৩ রাকাত বেতের শেষ করতে ১ ঘণ্টার উপর সময় ব্যয় করি। পরিপূর্ণ ধ্যান খেয়াল করে আল্লাহকে হাজির-নাজির জেনে প্রতিটি রুকু-সিজদায় পড়ে থাকি। সিজদায় গেলে মনে চায় আর মাথা ওঠাবো না। এভাবেই আল্লাহর পদ তলে নিজের পুরা অস্তিত্ব সপে দিয়ে মাথানত করে পড়ে থাকাবস্থায় মরণ হলে কতই না মজা হতো?
সিজদায় এভাবে গভীর রাতে পড়ে থাকি আমার আল্লাহকে নীরবে খুঁজে বেড়াই। কী আর্শ্চয। এভাবে মনোযোগী নামাজেও মাঝেমধ্যে মনে হয়, সিজদা দুইটার স্থলে তিনটা দিয়ে ফেলেছি। নামাজ দুই রাকাতের স্থলে এক রাকাত পড়েই সালাম ফিরাচ্ছি। পরক্ষণেই মনে আবার অনুশোচনা শুরু হয়ে যায়। ভাবতে থাকি- কেন এমন হলো? বিবেক আমাকে তখন সাক্ষী দেয় যে মাঝখানে এসে শয়তান আমার মনকে ভুলিয়ে দিয়েছে। নামাজের কেরায়াত, রুকু, সিজদা, তাশাহুদ পাঠের অবস্থা ভালো ছিল না। মুখ দিয়ে সূরা-কালাম পাঠ করছি ঠিকই। কিন্তু মনের ভেতরের অবস্থা সেখানে আটকা ছিল না। মুখ দিয়ে দোয়া কালাম পড়ছি আর মনের ভেতরে অন্য ভাবনা এসে গিয়েছে। কখনও সন্তানের কথা, কখনও প্রতিবেশীর ভাবনা, কখনও লেনদেন, কখনও পারিবারিক সুখ-দুঃখের কথা, কখনও রাজনৈতিক সংকটের কথা, কখনও বা অন্য প্রসঙ্গ মনের কোণে উদিত হয়। গভীর রাতের এমন কঠিন সময়েও শয়তান সক্রিয়। তালার পর তালা তারপরও অনেক তালা দিয়ে শতয়ানকে থামানো গেল না। মন-মেজাজ পবিত্র করে অনেক দোয়া কালাম পড়ে আল্লাহর সামনে দাঁড়িয়ে গেলাম নির্দিষ্ট মনে। শক্ত মনে প্রতি দুই রাকাত নামাজ পর পড়েছি আউয়ুজবিল্লাহি সামিউল আলীম মিনস শাইতানির রাজিম মিনহামজিহি, ওয়ানাফখিহি ওয়ানাফসিহি। বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম বলে নামাজ শুরু করেছি। প্রতিটি রুকু-সিজদায় পূর্বে আল্লাহ আকবারের বড় বড় তালা লাগিয়েছি। রুকু-সিজদায় যাওয়া-আসায় দোয়া পড়া বাদ দেইনি। সেই গভীর থেকে গভীর কুঠুরিতেও শয়তান ঢুকে গেল। নামাজে ভুল করিয়ে দিল। নামাজ শেষে তাই বার বার তাওবা পড়তে শুরু করলাম। নামাজের পর আবার লম্বা সিজদায় পড়ে আল্লাহর গোলামির জিজিরের আমি যে আটক তার প্রমাণ দিয়ে কেঁদে কেঁদে দোয়া করি। আল্লাহর কাছে মাফ চাই। শয়তান তাড়াবার জন্য সর্বশক্তি নিয়োগ করি। আরো মনোযোগী হয়ে আরো গভীরভাবে নামাজ পড়ার রুকু-সিজদায় রাত কাটাই। আশা হলো, আল্লাহ যদি আমাকে গ্রহণ করেন।