দিল্লীর রাজপথে ভুলুণ্ঠিত মানবতা
রাস্তায় দুর্ঘটনায় আহত কোনও ব্যক্তিতে মারাত্মক আহত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখলে অন্য মানুষেরা কি করবেন? এগিয়ে গিয়ে তাকে সাহায্য করার চেষ্টা করবেন-এমনটাই প্রত্যাশা করা হয়। কিন্তু ভারতের খোদ রাজধানী শহরেই ঘটেছে সম্পূর্ণ ভিন্ন এক ঘটনা।
দুর্ঘটনার শিকার হয়ে মুমূর্ষু একটি মানুষ আহত অবস্থায় এক ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে পড়ে থাকার পরও, তাকে হাসপাতালে নেয়া তো দূরের কথা, সামান্য সাহায্যের জন্যও এগিয়ে আসেনি একজন মানুষও। শেষপর্যন্ত একজনকে আসতে দেখা যায়, তাও ছিনতাইয়ের উদ্দেশ্যে। এ সমস্ত দৃশ্যই ধরা পড়েছে ওই এলাকাটির সিসিটিভি ফুটেজে। আর তা ছড়িয়ে পড়েছে ইন্টারনেটে। এছাড়া বিভিন্ন টেলিভিশন চ্যানেলেও ওই সময়কার ঘটনার দৃশ্য প্রচার করা হয়েছে।
ভারতীয় গণমাধ্যমে তার নামে বলা হয় ‘মাতিবুল’। সে দিনের বেলা রিকশা চালাতো এবং রাতে নিরাপত্তারক্ষীর কাজ করতো।
ভিডিও ফুটেজে দেখা যায় লোকটি আহত হওযার পর বহু গাড়ি আশপাশ দিয়ে চলে যাওয়ার সময় কেউ এগিয়ে না এলেও, একজন ব্যক্তি তার কাছে যায় এবং আহত মানুষটির মোবাইল ফোনটি নিয়ে পালিয়ে যায়।
বিভিন্ন টেলিভিশনে লোকটি আহত হওয়ার সময়কার চিত্রও দেখানো হয়। ভোর সাড়ে ৫টার সময় রাস্তার ধারে হেটে যাওয়ার সময় তিনি দুর্ঘটনার শিকার হন।
এরপর ভ্যান-চালক তাকে আহত হতে দেখেও পালিয়ে যায়। তারপরে রিকশা থেকে নেমে এসে একজন তার পকেট থেকে মোবাইল ফোনটি নিয়ে যায়।
এরও নব্বই মিনিট পর পুলিশ এসে যখন লোকটিকে উদ্ধার করে তখনও তার দেহ থেকে প্রচুর রক্তপাত হচ্ছিল। হাসপাতালে নেয়ার পর তাকে মৃত ঘোষণা করে চিকিৎসকরা।
পুলিশ জানায়, নাইট শিফট শেষে ভোরবেলা বাড়ি ফেরার পথে একটি ভ্যানের সাথে ধাক্কা খেয়ে আহত হন লোকটি।
এই ঘটনার পর দিল্লিতে সরকারের একজন মন্ত্রী বলেছেন, রাস্তায় দুর্ঘটনার শিকার ব্যক্তিদের সাহায্যের বিনিময়ে পুরস্কার প্রদানের উদ্যোগ নিচ্ছে কর্তৃপক্ষ।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সত্যেন্দার জেইন বলেছেন, কোনও পথচারী যদি দুর্ঘটনার শিকার কোনও ব্যক্তিকে হাসপাতালে পৌঁছে দেন তাহলে তাদেরকে বিশেষ পুরস্কার দেয়ার প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে।
আহত লোকটিকে মাতাল ভেবে হয়তো পথ-চলতি মানুষেরা এগিয়ে যাননি, ধারণা করছে পুলিশ।
এদিকে এই ঘটনার পর সামাজিক মাধ্যমে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা হচ্ছে বর্তমান ভারতে মানুষের সহমর্মিতা ও দায়িত্ববোধ নিয়ে।
‘এ ধরনের অমানবিক ও ভয়ংকর আচরণের জন্য আমাদের লজ্জিত হওয়া উচিত’ এমন বক্তব্যও আসছে সামাজিক মাধ্যমগুলোতে। -বিবিসি