নিউ ইয়র্কে বাংলাদেশী ইমামকে গুলি করে হত্যা
যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে দিনের আলোতে প্রকাশ্যে ২ বাংলাদেশীকে গুলি করে হত্যা করেছে এক অস্ত্রধারী। তারা দু’জনেই সিলেট বিভাগের। নিহতদের একজন হলেন স্থানীয় ওজোন পার্ক এলাকায় আল ফুরকান জামে মসজিদের ইমাম মাওলানা আলাউদ্দিন আকনজি (৫৫)। অন্যজন হলেন তার সহযোগী তারা উদ্দিন (৬৪)। এর মধ্যে আলাউদ্দিন আকনজির বাড়ি হবিগঞ্জের চুনারুঘাট উপজেলায়। অন্যজন তারা উদ্দিনের বাড়ি সিলেটে। শনিবার তারা জোহরের নামাজ আদায় করে বিকাল প্রায় ১টা ৫০ মিনিটের সময় মসজিদ থেকে দু’ব্লক দূরে ওজোন পার্কে হাঁটাহাঁটি করছিলেন। এ সময় এক অজ্ঞাত অস্ত্রধারী তাদেরকে গুলি করে হত্যা করে। সে তাদের খুব কাছ থেকে মাথায় গুলি করে। এ সময় তারা ছিলেন ইসলামী পোশাক পরা। এ ঘটনায় স্থানীয় প্রবাসী মুসলিমদের মধ্যে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। তারা এ হত্যাকান্ডের সুবিচার নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়েছেন।
মাওলানা আলাউদ্দিন আকনজি যে মসজিদে ইমামতি করতেন তার সামনে শনিবার সন্ধ্যায় সংবাদ সম্মেলন করেছে কাউন্সিল অন আমেরিকান ইসলামিক রিলেশনস। সেখান থেকে অপরাধীকে আটক করে বিচারের আওতায় আনার আহ্বান জানানো হয়েছে।
ওদিকে নিউ ইয়র্কের মেয়র বিল ডি ব্লাসিও ঘটনা নিবিড়ভাবে নজরদারি করছেন। এ হত্যাকান্ডের ফলে প্রবাসী মুসলিমদের মধ্যে দেখা দিয়েছে ভীতি। তারা বলছেন, নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন তারা। মাওলানা আলাউদ্দিন আকনজি ও তারা উদ্দিন ছিলেন স্থানীয় মুসলিমদের কাছে অতি শ্রদ্ধার পাত্র। তাদেরকে হারিয়ে শোকে ভেঙে পড়েছে স্থানীয় মুসলিমরা। তারা কোনভাবেই এ হত্যাকান্ড মেনে নিতে পারছেন না।
পুলিশ বলেছে, প্রচন্ড গরম ছিল এদিন। এ সময় নিহতরা ওই পার্কে গিয়ে পায়চারি করছিলেন। এ সময় অস্ত্রধারী ব্যক্তি তাদের পিছন দিক থেকে গিয়ে খুব কাছ থেকে মাথায় গুলি করে।
নিউ ইয়র্ক সিটি পুলিশ বিভাগের মুখপাত্র তিফফানি ফিলিপস বলেছেন, নিহতরা মুসলিম। তাদের ধর্মীয় বিশ্বাসের কারণে হত্যাকান্ডের শিকার হওয়ার মতোও কোন তথ্যপ্রমাণ মেলেনি। এ হত্যাকান্ডের পর প্রবাসী বিপুল সংখ্যক বাংলাদেশী সেখানে বিক্ষোভ করেছেন। মুসলিম এডভোকেসি গ্রুপ নিউ ইয়র্ক শাখার নির্বাহী পরিচালক আফাফ নাসের বলেছেন, এই কা-জ্ঞানহীন হত্যাকান্ডে জড়িতদের দ্রুততার সঙ্গে গ্রেপ্তার করতে হবে এবং আইনের মুখোমুখি করতে হবে।
জ্যামাইকা হসপিটাল মেডিকেল সেন্টারের মুখপাত্র আনড্রু রুবিন বলেছেন, গুলিবিদ্ধ ওই দুই ব্যক্তিকে তাদের হাসপাতালে নেয়া হয়েছিল আশঙ্কাজনক অবস্থায়। তাদের জীবন রক্ষার সব রকম চেষ্টা করা হয়েছে। কিন্তু তাদের বাঁচানো যায় নি।
উল্লেখ্য, মাওলানা আকনজি একজন শান্তিপ্রিয় মানুষ হিসেবে পরিচিত। জোন পার্ক এলাকায় মুসলিম সম্প্রদায়ের কাছে তিনি ছিলেন একজন শ্রদ্ধার পাত্র। তার ভাতিজা রাহি মজিদ (২৬) নিউ ইয়র্ক ডেইলি নিউজকে বলেছেন, আমার চাচা কোনদিন একটি মাছিকেও আঘাত করেন নি।
নিই ইয়র্ক সিটির মেয়র বিল ডি ব্লাসিওর প্রেস সেক্রেটারি এরিক ফিলিপস বলেছেন, পরিস্থিতির দিকে মেয়র নিবিড় পর্যবেক্ষণ করছেন। পুলিশি তদন্তের বিষয়েও তিনি নজরদারি করছেন। এরিক ফিলিপ এক বিবৃতিতে বলেছেন, কি কারণে এ হত্যাকান্ড ঘটেছে তা নিশ্চিত করে বলা না গেলেও নিউ ইয়র্ক পুলিশ বিভাগ ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে সব চেষ্টাই চালাবে।