লেবার পার্টির নেতৃত্ব নিয়ে গণভোট কার্যক্রম শুরু
বর্তমান নেতা জেরেমি করবিন ব্রিটিশ লেবার পার্টির নেতৃত্বে বহাল থাকবেন নাকি তার পরিবর্তে ওয়েন স্মিথকে নেতা নির্বাচিত করা হবে সে ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে শুরু হলো এক মাসের ভোটগ্রহণ কার্যক্রম। গতকাল সোমবার থেকে অনলাইনে শুরু হওয়া এ ভোটগ্রহণ প্রক্রিয়া চলবে ২১ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। অর্থাৎ দলের নেতৃত্বে করবিনকে নাকি স্মিথকে দেখতে চান সে সিদ্ধান্তটি লেবার সদস্যরা এ এক মাসের মধ্যে ভোট দিয়ে নিশ্চিত করবেন। আগামী ২৪ সেপ্টেম্বর উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় ইংল্যান্ডের লিভারডপুলে এক বিশেষ সমাবেশে চূড়ান্ত ফলাফল ঘোষণা করার কথা রয়েছে। এদিকে লন্ডনের মেয়র ও লেবার নেতা সাদিক খানের পর এবার স্কটিশ লেবার পার্টির কেজিয়া ডুগডালেও ওয়েন স্মিথকে সমর্থন দিয়েছেন। তবে দলের তৃণমূল কর্মী ও শ্রমিক ইউনিয়নগুলোর মধ্যে বিপুল সমর্থন থাকায় এখনও নেতৃত্বের চ্যালেঞ্জে করবিনই এগিয়ে আছেন বলে মনে করা হচ্ছে।
গত বছর দলের তৃণমূল কর্মীদের নিরঙ্কুশ সমর্থন নিয়ে লেবারদের নেতা নির্বাচিত হয়েছিলেন ৬৭ বছর বয়সী করবিন। ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে যুক্তরাজ্যের আলাদা না হওয়ার পক্ষে অর্থাৎ ‘রিমেইন’ শিবিরের হয়ে প্রচারণা চালিয়েছিলেন তিনি। তবে ব্রিটিশ জনগণের রায় এর বিপক্ষে যাওয়ার পর দলীয় নেতৃত্বের চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েন করবিন।জুনে ছায়া পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি বেনকে বরখাস্ত করার বিষয়টি মূলত করবিনের বিরুদ্ধে অনাস্থা ভোট আহ্বান করার ক্ষেত্রে লেবার এমপিদের জন্য অনুঘটক হিসেবে কাজ করেছিল। করবিনের বিপক্ষে দলীয় নেতৃত্বের চ্যালেঞ্জে নামেন ঈগল এবং ওয়েন স্মিথ। পরে অবশ্য ৪৬ বছর বয়সী স্মিথকে সমর্থন জানিয়ে ঈগল এ লড়াই থেকে সরে দাঁড়ান। করবিন আর স্মিথের মধ্যেই এখন নেতৃত্বের লড়াই হবে।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে বলা হয়, এরইমধ্যে ৬ লাখ ৪০ হাজার সমর্থকের কাছে ইমেইলের মাধ্যমে ব্যালট পেপার পাঠানো হয়েছে। এক মাস সময়ের মধ্যে দলীয় নেতৃত্বের প্রশ্নে তারা ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন।
কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়, দলের ৮০ শতাংশ এমপি করবিনের নেতৃত্বের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রকাশ করলেও তার পক্ষে এখনও অনেক লেবার সদস্যের সমর্থন রয়েছে। তাছাড়া বেশিরভাগ ট্রেড ইউনিয়ন করবিনকেই সমর্থন করে। তাছাড়া করবিনের নেতৃত্বাকালীন লেবার পার্টির সদস্য সংখ্যাও বেড়েছে। ২০১৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে লেবার পার্টির সদস্য সংখ্যা দুই লাখ থাকলেও তা বেড়ে এখন পাঁচ লাখ ৪০ হাজার হয়েছে। আর নতুন সদসরা করবিনকেই সমর্থন দেবেন বলে মনে করা হচ্ছে।
এদিকে একেবারে ইউটার্ন নিয়েছেন লেবার পার্টির সদস্য ও লন্ডনের মেয়র সাদিক খান। গত জুনে তিনি করবিনকে বলেছিলেন সবচেয়ে যোগ্য ব্যক্তি। যুক্তরাজ্যের সাধারণ নির্বাচন নিয়ে লেবারদের চিন্তা করতে বলার নামে পরোক্ষে তিনি করবিনের নেতৃত্ব চ্যালেঞ্জ না করতে প্ররোচিত করেছিলেন। তবে এবার তিনি দলীয় নেতৃত্বের চ্যালেঞ্জে ব্রিটিশ লেবার পার্টির বর্তমান নেতা জেরেমি করবিনকে হারিয়ে দিয়ে ওয়েন স্মিথকে জয়ী করার জন্য ভোটারদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য অবজারভারে লেখা এক নিবন্ধে এ আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। লেবার পার্টির এ সদস্যের দাবি, ব্রেক্সিটের বিপক্ষে প্রচারণায় যুক্তরাজ্যের জনগণের সমর্থন পেতে করবিন যেভাবে ব্যর্থ হয়েছেন, সেই ধারবাহিকতায় সাধারণ নির্বাচনেও ব্যর্থ হতে পারেন।
গত জুন মাসে পরোক্ষভাবে করবিনের পক্ষে থাকারই ইঙ্গিত দিয়েছিলেন তিনি। সেসময়, প্রত্যক্ষভাবে জেরেমি করবিনের পক্ষে কোনও অবস্থান না নিলেও সাদিক খান দলীয় প্রধানের নেতৃত্ব চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ায় শঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন।
দ্য অবজার্ভার পত্রিকায় সাদিক খান লিখেছেন, ‘এরই মধ্যে জেরেমি প্রমাণ করে দিয়েছেন যে, তিনি একটি কার্যকর দল সংগঠনের সক্ষমতা রাখেন না। তিনি ব্রিটিশদের আস্থা ও শ্রদ্ধা অর্জনে ব্যর্থ হয়েছেন। জেরেমির ব্যক্তিগত রেটিং এখন যেকোনও বিরোধী দলীয় নেতার মধ্যে সবচেয়ে নিচে। সে কারণে লেবার পার্টিকে খুব বাজেভাবে ভুগতে হচ্ছে। তিনি পার্লামেন্টে লেবার দলের শতকরা ৮০ ভাগেরও বেশি এমপির আস্থা হারিয়েছেন। আমি এ নিয়ে উদ্বিগ্ন। এ অবস্থা আমরা চলতে দিতে পারি না’।
স্মিথের প্রতি নিজের সমর্থন ব্যক্ত করতে গিয়ে সাদিক খান বলেন, ‘ইরাক যুদ্ধে বিরোধিতা করাসহ বড় বড় ইস্যুগুলোর ক্ষেত্রে আমি আর স্মিথ একই পক্ষে অবস্থান নিয়েছিলাম’। সাদিকের সমর্থন পেয়ে ওয়েন স্মিথ বলেছেন, ‘আমি তার সমর্থনে ভীষণ সম্মানিত বোধ করছি’।
গত জুন মাসে ব্রেক্সিট প্রশ্নে গণভোটের পর সাদিক খান বলেছিলেন, গণভোটে লেবারদের প্রচারণা সন্তুষ্ট করতে পারেনি তাকে। তিনি বলেছেন, ‘আমার নিজস্ব অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি, গণভোটের ক্যাম্পেইনের ক্ষেত্রে ম্যানচেস্টার কিংবা লিডস অথবা ওল্ডহাম, কিংবা ব্রাডফোর্ডের ভোটাররা লেবারদের অবস্থান সম্পর্কে সচেতন ছিল না।’ নির্বাচন জয়ের কৌশল প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘একটি বড় নির্বাচন জিততে, তা লন্ডনের মেয়র নির্বাচনের ক্ষেত্রেই হোক আর সরকার প্রতিষ্ঠায় হোক শুধুমাত্র গত নির্বাচনের লেবার সমর্থকদের বিবেচনায় নিলেই চলবে না। আপনাকে রক্ষণশীল সমর্থক, উদার গণতন্ত্রের সমর্থক, গ্রীন মুভমেন্টের সমর্থকসহ সবার কাছেই ভোটের আহ্বান নিয়ে যেতে হবে।’
সে সময় করবিনের নেতৃত্ব নিয়ে সাদিক খান কোনও সংশয় প্রকাশ করেননি। বরং বলেছিলেন, ‘আমি মনে করি, সবথেকে যোগ্য ব্যক্তিকেই আমি সমর্থন দিয়েছিলাম।’