ঐক্যের প্রতিশ্রুতি দিয়ে নতুন যাত্রা ইউরোপীয় ইউনিয়নের
ব্রেক্সিট-পরবর্তী অনেক চ্যালেঞ্জ যখন ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) সামনে, তখন ইতালির প্রধানমন্ত্রী মাত্তিও রেনজির আমন্ত্রণে ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রভাবশালী তিন নেতা গত সোমবার বৈঠক করেছেন ইতালির নেপলসে। বৈঠকে জার্মান চ্যান্সেলর অ্যাঙ্গেলা মার্কেল, ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ফ্রাঁসোয়া ওলাঁদ এবং ইতালির প্রধানমন্ত্রী মাত্তিও রেনজি ইউরোপীয় ইউনিয়নের ঐক্যের ব্যাপারে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। একই সঙ্গে তারা অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি সমুন্নত রাখারও ঘোষণা দিয়েছেন। তারা বলেছেন, যুব সমাজের জন্য কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা হবে। ব্রিটেন ব্রেক্সিট নামক গণভোটের পর ইউরোপের সামনে এখন অনেক চ্যালেঞ্জ। এর মধ্যে রয়েছে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি শ্লথ হয়ে যাওয়া থেকে শুরু করে জঙ্গি হামলা।
সংবাদমাধ্যমগুলো বলছে, বৈঠকে এই তিন নেতা যৌথভাবে ইউরোপীয় ইউনিয়নের নিরাপত্তা বৃদ্ধির ওপর জোর দিয়েছেন। এর পাশাপাশি তারা বলেছেন, ইউরোপকে ব্রেক্সিটের পর অবশ্যই সামনে এগিয়ে যেতে হবে।
উল্লেখ্য, আগামী মাসে সস্নোভাকিয়ায় হওয়ার কথা রয়েছে ইইউর সম্মেলন। তার আগে এই বৈঠককে ‘ওয়ার্মআপ’ বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে। এর মধ্য দিয়ে ব্রিটেন ইউরোপীয় ইউনিয়ন ছাড়ার সিদ্ধান্ত নেয়ার পর নতুনভাবে যাত্রা শুরু করল ইইউ। ব্রেক্সিট গণভোটের পর অনেকে বলেছিলেন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন শেষ হয়ে গেছে। কিন্তু সেই আশঙ্কা উড়িয়ে দিয়েছেন এই তিন নেতা।
ইতালির প্রধানমন্ত্রী মাত্তিও রেনজির আমন্ত্রণে গত সোমবার ইতালির নেপলসে বৈঠকে যোগ দেন জার্মান চ্যান্সেলর অ্যাঙ্গেলা মার্কেল এবং ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ফ্রাঁসোয়া ওলাঁদ। তিন নেতা বৈঠক করেন ইতালির যুদ্ধবিমান বহনকারী একটি জাহাজের ওপর। এ সময় তারা অভ্যন্তরীণ এবং বহির্নিরাপত্তা উন্নত করার পক্ষে সমর্থন ব্যক্ত করেন। গোয়েন্দা তথ্য আদান-প্রদান এবং সীমান্ত নিরাপত্তা বৃদ্ধির প্রত্যয়ও ঘোষণা করা হয়। ফ্রান্সে একের পর এক জঙ্গি হামলার পর ইউরোপে নিরাপত্তা বৃদ্ধির বিষয়টিও উঠে আসে বৈঠকে। বৈঠকের আগে তিন নেতা প্রখর সূর্যালোকের মধ্যেই ছুটে যান ভেনটোনেনি দ্বীপে। সেখানে তারা ইউরোপকে একই সূত্রে গাঁথার অন্যতম জনক আলতিয়েরো স্পাইনেলির প্রতি শ্রদ্ধা জানান। এরপর তারা কাছেই নোঙর করে রাখা বিমানবাহী জাহাজ ‘গারিবালদি’র ডেকে এক ঘণ্টার মতো বৈঠক করেন।
বৈঠকে ইতালির প্রধানমন্ত্রী রেনজি দৃঢ়তার সঙ্গে বলেন, ব্রেক্সিটের পর অনেকেই ধরে নিয়েছিলেন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন শেষ হয়ে গেছে। কিন্তু আসলে তা হয়নি। সমুদ্রের ওপর ভাসমান ওই জাহাজের ডেকে দাঁড়িয়ে তিনি জোর গলায় বলেন, ‘ব্রিটিশরা যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তার প্রতি আমাদের শ্রদ্ধা রয়েছে। কিন্তু ভবিষ্যতের জন্য আমরা নতুন একটি অধ্যায় রচনা করতে চাই।’
ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ওলাঁদ বলেন, ‘ইউরোপীয় ইউনিয়নকে সামনে এগিয়ে নিতে নিরাপত্তাব্যবস্থা আরো জোরদার করা হবে। ইউরোপের একটি নিরাপত্তা বিষয়ক ফ্রেমওয়ার্ক থাকতে হবে। নিরাপত্তার জন্য আমাদের সীমান্তগুলোর নিরাপত্তা জোরদার করতে হবে। সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে আমাদের মধ্যে আরো বেশি সমন্বয় প্রয়োজন।’
অবশ্য জার্মান চ্যান্সেলর অ্যাঙ্গেলা মার্কেল স্বীকার করেছেন, ‘ইউরোপীয় ইউনিয়ন বর্তমানে বিপুল চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করছে। আমাদের সবাইকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। বিশেষ করে দেশের ভেতরে এবং বাইরে নিরাপত্তা ইস্যুতে আরো বেশি কাজ করতে হবে। আমরা জঙ্গিবাদ, সিরিয়ায় গৃহযুদ্ধ দেখছি। এসব কারণে আমাদের অভ্যন্তরীণ এবং বহির্নিরাপত্তা বৃদ্ধি করতে আরো বেশি কাজ করতে হবে।’