রক্ষণশীলদের সমালোচনার মুখোমুখি ট্রাম্প
যুক্তরাষ্ট্রের রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প নির্বাচিত হলে কিভাবে অবৈধ অভিবাসীদের মোকাবিলা করবেন সে সম্পর্কে বিস্তারিত জানিয়েছেন। গত শনিবার আইওয়া রাজ্যে নির্বাচনি প্রচারণার ভাষণে তিনি বলেন, যারা ভিসার মেয়াদ পার করেও যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করছেন, তাদের শনাক্ত করা হবে। তার এই মন্তব্য রক্ষণশীলদের পক্ষ থেকে যথেষ্ট সমালোচনার মুখোমুখি হয়।
ভাষণে ট্রাম্প বলেন, অবৈধ অভিবাসী শনাক্ত করতে একটি ট্র্যাকিং সিস্টেম চালু করতে চান তিনি। এ জন্যে তিনি একটি ই-ভেরিফাই সিস্টেমেরও সুপারিশ করেন। এতে করে অবৈধ অভিবাসীদের রাষ্ট্রীয় সুবিধাদি বন্ধ করে দেয়া যাবে।
তিনি বলেন, ‘আমরা যদি ভিসার মেয়াদ নজরদারি না করি, তাহলে তো বলা যায় আমাদের সীমান্ত উন্মুক্ত।’ ট্রাম্প মনে করেন অবৈধ অভিবাসীদের শনাক্ত করতে পারলে মার্কিনদের জন্য চাকরি পেতে সুবিধা হবে। ট্রাম্প বলেন, ‘যখনই একজন আফ্রিকান-আমেরিকান নাগরিক, বা যে কোন নাগরিক একজন অবৈধ অভিবাসীর জন্য চাকরি হারান, তখনই যুক্তরাষ্ট্রের একজন নাগরিকের অধিকার লঙ্ঘিত হয়।’
ট্রাম্প আরও বলেন, নির্বাচিত হলে তিনি সর্বাগ্রে যে কাজটি করবেন তা হচ্ছে অবৈধ অভিবাসীদের দেশছাড়া করা। তিনি মনে করেন অবৈধ অভিবাসীরাই যুক্তরাষ্ট্রে অপরাধমূলক কর্মকা- বৃদ্ধি করছে। আইওয়া রাজ্যে রোস্ট অ্যান্ড রাইড প্রচারণা করে ট্রাম্পের তহবিল সংগ্রহের কাজ চলছে। এতে ৪০০ বাইকার ৪২ কিলোমিটার দীর্ঘ এক যাত্রায় অংশ নেয়। বারবিকিউ ও বাইক রাইড চলছে বলে ওই প্রচারণার নাম দেয়া হয়েছে রোস্ট অ্যান্ড রাইড।
এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন থেকে ডোনাল্ড ট্রাম্পকে সরাতে তাঁর রিপাবলিকান পার্টিরই একটি অংশ প্রচারে নেমেছে। ‘ট্রাম্প, আপনি নিজের প্রতিশ্রুতি রক্ষা করুন, নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ান’ এমন প্রচার চালিয়ে টিভিতে বিজ্ঞাপন দেয়ার উদ্যোগ নিয়েছে তারা।
যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক খবরাখবরের প্রভাবশালী মিডিয়া পলিটিকো ডটকম জানিয়েছে, রিপাবলিকান দলের ‘ফ্রি দ্য ডেলিকেট’ আন্দোলনকারীরা নতুন প্রচার নিয়ে মাঠে নামছে। এর অংশ হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ রাজ্যগুলোতে এমন টিভি বিজ্ঞাপন দেয়া হবে। রিপাবলিকান পার্টির জাতীয় সম্মেলনে ‘ফ্রি দ্য ডেলিকেট’ ব্যানারে ওই পার্টিরই একটি অংশ ট্রাম্পবিরোধী অবস্থান নিয়েছিল। জাতীয় সম্মেলনে ট্রাম্পকে ঠেকানোর চেষ্টা ব্যর্থ হলেও তাদের প্রয়াস থামেনি। রিপাবলিকান পার্টির নেত্রী রেজিনা থমসন জানান, তাঁরা আশা করছেন, টিভিতে ট্রাম্পবিরোধী প্রচারণা চালানোর জন্য পর্যাপ্ত অর্থ সংগ্রহ করতে পারবেন।
নির্বাচনী প্রচারের শুরুতে ট্রাম্প বলেছিলেন, ডেমোক্রেটিক প্রার্থী হিলারি ক্লিনটনের চেয়ে জনমত জরিপে পিছিয়ে থাকলে সরে দাঁড়াবেন। জাতীয় জনমত জরিপে ট্রাম্প এখনো পিছিয়ে। ক্ষুব্ধ রিপাবলিকান প্রচারণায় বলা হচ্ছে, ‘ট্রাম্প, আপনি সরে দাঁড়ালে দল আপনার বিকল্প প্রার্থী পাবে। এর ফলে হিলারিকে নির্বাচনে হারানো যাবে।’
এমন প্রতিকূল পরিস্থিতিতে ট্রাম্প নানা পক্ষকে সামাল দেয়ার ব্যর্থ চেষ্টা করছেন। অভিবাসী হিস্পানিকদের নিয়ে আগের উসকানিমূলক কথা থেকে কিছুটা সরে আসতে চেষ্টা করছেন। ডেমোক্র্যাটদের ভোট ব্যাংক বলে পরিচিত কৃষ্ণাঙ্গদের নিজের পক্ষে আনার ব্যর্থ চেষ্টাও করছেন।
গত শনিবার আইওয়া অঙ্গরাজ্যে দেয়া বক্তব্যে ডোনাল্ড ট্রাম্প আবারও কৃষ্ণাঙ্গদের সমর্থন দিতে আহ্বান জানান।
একই সভায় তিনি অভিবাসীদের নিয়ে তাঁর বক্তব্যের ভুল ব্যাখ্যা দেয়া হচ্ছে বলে সংবাদমাধ্যমের সমালোচনা করেন।
নির্বাচনী প্রচারণার শুরুতে ট্রাম্প বলেছিলেন, প্রায় দেড় কোটি অবৈধ অভিবাসীকে তিনি যুক্তরাষ্ট্র থেকে অবিলম্বে বহিষ্কার করবেন। এখন বলছেন প্রেসিডেন্ট হিসেবে ক্ষমতার প্রথম মেয়াদে শুধু অপরাধী অবৈধ অভিবাসীদের বহিষ্কার করা হবে।
রক্ষণশীলদের রাজ্য হিসেবে পরিচিত আইওয়াতে ডোনাল্ড ট্রাম্প এখনো ভোটারদের সুনজরে রয়েছেন। সাম্প্রতিক জরিপে দেখা গেছে, এই রাজ্যে হিলারি ক্লিনটনের চেয়ে মাত্র ৩ শতাংশ পিছিয়ে আছেন ট্রাম্প। আইওয়া রাজ্যের রিপাবলিকানদের ধারণা, শেষ পর্যন্ত তাঁদের রাজ্যে ডোনাল্ড ট্রাম্পকে জয়ী দেখানো সম্ভব হবে।