ইসলামী শিক্ষা কোর্স চালু করছে যুক্তরাষ্ট্রের একটি গির্জা
ইসলাম ধর্মের প্রকৃত চিত্র তুলে ধরার লক্ষ্যে ইসলাম ও খ্রীষ্টান ধর্মবিশ্বাসকে পাশাপাশি এনে ইসলাম ধর্মের ওপর শিক্ষামূলক ক্লাস নেয়ার পরিকল্পনা করছে যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণাঞ্চলীয় রাষ্ট্র নিউ মেক্সিকোর ফার্মিংটন প্রেসবাইটারিয়ান গির্জা।
ফার্মিংটনের প্রথম প্রেসবাইটারিয়ান গির্জার রেভারেন্ড গ্লেন পেরিকা ফার্মিংটনের দি ডেইলি টাইমসকে বলেন, ৯/১১ পর থেকে আমরা যারা মুসলিম বিশ্বাস সম্পর্কে খুব বেশি ধারণা রাখতাম না, এখন তাদের কাছে বিষয়টি নিশ্চিতভাবে প্রকাশিত হচ্ছে।
ফার্মিংটনের অধিবাসীদের কাছে ইসলামকে পরিচিত করতে ১০ সপ্তাহব্যাপী আয়োজিত এই কোর্সের নাম দেয়া হয়েছে ” ক্রিশ্চিয়ানিটি এন্ড ইসলাম: সো মাচ্ ইন কমন, সো ফার এপার্ট “।
এই দুই ধর্ম বিশ্বাসের মধ্যে পার্থক্যের তুলনায় মিল বেশি থাকায় খ্রীষ্টান ও মুসলমানদের মধ্যে দূরত্ব কমিয়ে সেতু বন্ধনের প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে আগামী ৪ সেপ্টেম্বর থেকে ফার্মিংটনের প্রথম প্রেসবাইটারিয়ান গির্জায় কোর্সটি শুরু হবে।
পেরিকা বলেন, যারা এই কোর্সটিতে অংশ নিচ্ছে তারা এটা জেনে হয়তো আশ্চার্যান্বিত হবেন যে, মুসলিমরা আব্রাহামকে (ইব্রাহিম আ:) তাদের ধর্মের কুলপতি হিসেবে বিশ্বাস করে যেমনটি করেন খ্রীষ্টান ও ইহুদীরা।
তিনি আরো বলেন, এছাড়াও ইসলাম যিশুকে (ইসা আ 🙂 নবী হিসেবে বিশ্বাস করে এবং তাকে সম্মান করে।
পেরিকা বলেন, দুই ধর্ম বিশ্বাসীরাই শান্তি কামনা করেন। তিনি আশা করেন ইসলাম সম্পর্কে শিক্ষা গ্রহণ মুসলিম ও খ্রীষ্টান ধর্মাবলম্বীদের শান্তির পথে নিয়ে আসতে সহায়তা করবে।
এবিকিউ ভিত্তিক ইসলামি শিক্ষা কেন্দ্র “দার আল ইসলামের” ওয়ালটার ডেকলার্ক এই অভিপ্রায়কে স্বাগত জানিয়ে বলেন, বিশ্বের সমস্ত খাঁটি ধর্ম একই বার্তা প্রচার করে।
ডেকলার্ক বলেন, এখানে সৃষ্টিকর্তা একজন এবং একই ঐশ্বরিক বাস্তবতা।
মুসলিমরা যিশুকে (ঈসা আ:) আল্লাহর নবী হিসেবে ও মা ম্যারীর গর্ভজাত সন্তান হিসেবে (মরিয়ম আ:) বিশ্বাস করে। কিন্তু আল্লাহর পুত্র হিসেবে বিশ্বাস করে না। তিনি আল্লাহর ইচ্ছায় অলৌকিকভাবে জন্মগ্রহণ করেন।
পবিত্র কুরআনে যিশুকে ঈসা নামে অভিহিত করা হয়েছে। এছাড়াও তিনি আল মসিহ ও ইবনে মারইয়াম নামেও পরিচিত।
ক্রুশবিদ্ধ করার বিষয়ে মুসলিমদের বিশ্বাস হল, যিশুকে ক্রুশবিদ্ধ করে হত্যা করা হয়নি বরং মহান আল্লাহ তাকে আসমানে উঠিয়ে নিয়ে গেছেন এবং তিনি পুনরায় পৃথিবীতে প্রত্যাবর্তন করবেন।
খ্রীষ্টানরা বিশ্বাস করে যে, যিশুকে অস্বীকারকারী, মিথ্যা বর্ণনাকারী ও প্রত্যাখ্যানকারীদের ওপর তার সত্যিকারের অনুসারীরা জয়ী হবেন।
অধিকাংশ বিষয়ে মিল থাকলেও এই দুই ধর্মের মধ্যে বেশ কিছু পার্থক্য রয়েছে। এসবের অধিকাংশই ইসলামের ভুল ব্যাখ্যার ওপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে। যেমন নারীর ভূমিকা।
ডেকলার্ক বলেন, নারী অধিকার প্রদানে মহানবী ছিলেন শ্রেষ্ঠ।
ইসলামের তুলনায় খ্রীষ্টান ধর্মে বিশ্বাসী নারীরা সমাজে বেশী ভূমিকা পালন করছে, পেরিকার এই দাবির সাথে ভিন্নমত পোষণ করেন ডেকলার্ক।
ডেকলার্ক বলেন, ৬০০ খ্রীষ্টাব্দে যখন ইউরোপে নারীদের কোন সম্পত্তি পাওয়ার অধিকার ছিল না তখন মোহাম্মদ সা: নারীদের সম্পত্তির অধিকার নিশ্চিত করেন এবং ঘোষণা দেন যে বিয়ের ক্ষেত্রে তাদেরকে বাধ্য করা যাবে না।
ডেকলার্ক বলেন, ইসলাম ও খ্রীষ্টান ধর্মের মধ্যে মূল পার্থক্য হল, খ্রীষ্টানরা ত্রিতত্বে বিশ্বাস করে এবং জিশুকে ইশ্বরের পুত্র হিসেবে সম্বোধন করে থাকে।
তিনি আরো বলেন, এছাড়াও খ্রীষ্টানরা বিশ্বাস করে যে, আদম ও ইভের ঈশ্বরবাক্য লঙ্ঘনের আদি পাপ থেকেই মানুষের জন্ম। কিন্তু ইসলাম বলে মানুষ নিষ্পাপ হয়েই জন্ম নেয়।
যাইহোক, উভয় নেতাই বিশ্বাস করেন যে, এই কোর্সটি মুসলিমদের সাথে খ্রীষ্টানদের সম্পর্ক উন্নয়নে সহায়তা করবে।
পেরিকা বলেন, শান্তির জন্যই আমাদের প্রার্থনা যা ইশ্বর গণ্য করবেন। ডেকলার্ক একমত পোষণ করে উভয় ধর্ম বিশ্বাসীদের পরস্পরের প্রতি সম্মান, উপলব্ধি ও সহযোগিতার শিক্ষা গ্রহণের আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, প্রচলিত খ্রীষ্টান ধর্ম ও খাঁটি খ্রীষ্টান ধর্ম সম্পর্কে মুসলিমদের শিক্ষা গ্রহণ করা জরুরি। ঠিক একইভাবে খ্রীষ্টানদের সত্যিকার ইসলাম সম্পর্কে জানা জরুরি।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় ৬০ থেকে ৭০ লাখ মুসলিমের বসবাস। এক জরিপে দেখা গেছে, অধিকাংশ আমেরিকানরাই মুসলিম ও তাদের ধর্ম বিশ্বাস সম্পর্কে খুব কমই জানেন। অপর এক জরিপে দেখা গেছে ৪৩ শতাংশ আমেরিকানদের মধ্যে মুসলিমদের সম্পর্কে সামান্য কিছু হলেও কুসংস্কারমূলক ধারণা আছে।