যুদ্ধ-সংঘাতে ঘর হারিয়েছে তিন কোটি শিশু

Syriaযুদ্ধ-সংঘাতের কারণে ঘরহারা শিশুর সংখ্যা বেড়ে প্রায় তিন কোটিতে পৌঁছেছে। জাতিসংঘের শিশু বিষয়ক সংস্থা ইউনিসেফের পরিসংখ্যানভিত্তিক এক প্রতিবেদনে এই তথ্য উঠে এসেছে। প্রতিবেদনের সুপারিশে ইউনিসেফ সতর্ক করেছে, ঘরহারা ওই শিশুরা মানব পাচারসহ বিভিন্ন নির্যাতনের ঝুঁকিতে রয়েছে। সে কারণে শিশু শরণার্থীদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে শিশু-শরণার্থীদের আটক না করার আহ্বান জানিয়েছে ইউনিসেফ।
ইউনিসেফের ওই প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে জাতিসংঘেরই আরেক সংস্থা ইউএনএইচসিআর (শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা)-এর ২০১৫ সালের এক পরিসংখ্যানকে উপজীব্য করে। তারা জানিয়েছে, বিশ্বজুড়ে পাঁচ কোটি শিশু হয় অন্য দেশে পাড়ি জমিয়েছে কিংবা অভ্যন্তরীণভাবে বাস্তুচ্যুত হতে বাধ্য হয়েছে। এর মধ্যে ২ কোটি ৮০ লাখ শিশু সংঘাতের কারণে ঘর ছাড়তে বাধ্য হয়েছে। যুদ্ধ-সংঘাতে ঘরহারা ওইসব শিশুর মধ্যে ১ কোটি ৭০ লাখ শিশু অভ্যন্তরীণভাবে বাস্তুচ্যুত হতে বাধ্য হয়েছে। শরণার্থী-স্বীকৃতি পেয়েছে ১ কোটি শিশু। আর বাকীদের মধ্যে ১০ লাখ শিশু রয়েছেন আশ্রয়প্রার্থী হিসেবে।
প্রতিবেদনে দেখা গেছে, বিশ্বে শিশুদের সংখ্যা মোট জনসংখ্যার এক তৃতীয়াংশ হলেও মোট শরণার্থীর বিবেচনায় শিশুদের সংখ্যা প্রায় অর্ধেক। জাতিসংঘের হিসেবে বিশ্বে স্বীকৃত শরণার্থীর সংখ্যা ২ কোটি ১০ লাখ। এই মোট শরণার্থী সংখ্যার সাপেক্ষে স্বীকৃত শরণার্থী শিশুর সংখ্যা (১ কোটি) বিবেচনায় নিয়ে এই পরিসংখ্যান দেওয়া হয়।।
ইউনিসেফ বলছে, ‘যে কারণেই তাদের ঘর ছাড়তে হোক না কেন, আমাদের বিবেচনায় নিতে হবে যে তারা শিশু।’
প্রতিবেদনে বলা হয়, শিশু শরণার্থীদের অর্ধেকই সিরিয়া ও আফগানিস্তানের। এ দুটি দেশের শরণার্থী শিশুরাই কেবল জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা ইউএনএইচআর-এর সুরক্ষার আওতায় রয়েছে। অথচ বিশ্বের শিশু শরণার্থীদের তিন চতুর্থাংশই ১০টি দেশ থেকে আসা।
ইউনিসেফের প্রতিবেদনে বলা হয়, বিশ্বের শিশু শরণার্থীদের একটা বিশাল অংশ এশিয়া ও আফ্রিকায় থাকে। বিশ্বের মোট শরণার্থীর প্রায় অর্ধেক অর্থাৎ ৪৩ শতাংশ শরণার্থীর জন্মস্থান এশিয়ায়। এখানকার অভিবাসীদের ৬০ শতাংশই অঞ্চলটির ভেতরেই স্থান বদল করে থাকে। এশিয়ার শিশু শরণার্থীদের বেশিরভাগেরই আশ্রয়স্থল সৌদি আরব। সেখানে বিদেশি শ্রমিকের সংখ্যাও সর্বোচ্চ। ইউনিসেফের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শরণার্থী বাস্তবতা আর কর্মসংস্থানের মধ্যে কোনও সংযোগ রয়েছে কিনা তা বের করতে আরও গবেষণা হওয়া প্রয়োজন।
প্রতিবেদন অনুযায়ী বৈশ্বিকভাবে তুরস্ক সবচেয়ে বেশি শরণার্থী গ্রহণ করেছে। দেশটিতে থাকা শিশু শরণার্থীর সংখ্যাও সবচেয়ে বেশি বলেই ধারণা করা হয়। প্রতিবেদনে ঘরহারা ওইসব শিশুর ওপর বিভিন্ন ধরনের নির্যাতনের আশঙ্কা উঠে এসেছে। সে কারণে ওই শিশুদের আটক না করে তাদের সুরক্ষা নিশ্চিতের পক্ষেই ইউনিসেফের অবস্থান। সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক অ্যান্থনি লেক বলেন, ‘যদিও বিশ্বের অনেক কমিউনিটি ও জনগণ শরণার্থী ও অভিবাসন প্রত্যাশীদের স্বাগত জানিয়েছে, তারপরও অনেক জায়গায় বিদ্বেষ, বৈষম্য ও বর্জনের ঘটনা এসব শিশুদের জীবন ও ভবিষ্যতকে হুমকিতে ফেলেছে। যদি শিশু শরণার্থীদেরকে গ্রহণ করা হতো এবং সুরক্ষা দেওয়া হতো তবে তারা শেখার ও বেড়ে ওঠার সুযোগ পেতো। তারা তাদের মধ্যে থাকা সম্ভাবনার বিকাশ ঘটাতে পারতো এবং স্থিতিশীলতা ও অর্থনৈতিক উন্নতির ক্ষেত্রে তারা উৎস হতে পারতো।’
২০১৫ সালের পরিসংখ্যানকে উপজীব্য করে ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিশ্বে অভিবাসী শিশুদের একটা বড় অংশের আশ্রয়স্থল যুক্তরাষ্ট্র। দেশটিতে ৩৭ লাখ শিশু অভিবাসী রয়েছে। এরপরেই সৌদি আরব ও জর্ডানে অভিবাসী শিশুর সংখ্যা বেশি। ইউরোপের দেশগুলোর মধ্যে যুক্তরাজ্যে সবচেয়ে বেশিসংখ্যক শিশু অভিবাসীর বসবাস। দেশটিতে ১৮ বছরের কম বয়সী অভিবাসীর সংখ্যা ৭ লাখ ৫০ হাজার।
ইউনিসেফ ইউকে’র উপ-নির্বাহী পরিচালক লিলি কাপরানি বলেন, ‘আজকের বিশ্বে প্রতি ২০০ শিশুর মধ্যে একজন শরণার্থী। গত কয়েক বছরে বিপুল সংখ্যক শিশু ঘর ছাড়তে বাধ্য হয়েছে। তাদেরকে বিপজ্জনক পথ পাড়ি দিতে হয়েছে। ভাসমান শিশুদের নির্যাতন, হয়রানি ও মানব পাচারের শিকার হওয়ার ঝুঁকি থাকে।’

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button