বন্ধ হয়ে যাচ্ছে বৃটিশ হাই কমিশনের সিলেট অফিস
দীর্ঘ প্রায় দেড় দশক চালু থাকার পর সিলেটে বৃটিশ হাই কমিশনের কনস্যুলেট অফিসটি বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। তবে, বৃটিশ হাই কমিশনের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বৃটিশ নাগরিকদের জন্য সিলেটে তাদের কনস্যুলেট সহায়তা অব্যাহত থাকবে।
ইতোমধ্যে বৃটিশ হাই কমিশনের ওয়েব সাইটে তাদের সিলেট কনস্যুলেট সেবা সংক্রান্ত যোগাযোগের ঠিকানা কুমারপাড়ার পরিবর্তে মীর্জাজাঙ্গাল রামের দিঘীর পার হিসেবে সংশোধন করে নেয়া হয়েছে।
২০০১ সাল থেকে সিলেট নগরীর কুমারপাড়ায় চালু হয় বৃটিশ হাই কমিশনের কনস্যুলেট অফিস। এ অফিস থেকে বৃটিশ নাগরিকরা নতুন পাসপোর্ট গ্রহণ বা পাসপোর্ট নবায়নের সেবা, পাসপোর্ট হারানো গেলে জরুরী ভ্রমণ সংক্রান্ত কাগজপত্র সরবরাহ, জোরপূর্বক বিয়ে প্রতিরোধ ও বাংলাদেশে এসে হয়রানির শিকার লোকজনকে তাৎক্ষণিক আইনী সহায়তা প্রদান করে আসছিল সিলেটস্থ বৃটিশ হাই কমিশনের কনস্যুলেট অফিস। অতীতে এ অফিসে বৃটিশ ভিসা আবেদন জমা নেয়া হলেও পরবর্তীতে তা বেসরকারী সংস্থার মাধ্যমে জমা নেয়া শুরু হলে এ সংক্রান্ত সেবাদান বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু এরপরও সিলেটে বৃটিশ হাই কমিশনের কনস্যুলেট অফিসটি সিলেটবাসীর কাছে মর্যাদার প্রতীক ও সিলেটে আসা বৃটিশ বাংলাদেশীদের অনেকটা ভরসার স্থল।
কিন্তু হঠাৎ করেই বৃটিশ হাই কমিশনের সিলেট কনস্যুলেট অফিসটি বন্ধ করে দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সে দেশের পররাষ্ট্র দফতর। এ বিষয়ে ঢাকাস্থ বৃটিশ হাই কমিশনের পক্ষ থেকে দাপ্তরিকভাবে কোন প্রেস বিজ্ঞপ্তি বা বক্তব্য না পাওয়া গেলেও সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলোর সাথে কথা বলে জানা গেছে, আজকালের মধ্যেই কুমারপাড়াস্থ বৃটিশ হাই কমিশনের কনস্যুলেট অফিসটি বন্ধ করে দেয়া হবে। ইতোমধ্যে অফিসটি অনানুষ্ঠানিকভাবে গুটিয়ে নেয়া হয়েছে।
বৃটিশ হাই কমিশনের কনস্যুলেট ও প্রেস শাখার কর্মকর্তাদের সাথে এ বিষয়ে কথা বললে তারা আনুষ্ঠানিকভাবে কোন বক্তব্য দিতে রাজি হননি। তবে, নাম প্রকাশ না করার শর্তে সিলেটে বৃটিশ হাই কমিশনের কনস্যুলেট অফিস বন্ধ করে দেয়া হচ্ছে- এমন খবরের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন তারা।
ঢাকাস্থ বৃটিশ হাই কমিশন সূত্র জানিয়েছে, অফিস গুটিয়ে নিলেও সিলেটে বৃটিশ হাই কমিশনের কনস্যুলেট শাখার কার্যক্রম চালু থাকবে। কনস্যুলার সেকশনের কর্মকর্তাদের আগের মতই পূর্বানুমতির ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় সহায়তার জন্য দেখা করতে পারবেন যে কোন বৃটিশ নাগরিক। কিন্তু এখন থেকে এ ধরনের সাক্ষাৎকার বা কনস্যুলার সার্ভিস দেয়া হবে যেখানে বৃটিশ ভিসা আবেদন জমা নেয়া হয় সেখান থেকে। অর্থাৎ সিলেট নগরীর মীর্জাজাঙ্গালস্থ নির্ভানা ইন-এর ভিএফএস কার্যালয়ে বৃটিশ ভিসা আবেদন কেন্দ্রে কনস্যুলেট সেবা ও অন্যান্য সহায়তা প্রদান করা হবে। বৃটিশ হাই কমিশনের সিলেট কনস্যুলেট অফিসের কর্মকর্তারাও আগের মতই থাকবেন সহায়তা প্রদানে।
বৃটেনে বসবাসরত বৃটিশ বাংলাদেশের শতকরা নব্বই জনই সিলেটের অধিবাসী। যুক্তরাজ্যে প্রায় ৫ লাখ বাংলাদেশী বংশোদ্ভুত বৃটিশ নাগরিকের বসবাস। এদের মধ্যে শতকরা ৯০ শতাংশ বৃটিশ বাংলাদেশীর আদি নিবাস সিলেটে। বৃটিশ বাংলাদেশীরা যুক্তরাজ্যের মূলধারার রাজনীতি, চাকুরী, শিল্প ও বাণিজ্যে রয়েছেন সুসংহত অবস্থানে। এসব বৃটিশ বাংলাদেশী নাগরিকরা তাদের স্বজনদের সাথে মিলিত হতে বা ব্যক্তিগত প্রয়োজনে নিয়মিত আসেন সিলেটে। এক হিসেবে দেখা গেছে, বছরের যে কোন সময় কমপক্ষে ৮ হাজার বৃটিশ নাগরিক সিলেটে অবস্থান করেন। তাদের যে কোন সহায়তার জন্য তারা ছুটে যেতেন কুমারপাড়াস্থ বৃটিশ হাই কমিশনের কনস্যুলেট অফিসে। সিলেটে কনস্যুলেট অফিস বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বিপাকে পড়তে হবে তাদেরকে।
এর আগে ঢাকাস্থ বৃটিশ হাই কমিশনের ভিসা সংক্রান্ত কার্যক্রম ঢাকা থেকে ভারতের নয়াদিল্লীতে স্থানান্তর করা হয়। এ নিয়েও চরম ক্ষুব্ধ সিলেটের মানুষ। বিভিন্ন সূত্রের দাবী, অতীতে বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে আবেদনকারীদের প্রায় ৬৫ শতাংশ লোককেই ভিসা প্রদান করা হতো। কিন্তু ঢাকা থেকে নয়াদিল্লীতে বৃটিশ ভিসা আবেদন কেন্দ্র স্থানান্তরের পর ভিসা ইস্যুর পরিমাণ ১০ শতাংশেরও নীচে নেমে এসেছে।