সোয়া ২০০ বছর পর স্থানান্তর হচ্ছে সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগার

Sylhetচৌধুরী মুমতাজ আহমদ: ১৭৮৯ সাল। বৃটিশ রাজের প্রতিনিধি হিসেবে জন উইলিস তখন সিলেটের কালেক্টরের দায়িত্বে। এখনকার গোটা সিলেট বিভাগই তখন সিলেট জেলা। আয়তনে বিশাল হলেও মোটামুটি শান্ত জনপদই ছিলো সে সিলেট। তবুও ছোটখাটো অপরাধ আর ছোটখাটো অপরাধীরা মাঝে মধ্যেই অশান্তি ছড়িয়ে দিচ্ছিলো সিলেটে। তখন প্রয়োজন অনুভূত হয় একটি কারাগারের। সে অনুভব থেকেই বর্তমান সিলেট নগরীর ধোপাদীঘির পাড়ে ১ লাখ রুপি ব্যয়ে গড়ে উঠে কারাগার। সোয়া দুই শ’ বছর পর সেই কারাগার সরে যাচ্ছে সিলেট নগর থেকে শহরতলিতে। কিন্তু দূরে সরলেও কারাগারের আয়তন বলতে গেলে একই রকম থেকে গেছে। বন্দিধারণ ক্ষমতা দ্বিগুণও বাড়েনি।
সোয়া দুই শ’ বছরে সিলেটের জনসংখ্যা বেড়েছে ৫০ গুণ। অপরাধের মাত্রাও বেড়েছে হাজার গুণ, ধরনও পাল্টেছে হাজার রকম। কারাগার নির্মাণের বছর ১৭৮৯ সালের আদমশুমারিতেই সিলেটের  জনসংখ্যা ছিলো ৭৫ হাজার ৩৮২ জন। তখন গড়ে ওঠা কারাগারের আয়তনই যেখানে ২৪.৬৭ একর, সোয়া দুই শ’ বছর পর নতুন কারাগারের জন্য জায়গা বেড়েছে সাড়ে ৫ একরেরও কম। আর ১ হাজার ২১০ জন কারাবন্দির স্থলে নতুন কারাগারে জায়গা হবে ২ হাজার জনের। অথচ এ সময়ে সিলেটে লোকসংখ্যা বেড়েছে হু হু করে। ২০১১ সালের আদমশুমারিতে সিলেট জেলার লোকসংখ্যা ছিলো ৩৪ লাখ ৩৪ হাজার ১৮৮ জন। পরের ৫ বছরে এ সংখ্যা আরো অনেক বেড়েছে।
নির্মাণাধীন সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারের প্রকল্পস্থলে সংরক্ষিত মাস্টারপ্ল্যান থেকে জানা গেছে, কারা কম্পাউন্ডজুড়ে ছড়িয়ে থাকবে ৬৪টি ভবন। তবে যাদের জন্য এ বিশাল আয়োজন তাদের ভাগে ভবন পড়েছে মোটে ৭টি। নির্মাণকাজের দায়িত্বে থাকা কুশলী নির্মাতার প্রজেক্ট ইঞ্জিনিয়ার মিজানুর রহমান তথ্য দেন, ৭টি ভবনের মধ্যে পুরুষ বন্দিদের জন্য ৪টি এবং নারী বন্দিদের জন্য রয়েছে ৩টি ভবন। পুরুষ বন্দিদের ৪টি ভবনই ৬ তলাবিশিষ্ট আর নারী বন্দিদের জন্য নির্ধারিত ভবনের মধ্যে একটি ৪ তলা এবং দুটি দ্বিতল ভবন রয়েছে।
বন্দিদের জন্য জায়গার ঘাটতি হলেও সুযোগ-সুবিধার কমতি নেই কারাগারে। হাসপাতালই আছে ৫টি এর মধ্যে ৪টি শুধুমাত্র বন্দিদের জন্য অন্যটি কারাগার সংশ্লিষ্টদের। বন্দিদের জন্য নির্ধারিত হাসপাতালের মধ্যে পুরুষ ও নারীদের জন্য ১টি করে ৫ তলাবিশিষ্ট হাসপাতাল, একটি করে দোতলা যক্ষ্মা ও মানসিক হাসপাতাল। রান্নার কাজের জন্য রয়েছে একতলা ৫টি ভবন। খাবার মজুত রাখার জন্য রয়েছে ১ তলা ৪টি ভবন, দোতলা একটি রেস্ট হাউসও আছে। ৪ তলাবিশিষ্ট একটি ডে কেয়ার সেন্টার রয়েছে, মসজিদ আছে, স্কুল আছে, আছে লাইব্রেরিও।
পুরো কারাগারটি নিচু জায়গায় মাটি ভরাট করে তৈরি করা হয়েছে। মাটি ভরাটের দায়িত্বে থাকা ইউনূস অ্যান্ড ব্রাদার্সের প্রতিনিধি অ্যাডভোকেট নূরে আলম সিরাজী জানান, কেবল মাটি ভরাটেই খরচ হয়েছে ৮ কোটি টাকা।
ধারণক্ষমতা কম হওয়ায় এবং সোয়া দুই শ’ বছরের পথচলায় জরাজীর্ণ হয়ে পড়ায় সিলেট নগরীর ধোপাদীঘিরপার থেকে সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারটি স্থানান্তরের সিদ্ধান্ত হয়। ২০১০ সালে কারাগার স্থানান্তর প্রকল্পটি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটিতে (একনেক) পাস হয়। শুরু হয় কারাগার স্থানান্তর প্রকল্প। ২০১১ সালের ১১ই আগস্ট শহরতলির বাদাঘাটে ৩০ একর ভূমির উপর নতুন কারাগারের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়।
১৯৭ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিতব্য কারাগারটির নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার কথা ছিলো ২০১৫ সালের জুন মাসে। এ সময়ের মধ্যে কাজ শেষ না হওয়ায় লক্ষ্য বেঁধে দেয়া হয় ২০১৬ সালের জুন পর্যন্ত। নির্মাণকাজের মেয়াদ এক বছর বাড়িয়েও এ সময়ের মধ্যে কারাগারের ৭০ ভাগের বেশি কাজ শেষ করা সম্ভব না হওয়ায় তৃতীয় দফায় আরো এক বছর সময় দেয়া হয় কাজ শেষ করার জন্য। ২০১৭ সালের জুনের মধ্যে কাজ শেষ করার কথা। তবে সরজমিন পরিদর্শন শেষে এবং সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলাপে টের পাওয়া গেছে এ সময়ের মধ্যে কাজ শেষ হওয়ার সম্ভাবনা খুব একটা নেই।

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন...
Close
Back to top button