হজের আনুষ্ঠানিকতা শুরু
নজিরবিহীন নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে আজ শুক্রবার সৌদি আরবে শুরু হয়েছে পবিত্র হজের আনুষ্ঠানিকতা। পবিত্র হজের পাঁচদিনের আনুষ্ঠানিকতার প্রথম পর্ব শুরু হবে আজ। জুমার নামাজের পর মক্কা থেকে প্রায় ১০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্বে মিনায় যেয়ে সেখানে সারাদিন ও সারারাত অবস্থানের মধ্য দিয়ে হজ পালন শুরু হবে।
এদিকে হজ উপলক্ষে এবার মক্কা ও মদীনায় নজিরবিহীন নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়েছে। বিশেষ করে মিনায় শয়তানকে পাথর নিক্ষেপের সময় যাতে কোনো দুর্ঘটনা না ঘটে, সে জন্য সৌদি হজ কর্তৃপক্ষ হাজিদের ভাগ ভাগ করে সেখানে পাঠানোর ব্যবস্থা করেছে। গত বছর মিনায় পাথর নিক্ষেপের সময় পদদলিত হয়ে ৭১৭ জন হাজির মৃত্যু হয়। তবে আন্তর্জাতিক বার্তা সংস্থাসহ বেশ কয়েকটি মানবাধিকার সংস্থা দাবি করেছে এ সংখ্যা ২ হাজার ছাঁড়িয়েছিল। এরপরই হজে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদারের উদ্যোগ নেয় সৌদি কর্তৃপক্ষ।
শুক্রবার পবিত্র মসজিদুল হারামে জুমার নামাজ আদায়ের পর পবিত্র হজ পালন করতে মিনায় যাবেন হাজিরা। ৭ থেকে ১২ জিলহজ তারা মিনা, আরাফাহ ও মুজদালিফায় অবস্থান করবেন। ৮ জিলহজ মিনায় সারা দিন অবস্থানের পর ৯ জিলহজ ফজরের নামাজ আদায়ের পর প্রায় ১৪ কিলোমিটার দূরে আরাফাতের ময়দানের উদ্দেশে যাত্রা করবেন তারা। সেখানে সূর্যাস্ত পর্যন্ত অবস্থান করতে হবে। আরাফাহ থেকে প্রায় আট কিলোমিটার দূরে মুজদালিফায় গিয়ে রাতযাপন করতে হবে। এরপর মিনায় জামারতে শয়তানকে মারার জন্য পাথর সংগ্রহ করতে হবে। ১০ জিলহজ ফজরের নামাজ আদায় করে মুজদালিফা থেকে আবার মিনায় ফিরবেন হাজিরা। এখানে বড় শয়তানকে পাথর মেরে, কোরবানি করে ও মাথা মুণ্ডন করতে হবে। পরে কাবা শরিফ তাওয়াফ করবেন তারা। তাওয়াফ ও সাঈ শেষে মিনায় ফিরে ১১ ও ১২ জিলহজ সেখানে অবস্থান করবেন তারা। এখানে প্রতিদিন তিনটি শয়তানকে পাথর নিক্ষেপ করবেন তারা।
এ বছর হাজিদের পরিচয় নিশ্চিতের জন্য ইলেকট্রনিক ব্রেসলেট সরবরাহ করা হয়েছে। প্রতিটি ব্রেসলেটে বারকোড রযেছে এবং এটি অ্যাপসের মাধ্যমে স্মার্টফোনের সঙ্গে সংযুক্ত। এই ব্রেসলেটে হাজিদের ব্যক্তিগত এবং স্বাস্থ্যবিষয়ক তথ্য রয়েছে। এটি তাদের পরিচয় নিশ্চিত করার পাশাপাশি জরুরি সেবা পাওয়ার ক্ষেত্রেও সুবিধা দেবে। সেই সঙ্গে তাদের গতিবিধিও পর্যবেক্ষণ করা হবে এই ব্রেসলেটের মাধ্যমে। মক্কা ও মদীনায় দ্রুত ভীড় অপসারণ ও যে কোনো ধরণের অনাকাঙ্খিত পরিস্থিতি এড়াতে বিপুল সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। মক্কা ও মদীনায় হাজিদের পথ চলা ও দিক নির্দেশনার জন্য সাড়ে চার হাজার স্বেচ্ছাসেবক প্রস্তুত রাখা হয়েছে। হজের অনুমতি নেই এমন কেউ যাতে মক্কায় প্রবেশ করতে না পারে সে জন্য বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
সরকারি বার্তা সংস্থা সৌদি গেজেট জানিয়েছে, অবৈধ হজযাত্রীদের আটকে বাহিতা ও হাদা এলাকায় ১ হাজার ২০০ পুলিশ সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। এছাড়া কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে যাতে হাজিদের নিরাপত্তায় দ্রুত তিন হাজার উদ্ধার ও অগ্নিনির্বাপন যন্ত্র স্থানান্তরে ১৭ হাজার কর্মী মোতায়েন করেছে বেসামরিক প্রতিরক্ষা বিভাগ। হজের পাঁচদিন মক্কা ও পবিত্র স্থানগুলো পরিস্কারের জন্য ২৬ হাজার কর্মীকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
সৌদি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, হাজিদের স্বাস্থ্যসেবা দেওয়ার জন্য মক্কায় পর্যাপ্ত জনবল, ওষুধ ও যন্ত্রপাতিসহ আটটি হাসপাতাল স্থাপন করা হয়েছে। এছাড়া মিনা, আরফাতের ময়দান ও মুজদালিফায ২৫টি হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র চালু করা হয়েছে।
চলতি বছর মাতাফের (পবিত্র কাবার চারপার্শ্বে তাওয়াফের স্থান) স্থানও সম্প্রসারিত করেছে সৌদি কর্তৃপক্ষ। মক্কা শরীফের রক্ষাণাবেক্ষণ কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, এবার ঘন্টায় ৩০ হাজার হাজি একসঙ্গে তাওয়াফ করতে পারবে। এর আগে এখানে ১৯ হাজার হাজি একসঙ্গে তাওয়াফ করতে পারতো।
কর্তৃপক্ষ আরো জানিয়েছে, এবার মাতাফ ও হারামের দ্বিতীয় তলায় প্রতিঘন্টায় সহজেই ১ লাখ ৭ হাজার হাজির স্থান সংকুলান হবে। রোববার আরফাহ ও মুজদালিফায় হাজিদের পিপাসা নিবারণের জন্য ১৫ লাখ গ্যালন জমজমের পানি প্রস্তুত রাখা হয়েছে।