দারিদ্র্যের কারণে দাসত্বের শেকলে বাঁধা ২ কোটি ৯৬ লাখ মানুষ
পৃথিবীর সবচেয়ে বড় দাসভূমি ভারতে
রোম সাম্রাজ্যে হাতে-পায়ে বেড়ি বেঁধে রাখা হত দাসদের। কিংবা দেড়শ বছর আগেও মার্কিন মুলুকে হান্টার চাবুক দিয়ে যখন ক্রীতদাসদের পেটানো হত, শরীর থেকে উঠে আসত খাবলা-খাবলা মাংস। এ সব তো ইতিহাসের পাতায় পড়েছি আমরা। কিন্তু ইতিহাস যদি ফিরে আসে বারবার
সভ্য বলে কি গর্ব করা সাজে? যাদের মুখে ভাষা জোগায় না, কেমন আছে সেই গরিব মানুষগুলো? উত্তর খুঁজতে নেমেছিল অস্ট্রেলিয়ার ওয়াক ফ্রি ফাউন্ডেশন। দীর্ঘ সমীক্ষাতে যা ধরা পড়ল, তা চমকপ্রদ। দেখা গেল, দারিদ্র্যের কারণে দাসত্বের শেকলে বাঁধা পড়েছে ২ কোটি ৯৬ লক্ষ মানুষ।
আরও লজ্জাজনক হল, এর মধ্যে ১ কোটি ৩৯ লক্ষ দাসের বাস ভারতে। মোট সংখ্যার বিচারে সারা বিশ্বে ভারত প্রথম স্থানে। এই অবস্থা ঘোচাতে সরকারের মাথাব্যথা নেই বলেও অভিযোগ করা হযেছে সমীক্ষার রিপোর্ট-এ। ১ কোটি ৩৯ লক্ষ দাসের বাস ভারতে ওয়াক ফ্রি ফাউন্ডেশন কর্তৃক উল্লিখিত বিশ্ব দাসত্ব সূচক (গ্লোবাল স্লেভারি ইনডেক্স) থেকে জানা যাচ্ছে, কয়েকটি কারণে গরিব মানুষেরা জড়িয়ে পড়েন গোলামিতে।
সবচেয়ে বড় কারণ হল, ঋণ নিয়ে ঠিক সময় শোধ করতে না পারা। এর ফলে ঋণগ্রহীতাকে সারা জীবন গায়ে-গতরে খাটতে হয়। তা চলে বংশ পরম্পরায়। কখনও বাবা বা স্বামী ঋণের দায় মেটাতে কন্যা বা স্ত্রীকে ঋণদাতার হাতে তুলে দিতে বাধ্য হন। দিনের পর দিন চলে যৌন নিপীড়ন, একটু মুখ খুললেই জোটে চাবুক, মেলে না আহার। ওই হতভাগীদের সন্তান হলে তারাও একই পরিস্থিতির শিকার হয়।
এমন ঘটনা মূলত গ্রামাঞ্চলে বেশি ঘটে। কখনও আবার চায়ের দোকানে, কারখানাতে শিশু শ্রমিকরা অমানুষিক অত্যাচার সহ্য করে পেটের দায়ে। কখনও তস্য গরিব বাবা-মা নাবালিকা মেয়েকে জোর করে বিয়ে দিয়ে দেন, আর কখনও খোঁজ নেন না। শ্বশুরবাড়িতে চলে নিদারুণ অত্যাচার। অবাধ্য বউমাকে গোয়ালঘরে বেঁধে রাখা হয়েছে আর শ্বশুরবাড়ির সব পুরুষ দিনের পর দিন তাকে ধর্ষণ করেছে, বিহার-উত্তর-প্রদেশের এমন কিছু ঘটনা উঠে এসেছে সমীক্ষায়।
ওয়াক ফ্রি ফাউন্ডেশন-এর সিইও নিক গ্রোনো বলেন, দাসত্ব শুধু ইতিহাসের পাতায় আছে, এটা ভেবে কেউ আনন্দ পেতে পারেন। কিন্তু বাস্তব হল, আজকেও সব মহাদেশে তা আছে। সব রকমভাবে। রিপোর্ট-এ বলা হয়েছে, নিপীড়িত দাসদের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি ভারতে। ১ কোটি ৩৯ লক্ষ। এরপর আছে চিন (২৯ লক্ষ), পাকিস্তান (২১ লক্ষ), নাইজেরিয়া (৭ লক্ষ), রাশিয়া (৫ লক্ষ ১৬ হাজার)।
আশ্চর্যজনক হল, তথাকথিত সভ্য দেশ ব্রিটেনেও এমন দাস খুঁজে পাওয়া গেছে। সংখ্যাটা অন্তত সাড়ে চার হাজার। তবে, একটি দেশের মোট জনসংখ্যার অনুপাতে দাসদের সংখ্যা কত, সেই হিসাবও আলাদা করে উল্লেখ করেছে ওয়াক ফ্রি ফাউন্ডেশন। দেখা যাচ্ছে, সেক্ষেত্রে প্রথমে রয়েছে আফ্রিকার দেশ মউরিসানিয়া। এরপর রয়েছে যথাক্রমে হাইতি, পাকিস্তান, ভারত, নেপাল ও মলদোভা। এছাড়া রয়েছে আয়ারল্যান্ড ও আইসল্যান্ড। অর্থাৎ ইউরোপের দেশগুলোও কলঙ্ক থেকে মুক্ত নয়। ওয়াক ফ্রি ফাউন্ডেশন-এর এই সমীক্ষার পৃষ্ঠপোষক ছিলেন দুই প্রাক্তন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ার ও গর্ডন ব্রাউন, প্রাক্তন মার্কিন বিদেশ সচিব হিলারি ক্লিন্টন এবং ধনকুবের বিল গেটস। -বিবিসি