যাদের আঁকা ছবি প্রধানমন্ত্রীর শুভেচ্ছা কার্ডে
সাদেকুর রহমান: আসন্ন পবিত্র ঈদুল আযহা উপলক্ষে দেয়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার শুভেচ্ছা কার্ডে ব্যবহার করা হয়েছে অটিস্টিক শিশুশিল্পী সাকিব রহমানের আঁকা ছবি। ধানমন্ডির সাকিব স্কুল ফর গিফটেড চিলড্রেন এর শিক্ষার্থী। সাকিব ছবিতে একটি মসজিদের ছবি এঁকেছে। তাতে কয়েক রঙে ইংরেজি অক্ষরে লেখা হয়েছে ‘ঈদ মুবারক’।
বিগত অর্ধযুগের ধারাবাহিকতায় এবারও প্রধানমন্ত্রীর ঈদ শুভেচ্ছা কার্ডে ব্যবহার করা হয়েছে প্রতিবন্ধী শিশুদের আকাঁ ছবি। এই শিশু-কিশোরদের আঁকা ছবি সম্বলিত শুভেচ্ছা কার্ড প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে দলীয় নেতা-কর্মীসহ বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, সংস্থা ও বিশেষায়িত প্রতিষ্ঠান প্রধানদের পৌঁছে দেয়া হয়েছে।
ঈদ, পহেলা বৈশাখসহ উৎসব উদযাপনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার শুভেচ্ছা কার্ড হাতে নিলে যেসব ছবি দেখা যায় সেগুলো প্রতিবন্ধী শিশুকিশোরদেরই আঁকা। এসব ছবিতে প্রকাশিত হয়েছে প্রতিবন্ধীদের সামাজিক দৃঢ়তা ও বিশেষ সক্ষমতার প্রকাশ। রং-তুলিতে জানিয়ে দিচ্ছে এই শিশুরা কোনোভাবেই দেশের জন্য বোঝা নয়, সুযোগ পেলেই নিজেকে মেলে ধরতে পারে।
শুধু সাকিব নয়, এবার যাদের আঁকা ছবি প্রধানমন্ত্রীর ঈদ কার্ডের জন্য নির্বাচিত হয়েছে, তাদের আরেকজন প্রিয়াংকা। তার আঁকা গ্রাম-বাংলার ছবিতে এক অসাধারণ রঙের খেলা দেখা যায়। নিখুঁত হাতে এঁকেছে গ্রামের বাড়ি, গাছ, নদী। প্রিয়াংকার বাবা গৌরাঙ্গ চন্দ্র দাস বলেন, আট বছর বয়স থেকেই প্রিয়াংকা ছবি আঁকা শুরু করে। জামালপুরের মেয়ে প্রিয়াংকা সুইড বুদ্ধি প্রতিবন্ধী ও অটিস্টিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। প্রিয়াংকার নাম প্রধানমন্ত্রীর শুভেচ্ছা কার্ডে প্রকাশিত হওয়াটা অনেক সম্মানের মনে করছেন তিনি।
ছয় বছরের আদিতা মোস্তফার ছবি দিয়ে বানানো কার্ডটির কথা জানতেই মা শাহনাজ ইসলাম উত্তেজনায় চিৎকার দিয়ে বলেন, ‘হ্যাঁ, হ্যাঁ, আমার মেয়ে।’ তার বাঁধভাঙ্গা উচ্ছ্বাস, কী যে আনন্দ লাগছে। আমাদের মেয়ে। ওর ছবি প্রধানমন্ত্রীর শুভেচ্ছা কার্ডে জায়গা পেয়েছে সে তো অনেক বড় পাওয়া। আদিতা বাবা-মাকে যে সম্মান এনে দিয়েছে, এরপর তাকে কম সক্ষম বলার কোনও সুযোগ নেই। বিশেষ বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন আদিতা ছবিতে তার বয়সী শিশুদেরই মাঠে পশুদের সঙ্গে নিয়ে খেলার, ঘুরে বেড়ানোর ছবি এঁকেছে। তার কল্পনায় আকাশে তখন তারার মেলা।
জানা গেছে, ২০১০ সাল থেকে এ পর্যন্ত ৮২ জন প্রতিবন্ধী শিশু-কিশোরের আঁকা ছবি ব্যবহার করা হয়েছে প্রধানমন্ত্রীর বিভিন্ন শুভেচ্ছা কার্ডে। আর এ পর্যন্ত কার্ডে ব্যবহৃত ছবিগুলো দিয়ে বই প্রকাশের উদ্যোগ নিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।
প্রধানমন্ত্রীর প্রেস উইং থেকে জানানো হয়েছে, ২০১০ সাল থেকেই বিভিন্ন উৎসব-পার্বনে প্রধানমন্ত্রীর শুভেচ্ছা কার্ডে প্রতিবন্ধী শিশু-কিশোরদের আঁকা ছবি ব্যবহার করা হয়। আর এই ছবিগুলো সংগ্রহ করা হয় চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতার মধ্য দিয়ে। সংগ্রহ করা ছবির একটা সংক্ষিপ্ত তালিকা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে দেয়া হয়। তিনি (প্রধানমন্ত্রী) চূড়ান্ত করেন ছবিগুলো।
জানা যায়, চলতি বছর রাজধানী ও জেলা পর্যায়ে প্রতিবন্ধী শিশুদের চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতার মাধ্যমে আসা ছবিগুলো থেকে সাতটি ছবি চূড়ান্ত করেন প্রধানমন্ত্রী। যাদের ছবি চূড়ান্তভাবে নির্বাচিত হয়েছে তাদের প্রত্যেককে এক লাখ টাকা করে পুরস্কার দেয়া হবে। এ শিশুরা নিজেরা জানেও না কী অসাধ্য কাজ সাধন করেছে তারা। তবে তাদের অভিবাবকরা সন্তানের এই অর্জনে আনন্দে কাঁদছেন। তারা বলছেন, এই শিশুদের অবহেলা না করার বার্তা এলো এই উদ্যোগের মধ্য দিয়ে।
প্রধানমন্ত্রীর উপ-প্রেস সচিব আশরাফুল আলম খোকন গণমাধ্যমকে জানান, এখন পর্যন্ত যতো ছবি নির্বাচিত হয়েছে, সেগুলো দিয়ে একটি বই প্রকাশের উদ্যোগ নিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, প্রতিটি উৎসবের আগে প্রতিযোগিতার মধ্য দিয়ে প্রতিবন্ধী শিশুদের আঁকা ছবি থেকে বাছাইকৃত ছবি প্রধানমন্ত্রী নিজে পছন্দ করেন। এর আগে জেলা পর্যায়ে প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়। সেখানে জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে এটি পরিচালনা করা হয়।
খোকন আরো জানান, ঢাকায় উৎসবের আগে সমাজসেবা অধিদফতর এই আয়োজনটি করে। সেখান থেকে প্রতিযোগিতার মাধ্যমে যাদের ছবি বাছাই হয়, তাদের সংক্ষিপ্ত তালিকা প্রধানমন্ত্রীর কাছে দেয়া হলে তিনি নিজে দেখে বাছাই করেন।