পুড়ছে সিরিয়া

Syriaগত পাঁচ বছর ধরে সিরিয়ায় সরকারি বাহিনী ও বিদ্রোহীদের মধ্যে বিরামহীন সংঘর্ষ চলেছে। সংঘর্ষের শুরু ২০১১ সালের মার্চে। এই সময় শুরু হওয়া ‘আরব বসন্ত’ ছোয়া সিরিয়াতেও লেগেছিল। অন্যদেশে সেই বসন্ত শেষ হলেও সিরিয়া চলেছে বছরের পর বছর। দীর্ঘ সময় ধরে চলা গৃহযুদ্ধে সিরিয়ার কয়েক লাখ মানুষ প্রাণ হারিয়েছে। কখন সরকারি বাহিনীর হামলায়, কখনো বিদ্রোহী, কখনো আইএস জঙ্গি বা বন্ধু রাষ্ট্রের হামলায় প্রাণ হারিয়েছে সিরীয়রা। গৃহহীণ হয়েছে লাখ লাখ মানুষ আশ্রয়ে নিয়েছে প্রতিবেশী দেশের শরণার্থী শিবিরে। অনেকে আবার পাড়ি জমিয়েছেন ইউরোপসহ পশ্চিমা দেশগুলোয়। সমুদ্র পাড়ি দিতে গিয়ে পানিতে ডুবে প্রাণ হারিয়েছে অনেকেই। যা গণমাধ্যমে বারবারই ওঠে এসেছে। তারপরও থামেনি সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদের বাহিনী এবং বিদ্রোহীরা। এমন যখন পরিস্থিতি তখন যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার মধ্যস্থতায় সিরিয়ায় যুদ্ধবিরতি হয়।
যুদ্ধবিরতি হয়েছে ঠিকই কিন্তু তাতে কী হবে। সিরিয়ার আর অবশিষ্ট কিছু নেই। সেই বিধ্বংস সিরিয়ার পথে ১১ সেপ্টেম্বর ৫১তম জন্মদিন পালন করলেন প্রেসিডেন্ট আসাদ। হাসি হাসি মুখ নিয়ে স্বদর্প কলার উঁচিয়ে তাকে হাঁটতে দেখা গেল যুদ্ধবিধ্বস্ত সিরিয়ার রাস্তায়। সিরিয়ার এই ধ্বংসযজ্ঞের জন্যও যে তিনি দায়ী তার ভাবলেশ কিছুই বোঝা যায়নি আসাদের মুখ দেখে। তাকে দেখে বরং মনে হচ্ছিল জয়ীর বেশেই তিনি সিরিয়ায় ফিরে এসেছেন।
সিরিয়ায় যখন তার বাহিনী ও বিরোধীরা লড়াই করছিল কোথায় ছিলেন আসাদ। তার একগুয়েমির কারণে অনেক মানুষ যখন প্রাণ হারিয়েছে তখন মিত্রদের সহযোগিতায় তিনি বসেছিলেন গোপন কোনো আস্তানায়। ফিরেও দেখেননি তার দেশের মানুষ কী অবস্থায় আছে। সিরিয়ার বাইরে বসেই তিনি রাজত্ব করেছেন দেশে। দেশের মানুষের কথা না ভেবে তাদের ঠেলে দিয়েছেন দুর্ভোগের মধ্যে।
এ প্রসঙ্গে দুবাইয়ের ওরিয়েন্ট রিসার্চ সেন্টারের পরিচালক সামির আলতাকি বলেছেন, ‘সমস্যা হলো তিনি কখনও জয়ী হতে পারবেন না। একইসঙ্গে তাকে হারানোও সম্ভব নয়। তবে দিনের শেষে সিরিয়ার কী পরিণতি হলো সেটাই দেখার বিষয়। তিনি এখনো নেতা। কিš‘ তার কোনো দেশ নেই। অনেকটা মুকুটহীন সম্রাটের মতো।’
তবে আসাদের যোগ্যতায় সিরিয়ায় অস্ত্রবিরতি আসেনি। হয়তো তার যোগ্যতায় এতোদিন সিরিয়া অস্থির রাখাও সম্ভব হতো না। এর পেছনে ছিল তার মিত্র শক্তিরা। এমন যখন পরিস্থিতি তখন রাজনীতিতে আসাদের ভবিষ্যত কী? জোর করে ক্ষমতা আঁকড়ে থাকা ছাড়া তিনি তো আর কোনোভাবেই ক্ষমতায় থাকতে পারবেন না বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। কারণ সিরিয়ায় যদি কখনও ভোটাভুটির আয়োজন করা হয় তাহলে আয়লানের পরিবার বা কেমিক্যাল হামলায় নিহত একহাজার শিশুর পরিবারের কেউ তো তাকে ভোট দেব না। বা যুদ্ধে নিহত লাখ লাখ পরিবারের কারো সমর্থনই তিনি পাবেন না।
সিরিয়ার ভবিষ্যত গণতন্ত্র নিয়ে কাজ করছে ‘ডে আফটার’ নামের একটি সংস্থা। এর চেয়ারম্যান মুরহাফ জয়েজাতির মতে, ‘আসাদ এমনই এক মানুষ তিনি সব সিরিয়ানদের দেখিয়ে দিতে চান যে, তাকে সমর্থন করা যেন বিশ্ব নেতাদের বড় ভাগ্য।’
রাজনীতিতে আসাদের ভবিষ্যত সম্পর্কে সরকারবিরোধী মালিক রাফাই বলেন, ‘আসাদ যখন সিরিয়ার ধ্বংসস্তূপের মধ্য দিয়ে হাঁটছিল সেখানে মানুষের দেখা মেলেনি। কয়েকটি পাখি উড়তে দেখা গেছে। স্বর্গ থেকে এ পাখিগুলো যেন বলছিল মানুষের ভালোবাসা তুমি আর পাবে না। পেশির জোরেই তোমাকে টিকে থাকতে হবে। যেমনটা টিকে থাকে দুর্বল মানুষ।’

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button