রামপাল প্রকল্প নিয়ে ইউনেস্কোর বক্তব্যকে জাতিসংঘের সমর্থন
বিশ্ব ঐতিহ্য সুন্দরবন সংলগ্ন রামপাল বিদ্যুৎপ্রকল্প নিয়ে ইউনেস্কোর বক্তব্যকে সমর্থন জানিয়েছে জাতিসংঘ।
গতকাল মঙ্গলবার নিয়মিত সাংবাদিক সম্মেলনে এ কথা জানান, জাতিসংঘ মহাসচিবের সহকারী মুখপাত্র ফারহান হক।
বাংলাদেশ-ভারত যৌথ উদ্যোগে রামপাল কয়লা বিদ্যুৎপ্রকল্প নিয়ে সম্প্রতি আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বেগ জানায় জাতিসংঘের শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতি বিষয়ক অধিসংস্থা ‘ইউনেস্কো’। সংস্থাটির দাবি, এই বিদ্যুৎপ্রকল্প সুন্দরবনের পাশাপাশি হুমকিতে ফেলবে স্থানীয়দের জীবনযাত্রা। বদলে যাবে পুরো এলাকার চিত্র, যা পরিবেশ বিপর্যয়ের পাশাপাশি অর্থনৈতিক নানা চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দেবে।
ইউনেস্কোর এই প্রতিবেদনে পূর্ণ সমর্থন জানায় জাতিসংঘ। এদিকে সরকার জানিয়েছে, আগামী সপ্তাহে ইউনেস্কোর প্রতিবেদনের জবাব দেয়া হবে।। সরকারের কাছে ওই প্রতিবেদনটি পাঠিয়েছেন ইউনেস্কো’র ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সেন্টারের পরিচালক ম্যাকটিল্ড রোসলার।
বাংলাদেশ সরকারকে ৫০ পৃষ্ঠার এক লিখিত প্রতিবেদনে আপত্তির কথা জানিয়ে ইউনেস্কো বলেছে, রামপালে প্রস্তাবিত কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মিত হলে ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সুন্দরবন ও এর জীববৈচিত্র্য মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য সরকার যে পরিবেশগত প্রভাব মূল্যায়ন (এভায়রনমেন্টাল ইমপ্যাক্ট এসেসমেন্ট- ইআইএ) করেছে, সেটিও আন্তর্জাতিক মানের হয়নি বা অসম্পূর্ণ রয়েছে। এজন্য ইউনেস্কো’র ওই লিখিত প্রতিবেদনের বিষয়ে আগামী ১১ অক্টোবরের মধ্যে সরকারের মতামত চেয়েছে সংস্থাটি। পাশাপাশি প্রস্তাবিত বিদ্যুৎকেন্দ্রটি রামপাল থেকে অন্যত্র সরিয়ে নেয়ার জন্য সরকারকে পরামর্শও দিয়েছে ইউনেস্কো।
আগামী ২৪ থেকে ২৬ অক্টোবর ফ্রান্সের প্যারিসে বসছে ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ কমিটির ৪০তম অধিবেশন। ওই অধিবেশনে সুন্দরবন থেকে মাত্র ১৪ কিলোমিটার দূরত্বে প্রস্তাবিত রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হবে। ১৯৯৭ সালে সুন্দরবনকে বিশ্ব ঐতিহ্যের অংশ হিসেবে স্বীকৃতি দেয় ইউনেস্কো ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ কমিটি। এর আগে ইউনেস্কোর ওই কমিটি গত বছরের জুলাই মাসে জার্মানিতে অনুষ্ঠিত ৩৯তম অধিবেশনেও রামপালে প্রস্তাবিত কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রসুন্দরবনের ক্ষতি করবে বলে উদ্বেগ প্রকাশ করেছিল।
জার্মান অধিবেশনের পর চলতি বছর ২২ মার্চ ইউনেস্কো’র তিন সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল এক সপ্তাহের জন্য বাংলাদেশ সফর করেছিল। ওই প্রতিনিধিদলে ছিলেন প্রকৃতি সংরক্ষণ বিষয়ক আন্তর্জাতিক সংস্থা আইইউসিএন (ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনজারভেশন অব নেচার)-এর প্রতিনিধি নাওমি ডোয়াক, মিজুকি মুরাই ও বিশ্ব ঐতিহ্য সেন্টারের ফানি এডলফাইন ডাউবিরি। বাংলাদেশ সফরকালে ওই বিশেষজ্ঞদল বিদ্যুৎ বিভাগ, পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয় এবং নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন। বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থার প্রতিনিধিদলের সঙ্গে ওই বিশেষজ্ঞদলের বৈঠক হওয়ার কথা থাকলেও রহস্যময় কারণে সেটি তখন হয়নি। ওই প্রতিনিধিদলের প্রধান উদ্দেশ্য ছিল রামপালে প্রস্তাবিত কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ হলে সেটি পরিবেশ ও সুন্দরবনের উপর কী ধরনের প্রভাব ফেলতে পারে তা যাচাই বাছাই করা। ২৯ মার্চ ওই প্রতিনিধিদলটি বাংলাদেশ ছেড়ে যাওয়ার প্রায় পাঁচ মাস পর তাঁদের এ সংক্রান্ত তৈরি করা প্রতিবেদনটি গত ১১ আগস্ট সরকারের কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে পাঠিয়েছে ইউনেস্কো।
এর আগে রামাপালে প্রস্তাবিত কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছিল জাতিসংঘের আরেক সংস্থা রামসার সেক্রেটারিয়েট। এছাড়া বিশ্বের অন্তত ১৭৭টি সংস্থা রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রে অর্থায়ন না করার জন্য ভারতের এক্সিম ব্যাংকের কাছে চিঠি দিয়ে অনুরোধ জানিয়েছে। উল্লেখ্য, শুরু থেকেই সুন্দরবনের পাশে রামপাল কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের বিরোধিতা করে আসছে বাংলাদেশের পরিবেশবাদী সংগঠনগুলো। পাশাপাশি বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রামপালে প্রস্তাবিত কয়লাবিদ্যুৎ প্রকল্পের বিরোধীতায় বিভিন্ন পরিবেশবাদী সংগঠনগুলো মানববন্ধনসহ নানা কর্মসূচি পালন করছে। কিন্তু সরকার পরিবেশবাদী সংগঠনগুলোর এই বিরোধীতাকে মূল্যায়ন না করে বরং এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে এখন পর্যন্ত দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।