দ্বিতীয় বিতর্কেও ট্রাম্পের পরাজয়
যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রচারণায় দ্বিতীয় বিতর্কে ডেমোক্র্যাট দলের প্রার্থী হিলারি রডহাম ক্লিনটন জয়ী হয়েছেন। জরিপে দেখা যায়, হিলারী পেয়েছেন ৫৭ শতাংশ ভোট এবং তার প্রতিদ্বন্দ্বী রিপাবলিকান দলীয় প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প পেয়েছেন ৩৪ শতাংশ ভোট। গত রোববার রাতে মিসৌরীয় সেন্ট লুইস ওয়াশিংটন ইউনিভার্সিটিতে দুই প্রার্থীর মধ্যে অনুষ্ঠিত এই বিতর্ককে যুক্তরাষ্ট্রের সাম্প্রতিক নির্বাচনী ইতিহাসে সবচেয়ে কদর্যপূর্ণ বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে। রয়টার্স, বিবিসি, আল জাজিরা, সিএনএন।
সিএনএন/ ওআরসির জরিপে দ্বিতীয় বিতর্কেও জয়ী হয়েছেন ডেমোক্রেট দলের প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী হিলারি ক্লিনটন। জরিপে দেখা যায়, হিলারি পেয়েছেন ৫৭ শতাংশ আর ট্রাম্প পেয়েছেন ৩৪ শতাংশ ভোট। এর আগের বিতর্কে হিলারি জয়ী হয়েছিলেন তবে এবারের বিতর্কে হিলারির পয়েন্ট কমেছে এবং ট্রাম্পের পয়েন্ট বেড়েছে। জয়ের ব্যবধান কমেছে হিলারির।
বাংলাদেশ সময় গতকাল সোমবার সকাল ৭টায় মিসৌরি অঙ্গরাজ্যের সেন্ট লুইস শহরের ওয়াশিংটন ইউনিভার্সিটিতে বিতর্ক শুরু হয়ে ৯৯ মিনিট চলে বিতর্কটি। এবিসি টেলিভিশনের সাংবাদিক মার্থা রাডাৎস ও সিএনএনের অ্যান্ডারসন কুপারের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত হয়। এরপর জরিপ পরিচালনা করা হয়।
সিএনএন ৫৩৭ জন নিবন্ধিত ভোটারের সাক্ষাৎকার নিয়েছে, যারা বিতর্কটি দেখেছেন। তাদের মধ্যে ৫৭ শতাংশ ভোটার হিলারি ক্লিনটনকে সমর্থন জানিয়েছেন এবং ৩৪ শতাংশ সমর্থন পেয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। দ্বিতীয় বিতর্কে হিলারি ক্লিনটন জয় পেলেও প্রথমবারের মতো শক্ত অবস্থান থেকে কিছুটা সরে এসেছেন। প্রথমবার ৬২ শতাংশ সমর্থন পেয়েছিলেন হিলারি। সিএনএন জানিয়েছে, জরিপে ভুল হওয়ার সম্ভাবনা (মার্জিন অব এরোর) ৪ শতাংশ।
বিতর্কে হিলারি ক্লিনটন বলেন, ট্রাম্পের কোনো কিছুই আমাকে আশ্চর্য করে না। আমার ওপর মিথ্যার যে ঝড় বইয়ে দিয়েছেন তিনি, তাতে আশ্চর্য হয়েছি। আমি সত্যিই কল্পনা করতে পারি না যে কেউ এভাবে দাঁড়িয়ে মিথ্যার পর মিথ্যা বলে যেতে পারেন। আপনারা মনে করতে পারেন যে পলিটিফ্যাক্ট (রাজনীতিতে মিথ্যা তদন্তবিষয়ক প্রকল্প) জানিয়েছে, এ পর্যন্ত যাদের মূল্যায়ণ করা হয়েছে, ট্রাম্প সবচেয়ে বেশি মিথ্যাবাদী। তাঁরা বলেছেন, ট্রাম্প ৭০ শতাংশ মিথ্যা বলেন। আমার মনে হয় এটা তারও বেশি।’
প্রেসিডেন্ট হলে হিলারিকে ‘ জেলে পাঠাবেন’ ট্রাম্প : যুক্তরাষ্ট্রের আসন্ন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রিপাবলিকান পার্টির প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, তিনি জয়ী হলে ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রার্থী হিলারি ক্লিনটনকে ইমেইল সার্ভার কেলেঙ্কারির জন্য জেলে পাঠাবেন।
নির্বাচন সামনে রেখে গত রোববার রাতে প্রধান এই দুই প্রার্থীর মুখোমুখি দ্বিতীয় বিতর্কে ট্রাম্পের এ মন্তব্য আসে।
রয়টার্স জানিয়েছে, মিসৌরির সেন্ট লুইস ওয়াশিংটন ইউনিভার্সিটিতে এ বিতর্কে ট্রাম্প বলেন, তিনি নির্বাচনে জয়ী হলে হিলারির ই-মেইল কেলেঙ্কারির বিষয়ে বিশেষ একজন প্রসিকিউটর নিয়োগ দেবেন।
বারাক ওবামার পররাষ্ট্রমন্ত্রী থাকাকালে ২০০৯-২০১৩ পর্যন্ত সময়ে হিলারি ব্যক্তিগত সার্ভার থেকে গুরুত্বপূর্ণ ইমেইল লেনদেন করে রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তার ক্ষতি করেছেন বলে মন্তব্য করেন ট্রাম্প।
ওই সময় হিলারির আদান-প্রদান করা ৩০ হাজার ৬৮টি ইমেইল নিয়ে তদন্ত করে এফবিআই। এর মধ্যে দুই হাজারের বেশি ইমেইলে গোপনীয় তথ্য পাওয়া গেছে জানালেও হিলারি যে ‘ জেনেশুনে এ কাজ করেছেন’ তার কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি বলে জানানো হয় এফবিআইয়ের প্রতিবেদনে।
ওই ঘটনার উল্লেখ করে বিতর্কে হিলারিকে উদ্দেশ্য করে ট্রাম্প বলেন, “আপনার অবশ্যই লজ্জিত হওয়া উচিত।”
প্রতিক্রিয়ায় হিলারি বলেন, ট্রাম্পের মত মনমানসিকতার কেউ হোয়াইট হাউজে নেই বলে তিনি স্বস্তিবোধ করছেন।
সঙ্গে সঙ্গে ট্রাম্প বলেন, “আপনাকে জেলে যেতে হবে।”
দুই প্রার্থী এর আগে প্রথমবিতর্কে মুখোমুখি হন ২৭ সেপ্টেম্বর। জনমত জরিপের ফলাফলে দেখা গেছে, সেই বিতর্কে অধিকাংশ ভোটার হিলারিকেই জয়ী বলেছেন।
দ্বিতীয় বিতর্কের ঠিক দুদিন আগে নারীদের নিয়ে বেফাঁস মন্তব্যের পুরনো এক টেপ ফাঁস হওয়ায় নতুন করে বিতর্কে জড়িয়েছেন ট্রাম্প। নিজ দলের বহু নেতার সমর্থন এরই মধ্যে হারিয়েছেন তিনি।
গত রোববার দেড় ঘণ্টার বিতর্কের এক পর্যায়ে সেই টেপের প্রসঙ্গ আসে। ট্রাম্প বলেন ফাঁস হওয়া অডিও টেপ নিয়ে তিনি ‘বিব্রত’, তবে সেজন্য তিনি ভোটারদের কাছে ক্ষমা চেয়েছেন।
২০০৫ সালের ওই টেপে এনবিসি টিভির উপস্থাপক বিলি বাশের সঙ্গে কথপোকথনে ট্রাম্পকে বলতে শোনা যায়, ‘তুমি যদি তারকাহও, তবেমেয়েদের নিয়ে যা কিছু করতে পার’।
ওই কথপোকথনে বিবাহিত এক অভিনেত্রীর সঙ্গে যৌন সম্পর্ক স্থাপনে উদগ্র আগ্রহের কথাও বলতে শোনা যায় ট্রাম্পকে, যিনি বর্তমানে তৃতীয় স্ত্রী মেলানিয়াকে নিয়ে ঘর করছেন।
মেলানিয়া বলেছেন, ট্রাম্পের ওই বক্তব্য কোনোভাবেই ‘গ্রহণযোগ্য নয়’। যে স্বামীকে তিনি চেনেন, তার সঙ্গে একে মেলানো যায় না। তারপরও তিনি আশা করছেন, আমেরিকার জনগণ ট্রাম্পকে মাফ করে দেবে।
বিতর্কে ফাঁস হওয়া ওই টেপকে ‘লকার রুমের কথা’ বলে উড়িয়ে দেন ট্রাম্প। নারীদের প্রতি তার যথেষ্ট ‘শ্রদ্ধা’ আছে বলেও মন্তব্য করেন এ রিপাবলিকান প্রার্থী।
এ প্রসঙ্গে বিতর্কে হিলারির স্বামী সাবেক প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটনকেও টেনেছেন ট্রাম্প। বলেছেন, “আমারটা কেবল কথা, আর বিল ক্লিনটনতো করে দেখিয়েছেন।”
এ বিষয়ে হিলারি বলেন, ট্রাম্পের মন্তব্যই দেখিয়ে দেয়, কেন তিনি হোয়াইট হাউজের জন্য অনুপযুক্ত।
“ওই ভিডিও তাকে উপস্থাপন করে না বলে দাবি করছেন ট্রাম্প; কিন্তু আমার ধারণা, যারা এটি শুনেছেন তারা বুঝতে পারছেন, এটি কেবলমাত্র তাকেই উপস্থাপন করে”, বলেন হিলারি।
রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়, বিতর্কের আগে আগে বিল ক্লিনটনের বিরুদ্ধে যৌন নিগ্রহ ও ধর্ষণের অভিযোগকারী তিন নারী- পলা জোনস, জুয়ানিতা ব্রডরিক ও ক্যাথলিন উইলির সঙ্গে দেখা করেন ট্রাম্প।
এদের মধ্যে পলা ১৯৯১ সালে বিল ক্লিনটনের বিরুদ্ধে যৌন নিগ্রহের অভিযোগ আনেন। দোষ স্বীকার বা ক্ষমা না চেয়ে ৮ লাখ ৫০ হাজার ডলারে ওই ঘটনার মীমাংসা করেছিলেন আরকানসাসের তখনকার গভর্নর ক্লিনটন।
এরও আগে ১৯৭৮ সালে ক্লিনটনের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ করেন জুয়ানিতা; আর ১৯৯৩ সালে হোয়াইট হাউজের সাবেক কর্মী ক্যাথলিন প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে ‘লাঞ্ছিত করার’ অভিযোগ আনেন। তাদের কারও অভিযোগ প্রমাণিত হয়নি।
হিলারির সঙ্গে দ্বিতীয় বিতর্কের আগে ট্রাম্প ক্যাথি শেলটনের সঙ্গেও দেখা করেন। ১২ বছর বয়সে ধর্ষিত হওয়া ক্যাথির বিরুদ্ধে লড়েছিলেন হিলারি।
তখনকার শিক্ষানবীস আইনজীবী হিলারির কারণেই প্রমাণিত হওয়ার পরও ধর্ষক অভিযোগ কম শাস্তি পেয়েছিল বলে অভিযোগ রয়েছে।
বিতর্কের সময় এ চার নারী দর্শক সারির সামনে বসা ছিল বলে রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়।
হিলারির মুখোমুখি হওয়ার আগে ট্রাম্পের এ ধরনের কর্মকা-কে ‘লোক দেখানো’ অ্যাখ্যা দিয়ে হিলারি শিবির বলছে, এ প্রবণতা প্রতিযোগিতাকে ‘ধ্বংসের তলানিতে’ নিয়ে যাবে।