সোনালী ব্যাংক ইউকে শাখাকে ৩৩ লাখ পাউন্ড জরিমানা
বাংলাদেশের সোনালী ব্যাংক ইউকে শাখাকে নতুন গ্রাহকদের কাছ থেকে আমানত গ্রহণের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। আগামী ছয় মাসের জন্য এ নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে।
যুক্তরাজ্যের ফিন্যান্সিয়াল কনডাক্ট অথোরিটি (এফসিএ) বলেছে, সোনালী ব্যাংক ইউকে মানি লন্ডারিং প্রতিরোধে ব্যর্থ হয়েছে। এ জন্য ব্যাংকটিকে ৩৩ লাখ পাউন্ড জরিমানা করা হয়েছে। কিন্তু ব্যাংকটি প্রবাসী-আয় বা রেমিট্যান্স বাংলাদেশে পাঠাতে পারবে।
এফসিএর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মানি লন্ডারিং প্রতিরোধে ব্যাংকটি ব্যর্থ হওয়ায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
সম্ভাব্য মুদ্রা পাচার ঠেকাতে পদ্ধতি উন্নত করতে সোনালী ব্যাংককে ২০১০ সালে সতর্ক করেছিল এফসিএ। কিন্তু এর পরের চার বছরেও ব্যবস্থার উন্নতি ঘটাতে ব্যর্থ হয় সোনালী ব্যাংক ইউকে। এ জন্য এই জরিমানা করা হয়েছে।
এফসিএ’র রিপোর্টে বলা হয়েছে, ব্যাংকটির সিনিয়র ব্যবস্থাপনা টিম, অর্থ পাচার বিষয়ক রিপোর্টের কার্যকারিতা, শাখাগুলোতে নজরদারি সহ প্রশাসনিক কাঠামো, অর্থ পাচার বিরোধী সব পর্যায়ে ধরা পড়েছে মারাত্মক ও সিস্টেমিক দুর্বলতা।
এতে বলা হয়েছে, ব্যাংকটি অপারেশন বা পরিচালনা বিষয়ক বাধ্যবাধকতা মেনে চলতে ব্যর্থ হয়েছে। তারা কাস্টমারদের প্রতি নিরলস প্রচেষ্টা, তাদের পরিচিতি ও রাজনৈতিক পরিচয়ের ব্যক্তিদের প্রতি দায়িত্ব, অর্থ লেনদেন, কাস্টমারের ওপর মনিটরিং, সন্দেহজনক কর্মকান্ডের বিষয়ে রিপোর্টিংয়ে তারা ব্যর্থ হয়েছে।
তবে সবচেয়ে খারাপ যে বিষয়টি ঘটেছে তা হলো, একজন কাস্টমারের বিরুদ্ধে উল্লেখযোগ্য প্রতারণার একটি অভিযোগ কমপক্ষে ৭ সপ্তাহ পর্যন্ত এফসিএ’কে জানায় নি ব্যাংকটি। অর্থ পাচার বিরোধী নিয়ম কানুন গুরুত্বের জন্য না নেয়ায় ব্যাংকটির পরিচালনা পরিষদ ও সিনিয়র ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের সমালোচনা করা হয়েছে। এ জন্য ব্যাংকটির অর্থ পাচার বিষয়ক শীর্ষ কর্মকর্তা স্টিফেন স্মিথকে ব্যক্তিগতভাবে ১৭ হাজার ৯০০ পাউন্ড জরিমানা করা হয়েছে।
দেখা গেছে ব্যাংকের আভ্যন্তরীণ অডিটে যে সতর্কতা দেয়া হয়েছিল সে বিষয়ে দায়িত্ব নেয়ার কথা স্টিফেন স্মিথের। কিন্তু রেগুলেটর দেখতে পেয়েছে তিনি তা আমলে নিতে ব্যর্থ হয়েছেন।
তার বিরুদ্ধে অভিযোগ আছে যে, ব্যাংক কর্মকর্তারা অর্থ পাচার রোধের বিষয়ে কি করতে হবে তা তিনি তাদের জানাতে ব্যর্থ হয়েছেন। তিনি ব্যাংকের পরিচালনা পরিষদ ও সিনিয়র ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছেন, ব্যাংকে অর্থ পাচার রোধ ঠিকঠাক মতো কাজ করছে। আসলে বাস্তবে তা উল্টো। তিনি অধিক স্টাফ নিতে ব্যর্থ হয়েছেন।
গত ডিসেম্বরে সোনালী ব্যাংক ঘোষণা করেছে যে, তারা ব্যবসায়ী নন এমন আর কোনো কাস্টমার নেয়া বন্ধ করে দেবে। এ বছরের শেষ নাগাদ শুধু দুটি শাখা কার্যকর থাকবে।
রেগুলেটর বলেছে, অর্থ পাচার রোধের বিষয়টি উন্নত করতে সম্মত হয়েছে ব্যাংক। এক্ষেত্রে নতুন সিনিয়র স্টাফ নেয়া হবে। বাইরের বিশেষজ্ঞদের সহায়তা নেয়া হবে। স্টাফদের প্রশিক্ষণ দেয়া হবে।
উল্লেখ্য, যুক্তরাজ্যের লন্ডনে, বার্মিংহাম ও ব্রাডফোর্ডে সোনালী ব্যাংকের তিনটি শাখা রয়েছে। প্রবাসীদের সেবা দিতে ও ঋণপত্রের নিশ্চয়তা প্রদানের জন্য ২০০১ সালের ডিসেম্বরে যুক্তরাজ্যে যাত্রা শুরু করে সোনালী ব্যাংক। এতে সরকারের শেয়ার ৫১ ও সোনালী ব্যাংকের ৪৯ শতাংশ।