শেষ হলো ৩ দিনব্যাপী লন্ডন ইসলামী বইমেলা
অনেক আশা ও প্রত্যাশার পর শেষ হয়ে গেলো ৩ তিনব্যাপী লন্ডন ইসলামী বইমেলা। গত শনিবার ১৯ শে নভেম্বর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের মাধ্যমে মেলা শুরু করেন মেলা আয়োজক কমিটির প্রধান আল কোরআন একাডেমী লন্ডন এর চেয়ারম্যান হাফেজ মুনির উদ্দীন আহমদ। প্রথমে পবিত্র কোরআন থেকে তেলাওয়াত করেন বিশিষ্ট কারী ও ইসলামী সংগীতশিল্পী নওশাদ মাহফুজ। মেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন প্রফেসর খন্দকার কবির উদ্দীন।
বইমেলায় উদ্বোধনী বক্তব্য রাখেন হাফেজ মুনির উদ্দীন আহমদ। তিনি তার বক্তব্যে বলেন,নানা শংকা ও উদ্বেগের পরও ইসলামী বইমেলা শুরু করতে পেরে আমি মহান আল্লাহ তায়ালার কাছে শুকরিয়া আদায় করছি। ২০১২ সালে যখন আমরা প্রথম ইসলামী বইমেলাটির আয়োজন করেছিলাম তখনও নানা উদ্বেগ ও উতকন্ঠার মধ্য দিয়েই এর সূচনা হয়েছিলো। তারপরও আল্লাহ তায়ালার অশেষ রহমত থাকার কারনে আমরা বিলেতের মাটিতে একটি প্রতিকুল পরিবেশে খুব সুন্দরভাবে এই বইমেলাটি সম্পন্ন করতে পেরেছিলাম।
কমিউনিটির সকলের আন্তরিক সহযোগিতায় এবার পঞ্চমবারের মতো আবারও আমরা মেলাটির আয়োজন করতে পেরেছি। তিনি বলেন, এই ইসলামী বইমেলা আয়োজনের পেছনে আমাদের একটাই উদ্দ্যেশ ছিলো এবং তা হচ্ছে আমরা যারা বিলেতে বসবাস করছি তারা যাতে করে নিজেদের মাতৃভাষা বাংলাকে আরো সুন্দরভাবে চর্চা করতে পারি এবং সবাই যাতে ইসলামী বাংলা সাহিত্যকে আরো বেশী করে জানতে পারি সর্বোপরি বিলেতের মতো একটি বৈরী পরিবেশে নিজেদের ইসলামী জ্ঞানকে সমৃদ্ধ করতে পারি সেজন্যই মূলত: আল কোরআন একাডেমী নানা প্রতিকুলতা থাকা সত্ত্বেও কমিউনিটির সকলের সহযোগিতায় এবারও আয়োজন করেছে এই মেলা।
ইসলামী বইমেলায় বক্তব্য রাখেন ইস্ট লন্ডন মসজিদের খতিব ইমাম শায়খ আবদুল কাইয়ুম। লন্ডন ইস্ট একাডেমীর সাবেক প্রিন্সিপাল শায়খ মোসলেহ ফারাদী, ইসলামী ব্যক্তিত্ব এ কে মওদুদ হাসান, বিশিষ্ট আলেম আবদুল কাদের সালেহ, ড.আবুল কালাম আজাদ, প্রবীন সাংবাদিক ও বিশিষ্টি কমিউনিটি ব্যক্তিত্ব কে এম আবু তাহের চৌধুরী, কবি ফরিদ আহমদ রেজা, দেশ পত্রিকার সম্পাদক তাইসির মাহমুদ ও রেনেঁসার কবি শিহাবুজ্জামান কামাল প্রমূখ । উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন চ্যানেল এস এর সিইও তাজ চৌধুরী, টিভি ওয়ানের হেড অব অপারেশন্স গোলাম রসূল, ব্যারিষ্টার নাজির আহমদ, চ্যালেন এস এর রিপোর্টার জোবায়ের আহমদ ও ইব্রাহিম খলিল ।
শেষ দিন বিকালে ইউকের জনপ্রিয় টিভি প্রেজেন্টার ও টিভি ওয়ানের ভাইস চেয়ারম্যান শায়খ মাহমুদুল হাসানও মেলা পরিদর্শন করেন। এবারের মেলায় অন্যান্যবারের চেয়ে দর্শক পাঠক ও ক্রেতাদের ভীড় ছিলো লক্ষ্যনীয়। প্রতিদিনই শত শত মহিলা ও পুরুষ পাঠক দর্শক মেলায় আসেন। এছাড়া মেলায় এবার বাংলা বইয়ের পাশাপাশি ইংরেজী ও আরবী বই থাকার কারনে অনেক দেশের পাঠক দর্শক ও ক্রেতাও ছিলো চোখে পড়ার মতো।
সোমালিয়ান, নাইজেরিয়ান ও অনেক ইউরোপীয় বইপ্রেমীও মেলা পরিদর্শন করেন। ৩ দিনের এ মেলায় শনি ও রবিবার সাপ্তাহিক ছুটি থাকার কারনে প্রচুর দর্শক সমাগম মেলাকে উত্সব মুখর করে রেখেছিল। মেলা উপলক্ষ্যে পেন্সিল নামে একটি মনোজ্ঞ ম্যাগাজিনও প্রকাশিত হয়। মেলায় বৃটেনের বেশ কিছু স্বনামধন্য ইসলামিক বুক স্টল অংশগ্রহন করেন। এবারের মেলাতে বেশ কয়েকটি ক্যালিওগ্রাফী স্টলও অংশগ্রহন করে।
এবারের মেলায় ছোটদের বেশ কিছু ইংরেজী বই শিশুকিশোরদের দৃষ্টি আকর্ষন করতে সক্ষম হয়। ছোটদের জন্য বিভিন্ন ইংরেজী লেখকদের লেখা বইগুলো ছিলো বিক্রির তালিকায় শীর্ষে। প্রিয়নবীর ওপর লেখা সীরাত বইগুলোও পাঠকদের বিশেষভাবে নজর কাড়ে।
কোরআনের তাফসীর, হাদিস ও বিভিন্ন ইসলামিক বইয়ের পাশাপাশি বিভিন্ন সৃজনশীল বইও পাঠক ও ক্রেতাদের দৃষ্টি আকৃষ্ট করে। ইসলামী বইমেলার মিডিয়া পার্টনার হিসেবে ছিলো বৃটেনের বাঙ্গালী কমিউনিটির জনপ্রিয় বাংলা টিভি চ্যানেল চ্যানেল এস ও নতুন টিভি চ্যানেল ‘টিভি ওয়ান’।
বাংলা পত্রিকার মধ্যে বাংলাপোষ্ট ও দেশ পত্রিকা যথেষ্ট সহযোগিতা করে। প্রথম ও শেষ দিনে বৃটেনের বিভিন্ন টিভি চ্যানেল বইমেলাটি সম্প্রচার করেন। শেষদিন বিকালে বুকস্টলগুলোতে ছিলো পাঠকদের উপচে পড়া ভীড়। রেনেঁসা সাহিত্য মজলিস প্রতিদিন বিভিন্ন কবিতা, ইসলামী গান ও ছড়ার মাধ্যমে আগত পাঠক দর্শককে অনেক আনন্দ ও বিনোদন দিয়েছেন।
লন্ডন ইসলামী বইমেলার সার্বিক আয়োজনে ছিলেন ইন্টারন্যাশনাল চ্যারিটি প্রতিষ্ঠান আল কোরআন একাডেমী লন্ডন। ইসলামী বইমেলায় সার্বিকভাবে যারা সহযোগিতা করেন তাদের মধ্যে ছিলেন বিশিষ্ট কমিউনিটি ব্যক্তিত্ব আবদুল লতিফ, চ্যানেল এস টেলিভিশনের হেড অব চ্যারিটি মুজাহিদুল করিম, সরোয়ার রেজা, ইকবাল মনসুর আহমদ, আল কোরআন একাডেমী লন্ডনের ম্যানেজার আবদুল কাদের সুঘ্রাণ, আবদুল হামিদ ও আবদুল্লাহ আল মামুন। এছাড়া আবদুর রহমান, আসাদুজ্জামান মুকুল, ইমরান মুজাহিদ ও হাবিব খানও নানাভাবে মেলার সাথে সহযোগিতা করেছেন।
ইসলামী বইমেলার সমাপনী বক্তব্যে আল কোরআন একাডেমী লন্ডনের চেয়ারম্যান হাফেজ মুনির উদ্দীন আহমদ বলেন, এবারও আমরা ইসলামী বইমেলা সফলভাবে আয়োজন করতে পেরে মহান আল্লাহ তায়ালার শোকর আদায় করেন। তিনি কমিউনিটির সকল পেশার মানুষকে ধন্যবাদ জানান।
সবার সহযোগিতা না থাকলে এ মেলা কখনো সফল করা সম্ভব হতো না, তিনি সকল টিভি চ্যানেল ও বাংলা পত্রিকার সকল সাংবাদিক, কবি, লেখক, পাঠক, দর্শক ও ক্রেতাদেরও আন্তরিক ধন্যবাদ জানান। সকলের সহযোগিতা থাকলে আগামীতেও এভাবে বিলেতের মাটিতে ইসলামী বইমেলা আয়োজন করার আশাবাদ ব্যক্ত করে তিনি বইমেলার সমাপ্তি ঘোষণা করেন।