আলেপ্পোয় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর সবচেয়ে ভয়াবহ গণহত্যা চলছে

Syriaসিরিয়ার আলেপ্পোয় প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদের বাহিনী যে নির্মম অভিযান চালাচ্ছে, তাতে শহরটি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর সবচেয়ে ভয়াবহ গণহত্যা প্রত্যক্ষ করতে পারে বলে সতর্ক করে দিয়েছেন জাতিসংঘে নিযুক্ত ফ্রান্সের রাষ্ট্রদূত।
বিদ্রোহী নিয়ন্ত্রিত পূর্ব আলেপ্পো দখলে নিতে প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের বাহিনী গত চার মাস ধরে অবরোধ করে রাখার পর বোমা হামলা চালাচ্ছে। এই অবস্থা থেকে রক্ষা পেতে হাজার হাজার বেসামরিক লোকজন বাড়িঘর ছেড়ে পালাচ্ছে। কেননা বাশার বাহিনী বিদ্রোহীদের খাদ্য সরবরাহ বিচ্ছিন্ন করে দেয়ার চেষ্টা করছে।
মঙ্গলবার জাতিসংঘ জানিয়েছে, রাশিয়া সমর্থিত সিরিয়ান সেনাবাহিনী ও সহযোগী মিলিশিয়াদের অগ্রসর হওয়ার প্রেক্ষাপটে হামলায় হাজার হাজার মানুষ বাস্তুচুত হয়েছে। বাসিন্দারা নিরাপত্তার জন্য কোথায় যেতে হবে সে ব্যাপারে অনিশ্চয়তার মধ্যে রয়েছে। কেননা নিজেদের গুরুত্বপূর্ণ এলাকাগুলোতে নিয়ন্ত্রণের আপ্রাণ চেষ্টা চালাচ্ছে বিদ্রোহীরা। সরকার নিয়ন্ত্রিত এলাকাগুলোতে যে পরিমাণ লোকজন পালিয়ে গেছে বলে মনে করা হচ্ছে, বাস্তব সংখ্যা তার চেয়ে অনেক বেশি হবে।
গত বুধবার নিউইয়র্কে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে আলেপ্পোর মানবিক সঙ্কট নিয়ে জরুরি বৈঠক হওয়ার কথা। এই বৈঠককে সামনে রেখে জাতিসংঘে নিযুক্ত ফ্রান্সের দূত ফ্রাঁসোয়া ডিলেটার সতর্ক করে বলেছেন, ‘দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর বেসামরিক লোকদের ওপর সবচেয়ে বড় গণহত্যার বিষয়ে ফ্রান্স এবং তার মিত্ররা চুপ করে থাকতে পারে না।’
এ দিকে রাশিয়া দাবি করেছে, তারা অবরুদ্ধ এলাকা মুক্ত করার জন্য পূর্ব আলেপ্পোতে বিমান ও স্থল হামলা পরিচালনা করছে।
রাশিয়ান প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের মুখ্যপাত্র মেজর জেনারেল ইগোর কোনাসেঙ্কোভ বলেন, ‘সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো, ৮০ হাজার সিরিয়ানকে সেখান থেকে মুক্ত করা হয়েছে, এর মধ্যে কয়েক হাজার শিশুও রয়েছে। রাশিয়ান মানবসহায়তা কেন্দ্র থেকে অনেককে প্রথমবারের মতো পানি, খাদ্য, ও চিকিৎসাসেবা দেয়া হচ্ছে।’
রাশিয়া ও ইরানের সমর্থন নিয়ে সিরিয়ার বাহিনী বিদ্রোহী নিয়ন্ত্রিত পূর্বাঞ্চলের দিকে এগিয়ে যাওয়ার প্রেক্ষাপটে সেখানে ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয়ের অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। ইতোমধ্যে সেখান থেকে ৫০ লাখেরও বেশি বেসামরিক লোকজন পালিয়ে গেছেন।
পূর্ব আলেপ্পোর জনগণ তাদের জীবনের ব্যাপারে হতাশা প্রকাশ করেছেন। কারণ হামলাকারী সরকারি বাহিনী তাদের অঞ্চলের অনেক গভীরে ঢুকে পড়েছে। এতে সেখানে ভয়াবহ গণহত্যার ঘটনা ঘটার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। হোয়াইট হেলমেট নামে পরিচিত সিরিয়ার বেসামরিক প্রতিরক্ষা গ্রুপের উদ্ধার দলের একজন স্বেচ্ছাসেবক বলেছেন, কেবল বুধবার জিব আল-কুবা এলাকায় পলায়নরত লোকদের ওপর সরকারি বাহিনীর কামানের গোলাবর্ষণে অন্তত ৪৫ জন নিহত হয়েছে যাদের অধিকাংশই নারী ও শিশু।
সিরিয়ান অবজার্ভেটরি ফর হিউম্যান রাইটস জানিয়েছে, গত চার দিনে পূর্ব আলেপ্পো থেকে ৫০ হাজারেরও বেশি লোক পালিয়ে গেছে। গ্রুপটি জানায়, নগরীর পশ্চিম প্রান্ত থেকে ২০ হাজার এবং কুর্দি বাহিনীর নিয়ন্ত্রণাধীন এলাকা থেকে আরো ৩০ হাজার লোক পালিয়েছে।
দুই সপ্তাহ আগে সিরীয় বাহিনী বিদ্রোহীদের কাছ থেকে পূর্ব আলেপ্পো দখল করতে নতুন করে হামলা শুরু করার পর তারা নগরীর এ অংশের এক-তৃতীয়াংশেরও বেশি এলাকা দখল করে নিয়েছে।
আলেপ্পোয় কর্মরত আন্তর্জাতিক রেডক্রস ও রেডক্রিসেন্ট অবশ্য জানিয়েছে, গত ৭২ ঘণ্টায় পূর্ব আলেপ্পো থেকে ২০ হাজার লোক পালিয়ে গেছে। তাদের অনেকে সরকার নিয়ন্ত্রিত পশ্চিম আলেপ্পোয় গিয়ে আশ্রয় নিয়েছে।
আল-কাল্লাসেহ এলাকার বাসিন্দা মারওয়া তালেব বলেন, আমরা ভীতি ও আতঙ্কের মধ্যে রয়েছি। সিরীয় বাহিনী আমাদের কাছ থেকে মাত্র পাঁচ-ছয় কিলোমিটার দূরে রয়েছে। পূর্ব আলেপ্পোয় দীর্ঘকাল যাবত আড়াই লাখেরও বেশি মানুষ আটকা পড়ে আছে।

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button