সিআইএ এর এক কোটি ত্রিশ লাখ পৃষ্ঠার গোপন নথি অবমুক্ত

CIAতথ্য অধিকারের পক্ষে দুর্দান্ত লড়াইয়ের প্রেক্ষাপটে  প্রায় এক কোটি ত্রিশ লাখ পৃষ্ঠার গোপন নথি অবমুক্ত করতে বাধ্য হলো  মার্কিন কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা (সিআইএ)। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি জানিয়েছে, সিআইএ তাদের গোপনীয় সোয়া কোটির ওপর সুরক্ষিত নথি এই প্রথমবার সবার জন্য উন্মুক্ত করে দিয়েছে। তথ্য পাওয়ার অধিকার-সংক্রান্ত আন্দোলন কর্মীদের সুদীর্ঘ প্রয়াস এবং সিআইএর বিরুদ্ধে আদালতে মামলার প্রেক্ষাপটে এই গোপন নথিগুলো উন্মোচিত হলো।
ফাঁস হওয়া নথির মধ্যে রয়েছে, গোয়েন্দা ব্রিফিং, গবেষণা প্রতিবেদন, ইউএফও দর্শন ও বিভিন্ন মনোগত পরীক্ষার বিবরণ। রয়েছে, রিচার্ড নিক্সন ও জেরাল্ড ফোর্ডের সময়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালনকারী হেনরি কিসিঞ্জারের নথিগুলো। এছাড়া রয়েছে হাজারো পৃষ্ঠার গোয়েন্দা বিশ্লেষণ, বৈজ্ঞানিক গবেষণা ও উন্নয়নের বিবরণও রয়েছে এতে।
প্রকাশ হওয়া নথিগুলোর মধ্যে আরও রয়েছে ষড়যন্ত্র তত্ত্ববাদীদের বহুল চর্চিত স্টারগেট প্রোগ্রামের বিবরণ। তথাকথিত এই প্রোগ্রামের মাধ্যমে মানুষের অতীন্দ্রিয় ক্ষমতার বিষয়ে পরীক্ষা করা হয়েছিল বলে ধারণা করা হয়। নথিগুলোর মধ্যে সেলিব্রিটি সাইকিক উরি গেলারের ওপর ১৯৭৩ সালের পরীক্ষা-নিরীক্ষার দলিলপত্র পাওয়া যাবে। এতে সংরক্ষিত বিভিন্ন মেমো থেকে জানা যাবে সাইকিক পাওয়ার খাটিয়ে গেলার কীভাবে একটি আলাদা কক্ষে আবদ্ধ থাকা অবস্থাতেও পাশের রুমে বসে গবেষকদের আঁকা একটি ছবির হুবহু প্রতিলিপি তৈরি করেছিলেন সেই তথ্য। অন্যান্য বিষয়গুলোর মধ্যে রয়েছে ফ্লাইং সসারের বিবরণ ও অদৃশ্য কালি তৈরির উপকরণ ও বিবরণের নির্দেশনা।
অবমুক্ত করা নথির সম্পূর্ণ আর্কাইভে রয়েছে প্রায় ৮ লাখ ফাইল, যাতে পেজের সংখ্যা প্রায় ১৩ মিলিয়ন, বা এক কোটি ৩০ লাখ।
উল্লেখ্য, প্রকাশিত এসব তথ্যের বেশির ভাগই ১৯৯০ সালের পর থেকে সাধারণের জন্য উন্মোচিত রাখা ছিল। তবে কার্যক্ষেত্রে তথ্যভাণ্ডারে সাধারণের প্রবেশের সুযোগ সেভাবে ছিল না। কেননা, এসব তথ্য জানতে চাইলে একজন মানুষকে যে কোনো দিন সকাল ৯টা থেকে বিকেল সাড়ে ৪টার মধ্যে মেরিল্যান্ডে অবস্থিত ন্যাশনাল আর্কাইভের লাইব্রেরিতে সুরক্ষিত ৪টি কম্পিউটারের শরণাপন্ন হতে হতো।
মাডরক নামের এক তথ্য-অধিকারের গ্রুপ প্রায় দু’বছর আগে এসব তথ্যে সাধারণের সহজগম্য প্রবেশাধিকার চেয়ে সিআইএর বিরুদ্ধে মামলা করে। মাইক বেস্ট নামে আরেকজন সাংবাদিক ১৫ হাজার ডলারের একটি গণতহবিল গড়ে তোলেন এই দাবিকে কার্যকর রূপ দিতে। কর্তৃপক্ষের ওপর চাপ তৈরির লক্ষ্যে এ টাকা দিয়ে তিনি ন্যাশনাল আর্কাইভের ওই ৪টি কম্পিউটার থেকে এসব দলিলের একটি একটি করে প্রিন্ট আউট নিয়ে পাবলিক ডোমেইনে সেগুলো আপলোড করে দিতেন পুনরায়। এরই প্রেক্ষাপটে সিআইএ তাদের এই বিপুল পরিমাণ ফাঁস করতে বাধ্য হলো।

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন...
Close
Back to top button