হঠাৎ জঙ্গি তৎপরতা বৃদ্ধি : বিশেষজ্ঞরা যেভাবে দেখছেন
ফয়েজ উল্লাহ ভূঁইয়া
আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকারের মেয়াদের শেষ সময়ে হঠাৎ দেশে জঙ্গি তৎপরতার খবর নিয়ে নানা আলোচনা চলছে। নির্বাচনকালীন সরকার প্রশ্নে সরকার ও বিরোধী দলের মুখোমুখি অবস্থান এবং অস্থিতিশীল রাজনৈতিক পরিস্থিতির মধ্যে হঠাৎ এই বিষয়টি সামনে আসা নিয়েই বেশি আলোচনা হচ্ছে। অনেকে বিষয়টিকে সন্দেহ উদ্রেককারী বলে মন্তব্য করছেন।
নিরাপত্তা বিশ্লেষকদের কেউ কেউ বলছেন, সাংঘর্ষিক রাজনৈতিক পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে এবং আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে নিষ্ক্রিয় জঙ্গিরা মাথাচাড়া দিয়ে উঠে থাকতে পারে। কারো কারো মতে, এ সময়ে জঙ্গি প্রসঙ্গটি সামনে আনাটা পরিকল্পিত ও এর পেছনে আগামী জাতীয় নির্বাচনকেন্দ্রিক রাজনৈতিক উদ্দেশ্য রয়েছে।
কেউ কেউ জঙ্গি তৎপরতার খবরটিকে বর্তমান সরকারের আগের বক্তব্যের সাথে সাংঘর্ষিক আখ্যায়িত করে বলছেন, সরকার এত দিন জঙ্গি দমনে সফলতার দাবি করে আসছিল। কিন্তু সরকারের শেষ সময়ে এভাবে জঙ্গি সংগঠন ও আস্তানার সন্ধান তাদের আগের দাবির সাথে মিলছে না। গত আওয়ামী লীগ সরকারের শেষের দিকে সরকারের পক্ষ থেকেই দেশে জঙ্গি উত্থানের খবর প্রকাশের ঘটনা ও উদ্দেশ্যের সাথে এখনকার ঘটনার মিল খোঁজার চেষ্টা করছেন কোনো কোনো বিশ্লেষক।
তবে নিরাপত্তা বিশ্লেষকেরা বলছেন, বাংলাদেশে জঙ্গি তৎপরতার বিষয়টি দেশের নিরাপত্তার জন্য বড় কোনো হুমকির কারণ নয়। তাদের মতে, রাজনৈতিক সঙ্ঘাতময় পরিস্থিতির অবসান ঘটানোর মাধ্যমে গণতন্ত্রকে সুদৃঢ় ও সুশাসন নিশ্চিত করলে এ ধরনের জঙ্গি তৎরতা মাথাচাড়া দিয়ে ওঠার সুযোগ পেত না।
অনেক বিশ্লেষক ও ইসলামি চিন্তাবিদের মতে, শুরু থেকেই বাংলাদেশে জঙ্গি তৎপরতার ঘটনাগুলো রহস্যজনক ও প্রশ্নবিদ্ধ। জেএমবি, হরকাতুল জিহাদসহ যেসব সংগঠনের নামে ইতঃপূর্বে বাংলাদেশে বিভিন্ন নাশকতামূলক তৎপরতার ঘটনা ঘটেছে তার বেশির ভাগ ঘটনার ধরন ও এসব সংগঠনের শক্তি সামর্থ্যরে দিক বিবেচনায় এই রহস্য ঘনীভূত হয়। এখনো যেসব সংগঠনের নাম বলা হচ্ছে সেগুলোর নাম ও তৎপরতার বিষয় সাধারণ মানুষ একেবারেই অন্ধকারে। এসব সংগঠনের সাথে দেশে প্রতিষ্ঠিত কোনো ইসলামি রাজনৈতিক দল বা গোষ্ঠীর সম্পৃক্ততার সুনির্দিষ্ট প্রমাণ এখনো প্রতিষ্ঠিত করতে পারেনি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। বাংলাদেশে এই ধরনের জঙ্গি সংগঠনগুলোর জন্ম ও পৃষ্ঠপোষকতা নিয়ে নানা গুঞ্জনও রয়েছে।
ইসলামি চিন্তাবিদেরা এ প্রসঙ্গে বলছেন, ইসলামবিরোধী ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবেই বাংলাদেশে জঙ্গিবাদের জন্ম এবং ইসলাম ও ইসলামি শক্তিকে ঘায়েল করার জন্যই পরিকল্পিতভাবে জঙ্গি তৎপরতার খবর সামনে আনা হয়। এখনো সরকারের শেষ সময়ে আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে ইসলামপন্থীদের ঘায়েল করতেই এই প্রসঙ্গটি সামনে আনা হয়েছে বলে তাদের অভিমত। হঠাৎ করে আগস্ট মাসে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী পরস্পর কয়েকটি অভিযানে জঙ্গি গ্রেফতার ও জঙ্গি সংগঠনের খবর প্রকাশ করে, যা সংবাদমাধ্যমে ফলাও করে প্রচার হয়। নতুন করে ‘আনসার উল্লাহ বাংলা টিম ও বিইএম’ নামে দু’টি নতুন জঙ্গি সংগঠন আবিষ্কৃত হয়। এসব সংগঠন আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠন আলকায়েদার আদলে গঠিত বলে র্যাব বলছে। বলা হচ্ছে, তাদের উদ্দেশ্য সশস্ত্র বিপ্লবের মাধ্যমে ইসলামি হুকুমত কায়েম করা। সংগঠনগুলো সুযোগ বুঝে সরকারের শেষ সময়ে নানা রকমের নাশকতামূলক তৎপরতার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিল। বর্তমান সরকারকে হটিয়ে অন্য দলগুলোকে সাথে নিয়ে তাদের উদ্দেশ্য সফল করার পরিকল্পনা করছিল। মাঝে মধ্যেই আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কর্তৃক জঙ্গি আটক ও জঙ্গি আস্তানা আবিষ্কারের ঘটনার খবর প্রকাশিত হলেও বিগত কয়েক বছরে দেশে নাশকতামূলক জঙ্গি তৎপরতার ঘটনা ঘটেনি। তবে গত ফেব্রুয়ারি মাসে শাহবাগ আন্দোলনের সাথে জড়িত ব্লগার রাজিব হত্যা ও ব্লগার আসিফের ওপর হামলার ঘটনার সাথে আনসার উল্লাহ বাংলা টিম জড়িত ছিল বলে তদন্তকারীরা দাবি করছে। সম্প্রতি বরগুনায় পুলিশের অভিযানে গ্রেফতারকৃত মুফতি জসিম উদ্দিন আনসার উল্লাহ বাংলা টিমের প্রধান বলে পুলিশ জানায়। গত ১২ আগস্ট বরগুনা জেলার সদর উপজেলার দণি খাজুরতলা গ্রামের একটি বাড়ি থেকে মুফতি জসীম উদ্দিন ও তার ৩০ সহযোগী গ্রেফতার হন। ১৫ আগস্ট ঝালকাঠি জেলার নলছিটি উপজেলা থেকে আমীর উদ্দিন নামে জঙ্গি সংগঠনের ৯ সদস্যকে গ্রেফতার করে পুলিশ। ২২ আগস্ট র্যাব সদস্যরা বগুড়া থেকে জঙ্গি সন্দেহে গ্রেফতার করে মাওলানা সানাউল্লাকে। পুলিশের দেয়া তথ্য মতে, তার গঠিত সংগঠনের নাম বিইএম। ২৪ আগস্ট বগুড়ার একটি বাড়ি থেকে অস্ত্র, বিস্ফোরক ও বই উদ্ধার করা হয়। এটি বিইএমের আস্তানা ছিল বলে পুলিশ জানায়। এরপর গোয়েন্দা পুলিশ ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে ২৫ আগস্ট আরো ৯ জনকে গ্রেফতার করে। এরপরই আনসার উল্লাহ বাংলা টিমসহ নতুন জঙ্গি সংগঠনের গঠন ও কাজের ধরন সম্পর্কে পুলিশের পক্ষ থেকে বিভিন্ন তথ্য দেয়া হয়। গত চারদলীয় জোট সরকারের আমলে এবং গত আওয়ামী লীগ সরকরের আমলে বেশ কিছু নাশকতামূলক তৎপরতার ঘটনা ঘটে। তার মধ্যে জেএমবি কর্র্তৃক একযোগে ৬২টি জেলায় বোমা হামলার ঘটনা ছিল আলোচিত। ওই ঘটনার দায়ে জেএমবি প্রধান শায়খ আব্দুর রহমান ও বাংলা ভাইয়ের ফাঁসি কার্যকর হয় এবং অন্যান্য বেশ কিছু জেএমবি সদস্যের সাজা হয়। এর বাইরে একুশে আগস্টের গ্রেনেড হামলাসহ অন্যান্য নাশকতামূলক ঘটনার পেছনেও হরকাতুল জিহাদ নামক সংগঠনের জড়িত থাকার অভিযোগ করা হলেও এখন পর্যন্ত কোনো ঘটনার বিচার সম্পন্ন হয়নি।
মে. জে. ইব্রাহিম প্রখ্যাত নিরাপত্তা বিশ্লেষক ও বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব:) সৈয়দ মো: ইব্রাহিম বীর প্রতীকের কাছে এই ব্যাপারে জানাতে চাইলে তিনি বলেন, জঙ্গিবাদের কারণে রাষ্ট্রের নিরাপত্তার প্রতি বড় রকমের কোনো হুমকি সৃষ্টি হয়েছে বলে আমি মনে করি না। আমার পর্যবেক্ষণ মতে, বাংলাদেশের মূল রাজনৈতিক ধারার মধ্যে কোনো প্রকারের উগ্রবাদ বা জঙ্গিবাদী তৎপর রাজনীতির কোনো সম্পর্ক নেই। সরকারের শেষ সময়ে জঙ্গিবাদের বিস্তারের দিক সামনে আসার বিষয়ে তিনি বলেন, নির্বাচনে সহায়তা লাভের জন্য এটা পশ্চিমা বিশ্বকে দেখানোর উদ্দেশ্যেও হতে পারে। এ ব্যাপারে তিনি বলেন, ভারতের অন্তত ১০টি রাজ্যে বামপন্থী মাওবাদী যোদ্ধারা রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে সশস্ত্র যুদ্ধ চালাচ্ছে। তাদের কেউ জঙ্গি বলছে না। বাংলাদেশের পার্বত্য চট্টগ্রামে শান্তিবাহিনীর অবশিষ্টাংশ সারেন্ডার করা হয়নি এমন অস্ত্র দিয়ে অলিখিত অঘোষিত যুদ্ধ চালাচ্ছে রাষ্ট্র ও সরকারের বিরুদ্ধে এবং জনগণের বিরুদ্ধে। তাদের কেউ জঙ্গি বলছে না। সরকারের মতে, বাংলাদেশের কয়েকটি জায়গায় কিছু কিছু লোক বা গোষ্ঠী আবিষ্কৃত হয়েছে, যারা একটি সুনির্দিষ্ট ডানপন্থী মতবাদে বিশ্বাস করে তারা সরকারের মতে, জঙ্গি হয়ে গেছে। বস্তুত পৃথিবীতে বিশেষ করে পাশ্চাত্য প্রভাবিত পৃথিবীতে মুসলমানদের কট্টর অংশকে বা চরমপন্থী অংশকে জঙ্গি বলা একটি সহজ ও বহুল প্রচলিত অভ্যাস। বাংলাদেশ এর ব্যতিক্রম নয়। বর্তমান সরকারের মতে, জঙ্গিবাদ নির্মূল হয়ে গেছে। কিন্তু হঠাৎ করে দুই-তিন মাস ধরে আবার তারা আবিষ্কৃত হচ্ছে। মনে হয় পাশ্চাত্য বিশ্বের দিকেই এই সরকার ইচ্ছাকৃতভাবে একটি ইশারা দিতে চায়। ইশারা এইরূপ দেখ, জঙ্গিবাদ আবার মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। ওদেরকে শায়েস্তা করা দরকার। তা না হলে তোমাদের কাক্সিত যে উদার গণতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা ও পুঁজিবাদ রক্ষা হবে না। আমরা আওয়ামী লীগই এই কাজ করতে পারি। ওরা বিরোধী দল এসব কাজ করবে না। আমাদের আগামী নির্বাচনে জয়ী হতে সাহায্য করো। তাহলে তোমাদের উপকার হবে।
সৈয়দ ইব্রাহিম বলেন, আনুমানিক ১৩-১৪ বছর আগে প্রেসিডেন্ট কিনটন ঢাকা এসেছিলেন। ঢাকা থেকে সাভার স্মৃতিসৌধে তাকে জঙ্গিদের ভয় দেখিয়ে যেতে দেয়া হয়নি।
ব্রিগেডিয়ার সাখাওয়াত প্রখ্যাত নিরাপত্তা বিশ্লেষক সাবেক নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সাখাওয়াত হোসেন এ ব্যাপারে বলেন, জঙ্গিবাদ ধর্মভিত্তিক বা অন্য মতবাদভিত্তিকও হতে পারে। এটাকে আমরা টেরোরিজম বা সন্ত্রাসবাদ বলি। তিনি বলেন, সরকার জঙ্গি দমন করে ফেলেছে বলে আগে দাবি করে থাকতে পারে। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে এটা পুরোপুরি দমন করা সম্ভব নয়। আমরা দেখেছি বিগত জোট সরকারের আমলেই জঙ্গিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া শুরু হয়। এভাবে যখন ব্যবস্থা নেয়া হয় তখন জঙ্গিরা নিষ্ক্রিয় থাকার পন্থা অবলম্বন করে। কিন্তু বিশেষ সময়, বিশেষ ঘটনাকে কেন্দ্র করে আবার কার্যক্রম শুরু করে। এখন সামনে নির্বাচন। দেশে রাজনৈতিক সঙ্কট চলছে। সঙ্কট ঘনীভূত হচ্ছে। এই অবস্থায় তৎপরতা বেড়ে থাকতেই পারে।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা এই সময়ে জঙ্গি উত্থান নিয়ে সন্দেহ সংশয় কিংবা ভিন্ন বিশ্লেষণ করতে পারেন। কিন্তু এটা সত্য যে, যারা ধরা পড়ছে তারা নিজেরা তৎপরতার সাথে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করছে। তিনি বলেন, জঙ্গি তৎপরতা একটি আন্তর্জাতিক বিষয়। সেই জঙ্গিপনার আন্তর্জাতিক প্রয়াস এখানে নেই সেটা আমরা বলতে পারব না। সারা বিশ্বে ধর্মীয় চেতনায় জঙ্গি উত্থাপনের ঘটনা ঘটছে। পুরো বিষয়টি মনিটরিংয়ের মধ্যে আছে। কাজেই প্রসঙ্গটিকে এড়িয়ে যাওয়া বা অস্বীকার করার কোনো সুযোগ নেই। জাতীয় নিরাপত্তার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বাংলাদেশে নিরাপত্তার বিষয়টি হচ্ছে রিঅ্যাকটিভ, প্রোঅ্যাকটিভ নয়। ঘটনা ঘটলেই নিরাপত্তার বিষয় সামনে আনা হয়।
তিনি বলেন, নানা কারণে আমাদের রাষ্ট্র দুর্বল। এ জন্য রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তাও দুর্বল। সব কিছুতেই রাজনীতিকরণ আছে। সব অর্গানাইজেশনে তা আছে। যার কাজ সে যেন করতে পারে সেই ধরনের ফ্রিডম দেয়া হচ্ছে না।
ড. বদিউল আলম সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার এ ব্যাপার বলেন, হঠাৎ করে জঙ্গি উত্থানের বিষয়টি সন্দেহের উদ্রেক করে। কারণ এই সরকার জঙ্গি দমনে সফল হয়েছে দাবি করে আসছিল। আন্তর্জাতিক মহলকে তারা এই দাবির কথা এত দিন বলে এসেছে। কিন্তু এখন দেশের সঙ্ঘাতময় রাজনৈতিক পরিস্থিতি যখন; তখন আবার দেখা যাচ্ছে দেশে জঙ্গি উত্থান ঘটছে।
তিনি বলেন, দেশে জঙ্গির অস্তিত্ব আছে এতে সন্দেহ নেই। জঙ্গিবাদের উর্বর ক্ষেত্র হিসেবে প্রস্তুত করছি আমরা। সঙ্ঘাতময় রাজনীতি, মানুষকে তার অধিকার থেকে বঞ্চিত করা, মানুষের মধ্যে বৈষম্য ইত্যাদি মানুষকে প্রতিবাদী করে। ফলে জঙ্গিবাদ মাথাচাড়া দিয়ে ওঠার পরিস্থিতি সৃষ্টি হচ্ছে। কারণ যারা জঙ্গিবাদী তারা তো মানুষকে এসব সমস্যা থেকে মুক্তির আশ্বাস দেয়। তিনি বলেন, সঙ্ঘাতময় রাজনীতির অবসান ঘটাতে হবে। এ জন্য সংলাপের কোনো বিকল্প নেই। সংলাপ শুধু দুই দলের মধ্যে নয়, জাতীয় সংলাপ দরকার। জাতীয় সনদ স্বাক্ষর করতে হবে। তাহলেই নির্বাচন সুষ্ঠু হওয়ার সম্ভাবনা সৃষ্টি হবে। নির্বাচন-পরবর্তী অন্যান্য সমস্যারও সমাধান করা সম্ভব হবে।
মাওলানা মুহিউদ্দীন বিশিষ্ট ইসলামি চিন্তাবিদ মাসিক মদীনা সম্পাদক মাওলানা মুহিউদ্দীন খান বলেন, ইসলামি হুকুমত কায়েমের জন্য কথিত জঙ্গিবাদীরা পরিকল্পনা করছিল বলে যে কথা বলা হচ্ছে তার কোনো ভিত্তি নেই। জঙ্গিবাদ ইসলাম প্রতিষ্ঠার পন্থা নয়।
তিনি বলেন, আমরা মরহুম খতিব মাওলানা উবায়দুল হকসহ সারা দেশে ঘুরে বেড়িয়েছি। আমাদের চোখে জঙ্গিবাদের বিস্তার ধরা পড়েনি। কিন্তু মাঝে মধ্যেই কোথা থেকে জঙ্গিবাদের অস্তিত্বের খবর আমরা দেখতে পাই। আসলে জঙ্গিবাদের পুরো বিষয়টাই বাংলাদেশে পরিকল্পিত এবং ইসলামপন্থীদের সাইজ করার কৌশল হিসেবে সময়মতো ব্যবহার করা হয়। এখনো হঠাৎ করে জঙ্গিবাদের বিষয় সামনে আনার উদ্দেশ্য হচ্ছে আমেরিকাসহ বিশ্বকে জানানো যে বাংলাদেশে ইসলামপন্থীরা জঙ্গিপনায় লিপ্ত। তাদের শায়েস্তা করা দরকার। এর প্রধান উদ্দেশ্য যাতে ইসলামপন্থীরা আগামী নির্বাচনে প্রভাব বিস্তার করতে না পারে।
মাওলানা আব্দুল জব্বার বাংলাদেশ কওমি মাদরাসা শিক্ষা বোর্ডের (বেফাক) মহাসচিব বিশিষ্ট ইসলামি চিন্তাবিদ মাওলানা আব্দুল জব্বার এ ব্যাপারে বলেন, বাংলাদেশে জঙ্গিবাদের উত্থান ষড়যন্ত্রের অংশ। এর উদ্দেশ্যই হচ্ছে, এ দেশে কওমি মাদরাসাভিত্তিক শিক্ষাকে ধবংস করার মাধ্যমে ইসলামি শিক্ষার দ্বারকে রুদ্ধ করে দেশকে ইসলামশূন্য করা। তিনি বলেন, হেফাজতে ইসলামের নেতৃত্বে ঈমান আকিদাভিত্তিক যে আন্দোলন তা মোকাবেলায় ব্যর্থ হয়ে এখন কওমি আলেমসহ আলেম-ওলামা ও ইসলামপন্থীদের বিতর্কিত ও ক্ষতিগ্রস্ত করার উদ্দেশ্যেই জঙ্গি প্রচারণা চালানো হতে পারে।
তিনি বলেন, যাদের ধরা হচ্ছে বা যেসব সংগঠনের নাম বলা হচ্ছে সেগুলো যদি সত্যিও হয় তবে তা দেশী-বিদেশী ষড়যন্ত্রকারীদের সৃষ্ট। এর সাথে এ দেশের আলেম-ওলামাদের কোনো সম্পর্ক নেই। ইসলাম এই ধরনের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে ইসলাম প্রতিষ্ঠার চেষ্টাকে সমর্থন করে না।
তিনি বলেন, যেখানে ইসলামি দলগুলো নিয়মতান্ত্রিক পন্থায় ইসলাম প্রতিষ্ঠার আন্দোলন করছে সেখানে কিছু জনসমর্থনহীন বিচ্ছিন্ন লোক কিছু অস্ত্র আর গোলাবারুদ মজুদ করে বিপ্লব করে ইসলাম প্রতিষ্ঠা করবে এটা হাস্যকর ব্যাপার।