ট্রাম্পের কাছে থেরেসা’ই প্রথম
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে যুক্তরাষ্ট্র সফরে গেছেন ব্রিটিনের প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে। বিশ্বের প্রথম নেতা হিসেবে ট্রাম্পযুগের হোয়াইট হাউসে অভ্যর্থনা পাচ্ছেন তিনি। অনেক বিষয়ে দুই নেতার মধ্যে আলোচনা হলেও প্রাধান্য পাবে পররাষ্ট্রনীতি। তারা বিশ্বকে নতুনভাবে সাজানোর পরিকল্পনা নিচ্ছেন।
বৃহস্পতিবার যুক্তরাষ্ট্রে পৌঁছান মে। শুক্রবার তিনি হোয়াইট হাউসে যান। সেখানে প্রেসিডেন্টের কার্যালয় ওভাল অফিসে তাকে স্বাগত জানান ট্রাম্প। একান্ত বৈঠকের পর বিকালেই দু’জন যৌথভাবে সংবাদ সম্মেলন করেন।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে নতুন আঙ্গিকের পররাষ্ট্রনৈতিক সম্পর্ক চাইছেন যুক্তরাষ্ট্র সফররত ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে। ‘নতুন ধারা’র দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে আবারো বিশ্বে ইঙ্গো-মার্কিন নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন দেখছেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী। হোয়াইট হাউসের বৈঠকে থেরেসা মে ট্রাম্পকে তার স্বপ্ন-বার্তা দেবেন। বিভিন্ন আন্তর্জ্তাতিক সংবাদমাধ্যম এ খবর নিশ্চিত করেছে।
এরই মধ্যে বুশ-ব্লেয়ারের মধ্যপ্রাচ্য নীতিকে ব্যর্থ উল্লেখ করেছেন থেরেসা মে। তাদের দু’জনের ক্ষমতায় আসার প্রেক্ষাপটও প্রায় একই রকম আর তা হচ্ছে অনেকটা আচমকাই জনমতের বিপরীতে তারা ক্ষমতায় আসীন হন। একই সঙ্গে তারা তাদের নিজ নিজ দেশে আমূল পরিবর্তনের অঙ্গীকার করেছেন এবং তাদের উভয়ের নেতৃত্বের কারণে বর্তমান পশ্চিমা জোটের মিত্ররা গত কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে গুরুতর পরিচয় সঙ্কটের সম্মুখীন হয়েছেন। এই দুই নেতার মাঝে অনেক মিল অমিল থাকা সত্ত্বেও তারা সুনির্দিষ্ট কিছু পরিকল্পনা নিয়ে এগুচ্ছেন।
পেনসিলভানিয়া অঙ্গরাজ্যের ফিলাডেলফিয়ায় বৃহস্পতিবার রিপাবলিকান আইন প্রণেতাদের এক সম্মেলনে যুক্তরাষ্ট্র-ব্রিটেন দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের নানা দিক নিয়ে কথা বলেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী থেরেসা। অভ্যন্তরণীণ হস্তক্ষেপের মধ্য দিয়ে কোনো দেশের সার্বভৌমত্ব ক্ষুণ্ন করা এবং আগ্রাসী নীতির বাস্তবায়নকে ভুল নীতি বলছেন তিনি। থেরেসা মে সাংবাদিকদের বলেন, বিশ্বকে ‘আমাদের মতো করে সাজাতে’ স্বাধীন দেশগুলোর অভ্যন্তরীণ বিষয়ে ব্রিটেন ও আমেরিকা যে হস্তক্ষেপ করত, তার দিন শেষ হয়ে গেছে।
ব্রিটিশ-মার্কিন ‘বিশেষ সম্পর্কের’ কথা উল্লেখ করে মে বলেন, আশা করি, বিশ্বে নতুন করে নিজেদের ভাবমূর্তি গড়ে তোলার ক্ষেত্রে ব্রিটেন ও যুক্তরাষ্ট্র আর কখনো কোনো সার্বভৌম দেশে আগ্রাসন চালাবে না। তিনি মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন-ব্রিটিশ আগ্রাসনকে ‘ব্যর্থ পররাষ্ট্রনীতি’ উল্লেখ করে তাতে আর প্রত্যাবর্তন না করার আহ্বান জানান।
তবে ইঙ্গো-মার্কিন নেতৃত্ব পুনপ্রতিষ্ঠার স্বপ্নও দেখছেন থেরেসা মে। বলেছেন, এই দুই শক্তির উচিত যথারীতি বিশ্বকে নেতৃত্ব দেয়া এবং নতুন নতুন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করা। সিরিয়া সংকট ও আইএসের মতো জঙ্গি গোষ্ঠীর উত্থানকে তিনি চ্যালেঞ্জ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। হস্তক্ষেপের বিরুদ্ধে বললেও এইসব মোকাবেলায় শেষ পর্যন্ত হস্তক্ষেপের পক্ষে সম্মতি দিয়েছেন তিনি।
ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী সতর্ক করে বলেন, বিশ্বের নেতৃত্তকে আবারো কয়ায়ত্ত করতে ‘অতীতের ব্যর্থ নীতি অনুসরণ করলে চলবে না। তবে প্রকৃত হুমকি আসলে সেটিকে অবশ্যই প্রতিহত করতে হবে এবং আমাদের স্বার্থ রক্ষার প্রয়োজন হলে হস্তক্ষেপ করতে হবে।
ব্রেক্সিটের পর ‘সার্বভৌম’ যুক্তরাজ্য তার অতীতের বন্ধুদের সঙ্গে সম্পর্ক পুনরুদ্ধার করতে চায় বলে জানান থেরেসে মা। তিনি এ বিষয়ে কথা বলার জন্যই যুক্তরাষ্ট্র সফর করছেন। শুক্রবার প্রথম বিশ্বনেতা হিসেবে ট্রাম্পের সঙ্গে সাক্ষাত করবেন তিনি। ব্রেক্সিট পরবর্তী বাণিজ্য, নিরাপত্তা, গোয়েন্দা সংস্থাসহ আরো বেশ কিছু বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র এই সফরে আলোচনা করবেন থেরেসা মে।
প্রথম বিদেশি নেতা হিসেবে ট্রাম্পের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে যাচ্ছেন থেরেসা। দুই নেতার প্রথম বৈঠকেই আসতে পারে বাণিজ্য চুক্তির ঘোষণা। থেরেসা মে’র এই সফরকে ব্রেক্সিট পরবর্তী যুক্তরাজ্যের জন্য ‘স্মার্ট মুভ’ বলে জানিয়েছে বিশেষজ্ঞরা।
উল্লেখ্য, সদ্য সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা ব্রেক্সিট বা ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে ব্রিটেনের বেরিয়ে যাওয়ার বিরোধী ছিলেন। ব্রেক্সিটের বিপক্ষে তিনি যুক্তরাজ্য সফরে প্রচারণাও চালিয়েছিলেন। অপরদিকে, ডোনাল্ড ট্রাম্প ব্রেক্সিটের সমর্থক এবং তিনি একাধিক বক্তব্যে ব্রিটেনের সঙ্গে পৃথক চুক্তি করতেও আগ্রহী বলেও জানিয়েছেন।
মার্কিন সংবাদমাধ্যম এবিসি নিউজের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক আরো সুসংহত করার প্রয়াস হিসেবেই এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হচ্ছে। তবে এই বৈঠক যে কেবল ‘সৌজন্য সাক্ষাৎ’ থাকছে না, তা নিশ্চিত করেই বলা যায়। নারী, মেক্সিকোর অভিবাসী ইস্যু, মুসলিম ইস্যু, ন্যাটো এবং তার নির্বাচনি প্রতিশ্রুতি ‘সবার আগে আমেরিকা’ নিয়ে ট্রাম্পের বিতর্কিত মন্তব্যের কারণে আলোচনায় দ্বিপাক্ষিক কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রাধান্য পেতে পারে।