অনুচ্ছেদ ৫০ ও ব্রিটেনের ইইউ বিচ্ছেদ
নতুন এক পথে যাত্রা করেছে ব্রিটেন। প্রধানমন্ত্রী তেরেসা মে’র আনুষ্ঠানিক স্বাক্ষরের মধ্য দিয়ে শুরু হয়ে গেছে ব্রেক্সিট প্রক্রিয়া। সক্রিয় হয়ে গেছে লিসবন চুক্তির অনুচ্ছেদ ৫০। এর ফলে ব্রিটেনের সামনে এখন দু’বছর সময়। এর মধ্যেই ইউরোপীয় ইউনিয়নের কাছ থেকে তাদেরকে যতটুকু সম্ভব সুবিধা আদায় করে নিতে হবে। তারপর দৃশ্যত ২০১৯ সালের ২৯শে মার্চ ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে ব্রিটেনের বিচ্ছেদ কার্যকর হবে।
এই যে অনুচ্ছেদ ৫০ এটি আসলে কি এ নিয়ে অনেকের মনে সংশয় থাকতে পারে। অনুচ্ছেদ ৫০ আসলে একটি পরিকল্পনা, যা ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত কোনো দেশ ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে আসতে গেলে অনুসরণ করতে হয়। লিসবন চুক্তির অধীনে এই অনুচ্ছেদটি সৃষ্টি করা হয়েছিল। ওই লিসবন চুক্তি স্বাক্ষর করেছিল ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত সব দেশই। ফলে ২০০৯ সালে তা আইনে পরিণত হয়। এই চুক্তি হওয়ার আগে কোনো দেশ ইউরোপীয় ইউনিয়ন ছাড়তে চাইলে তাদের সামনে কোনো আনুষ্ঠানিক বাধ্যবাধকতা ছিল না। এই চুক্তির অধীনে ৫০ নম্বর অনুচ্ছেদটি খুবই ছোট্ট। তাতে রয়েছে মাত্র পাঁচটি প্যারাগ্রাফ। তাতে বলা হয়েছে, যেকোনো সদস্য ইউরোপীয় ইউনিয়ন ত্যাগ করার সিদ্ধান্ত নিতে পারে। তবে তা অবশ্যই ইউরোপীয়ান কাউন্সিলকে জানাতে হবে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন ছাড়ার ক্ষেত্রে সমঝোতায় যেতে হবে। এ সমঝোতার জন্য দু’বছর সময় দেয়া হবে। যদি সব পক্ষ এ সময় বাড়াতে অসমর্থ হয় তাহলে তাহলে নির্ধারিত দু’বছর শেষে ইউরোপীয় ইউনিয়ন ত্যাগের সিদ্ধান্ত কার্যকর হবে। যেকোনো বিচ্ছেদ বিষয়ক চুক্তি অবশ্যই ভাল সংখ্যাগরিষ্ঠতায় অনুমোদন হতে হবে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাকি ২৭টি সদস্য রাষ্ট্রের মধ্যে শতকরা ৭২ ভাগের সমর্থন থাকতে হবে এতে। গত বছর জুনে ইউরোপীয় ইউনিয়ন ছাড়ার প্রশ্নে গণভোট হয়েছে বৃটেনে। বৃটিশরা এতে তাদের সায় দিয়েছে। কিন্তু তারপরও অনুচ্ছেদ ৫০ সক্রিয় করতে দীর্ঘ বিলম্ব হয়েছে। প্রশ্ন থেকে যায় কেন? এক্ষেত্রে আইনি জটিলতা ছিল। আদালতে চ্যালেঞ্জ জানানো হয়েছে সরকারের উদ্যোগকে। সরকার চেয়েছিল পার্লামেন্টকে পাশ কাটিয়ে অনুচ্ছেদ ৫০ সক্রিয় করতে। কিন্তু সেই উদ্যোগে চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়ান গিনা মিলার নামের এক ব্যবসায়ী নারী। তিনি ও অন্য এক নারী সরকারের এ উদ্যোগকে চ্যালেঞ্জ জানালে আদালতে হেরে যান প্রধানমন্ত্রী তেরেসা মে। আদালত অনুচ্ছেদ ৫০ সক্রিয় করার ক্ষেত্রে অবশ্যই পার্লামেন্টের অনুমোদন নিতে রায় দেয়। অবশেষে পার্লামেন্ট সেই অনুমোদন দিয়েছে এই মার্চে। ওদিকে প্রধানমন্ত্রী তেরেসা মে গত বছর অক্টোবরেই ঘোষণা দিয়েছিলেন এই মার্চ মাস শেষ হয়ে যাওয়ার আগেই তিনি অনুচ্ছেদ ৫০ সক্রিয় করবেন। পার্লামেন্টের অনুমোদন পেয়ে তিনি ঠিক সেই কাজটিই করলেন।