সমঝোতা না হলে সংঘাত অনিবার্য : রুশানারা আলী এমপি
বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে বৃটিশ শ্যাডো -ডিপার্টমেন্ট ফর ইন্টারন্যাশনাল ডেভোলাপমেন্ট- (ডিএফআইডি) মিনিষ্টার রুশানারা আলী এমপি বলেছেন, প্রধান দুই রাজনৈতিক দলের মধ্যে সমঝোতা না হলে বাংলাদেশে সংঘাত অনিবার্য। দেশের সাধারণ মানুষের কথা চিন্তা করে অন্তত দুই দলের একটি সমঝোতায় আসা প্রয়োজন।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সকল দলের অংশগ্রহণে ও দেশে বিদেশে গ্রহণযোগ্য একটি নির্বাচনের ব্যবস্থা করা বর্তমান সরকারের দায়িত্ব। প্রধান দুই দলের প্রতি ইতিবাচক সংলাপের আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, বৃটেন আশা করে সংলাপের মাধ্যমে গ্রহণযোগ্য ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের একটি পথ বের হবে।
স্বনামধন্য একটি দৈনিকের সঙ্গে একান্ত সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেন রুশানারা আলী।
রুশানারা আলী বলেন, বাংলাদেশে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও গণতন্ত্র খুবই জরুরী। কিছুক্ষেত্রে ব্যতিক্রম ছাড়া বাংলাদেশ অনেক দূর এগিয়ে গেছে। আরও এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে অমিত সম্ভাবনার বাংলাদেশকে। নারী শিক্ষার উন্নয়ন, দারিদ্র বিমোচনসহ নানা প্রকল্পে বৃটেনের উন্নয়ন সাহায্যের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, বৃটেন
বাংলাদেশের অর্থনৈতিক, সামাজিক, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে উন্নয়ন দেখতে চায়। স্থিতিশীল রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও সঠিক গণতন্ত্রের চর্চা না হলে বাংলাদেশ অনেক পিছনে পড়ে থাকবে বলেও মন্তব্য করেন রুশানারা আলী।
বাংলাদেশে নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রসঙ্গে রুশানারা আলী বলেন, বাংলাদেশের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ইতিহাস দেশে বিদেশে প্রশংসনীয়। শুধুমাত্র গত সেনাশাসিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া বাকি সবগুলো তত্ত্বাবধায়ক সরকারই মডেল হিসেবে কাজ করেছে। অন্যান্য দেশেও তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতিতে নির্বাচন হচ্ছে। সম্প্রতি পাকিস্থানে এই পদ্ধতিতে নির্বাচন করে সফলতা এসেছে। তিনি বলেন, বর্তমান সময়ে জরুরী হচ্ছে নির্বাচনের ব্যাপারে বড় দুই দলের একটি সমঝোতায় আসা, যা দেশে বিদেশে গ্রহণযোগ্য হয়। আর তা না হলে নির্বাচনের সময় বড় ধরণের ঝুঁকি থেকে যাবে। বর্তমান রাজনৈতিক সংকটের জন্য প্রধান দুই দলই কমবেশি দায়ী, তাই দুই দলকেই আলাপ আলোচনার ভিত্তিতে একটি সমাধানে আসা উচিত বলে মনে করেন তিনি।
বাংলাদেশে ওয়েস্টমিনিষ্টার ষ্টাইলে নির্বাচনের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে রুশানারা আলী বলেন, শুধুমাত্র গত তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপক্ষে নির্বাচনের জন্য অতীতে ৩ মাসের তত্ত্বাবধায়ক সরকারগুলো উপযুক্ত, নিরাপদ ও নিরপেক্ষ পদ্ধতি হিসেবে প্রমাণিত হয়েছে। আমি মনে করি তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিষয়ে বাংলদেশের মানুষের মনে বিশ্বাসযোগ্যতা আছে, যা সেনাসমর্থিত বা অন্যান্য পদ্ধতির সরকারের ক্ষেত্রে নেই। তাই নির্বাচনের পূর্বে নিরপেক্ষতার বিষয়টি পরিস্কার হতে হবে।
বাংলাদেশে ধর্মীয় উগ্রপন্থার বিষয়ে তিনি বলেন, বৃটেনসহ পৃথিবীর সব দেশেই ধর্মীয় উগ্রপন্থীদের সমস্যা রয়েছে। বাংলাদেশ এক্ষেত্রে ইউনিক কিছু নয়। আমাদের এখানে অনেকে আছে যারা ইসলামকে রাজনীতির মধ্যে টেনে নিয়ে আসে। সম্প্রতি নিহত বৃটিশ সেনাসদস্য লি রাগবির কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ইসলামকে ব্যবহার করে এসব করা কখনোই গ্রহণযোগ্য নয়, এটি ভুল। পাকিস্থান, আফগানিস্থান ও ইন্দোনেশিয়াসহ বিভিন্ন দেশে এই সমস্যা রয়েছে, আমাদের মনে রাখতে হবে উগ্রপন্থীরা কখনো কোন ধর্মের প্রতিনিধিত্ব করে না। উগ্রপন্থার কারণে আমাদের ধর্মের ক্ষতি হয়। তাই এ ধরণের লোক ও উগ্রপন্থার বিরুদ্ধে আমাদের সোচ্চার হতে হবে। রোশনারা আলী বলেন, মানুষ যাতে শান্তিতে ও স্বাধীনভাবে তাদের ধর্ম পালন করতে পারে, সংস্কৃতি চর্চা করতে পারে আমাদের সেদিকে নজর দিতে হবে। একজন বৃটিশ বাঙালি হিসেবে, একজন মুসলিম মহিলা হিসেবে আমিও আশা করি আমার অধিকার যেন সমুন্নত থাকে।
যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রসঙ্গে রুশানারা আলী এমপি বলেন, এটি একটি জাতীয় ইস্যূ, তাই এ বিচার প্রক্রিয়াটি স্বাধীন ও আন্তর্জাতিক মানের করার জন্য বৃটেন বাংলাদেশকে অনুরোধ জানিয়েছিল, কিন্তু বাস্তবে তা হয়নি। বাংলাদেশের উচিত যুদ্ধাপরাধীদের বিচার সঠিক পদ্ধতি ও আন্তর্জাতিক মানের করা। তিনি বলেন, আমরা এই বিষয়গুলো বাংলাদেশকে অবগত করা ছাড়া আর কিছু করতে চাই না, কারণ আমরা বাংলাদেশ শাসন করি না। অতীতের সকল সংঘাত ভুলে গিয়ে বাংলাদেশের উন্নয়নে সবাইকে এগিয়ে যাবার আহ্বান জানান তিনি।
২০১০ সালের মে মাসে অনুষ্ঠিত বৃটেনের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বেথনালগ্রীন ও বো আসন থেকে এমপি নির্বাচিত হয়ে ইতিহাস গড়েন রোশানারা আলী। প্রথম বৃটিশ বাংলাদেশী এমপি হিসেবে ইতিহাসের পাতায় নাম লেখান অক্সফোর্ডের ডিগ্রীধারী সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলার বুরকী গ্রামের মেয়ে রোশানারা। ইতিমধ্যে তিনি এমপি হিসেবে সফলভাবে তিন বছর পূর্ণ করেছেন।