অভিন্ন প্রশ্নপত্রে দাওরায়ে হাদিসের পরীক্ষা
নূর মোহাম্মদ: সদ্য স্বীকৃতিপ্রাপ্ত দাওরায়ে হাদিসের পরীক্ষা আগামী ১৫ থেকে ২৫শে মে’র মধ্যে অনুষ্ঠিত হবে। এই পরীক্ষা নেয়ার জন্য ১১ সদস্যের একটি পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক উপ-কমিটি করা হয়েছে। বেফাক থেকে ৬ জন এবং অন্য ৫ বোর্ড থেকে ১ জন হারে মোট ১১ সদস্যবিশিষ্ট এই উপ-কমিটি পরীক্ষার সব কার্যক্রম সম্পন্ন করবেন। গওহরডাঙ্গা মাদরাসার মাওলানা শামসুল হককে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক হিসেবে মনোনীত করা হয়েছে। রোববার চট্টগ্রামের দারুল উলুম হাটহাজারী মাদরাসার মহাপরিচালকের কার্যালয়ে দাওরায়ে হাদিসের সনদকে মাস্টার্স (ইসলামিক স্টাডিজ এবং আরবি)-এর সমমান প্রদান করে প্রজ্ঞাপন জারির পর প্রথম বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশ (বেফাক) সভাপতি আল্লামা শাহ আহমদ শফী। প্রথম বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ‘‘আল-হাইয়াতুল উলইয়া লিল জামিয়াতিল কওমিয়া বাংলাদেশ” নামে সর্বোচ্চ সংস্থার আওতায় দাওরায়ে হাদিসের পরীক্ষা গ্রহণ ও সনদ বিষয়ক কার্যক্রম পরিচালিত হবে। চলতি শিক্ষাবর্ষ থেকেই অভিন্ন প্রশ্নপত্রে একসঙ্গে সকল বোর্ডের আওতাধীন মাদরাসাসমূহে দাওরায়ে হাদিসের পরীক্ষা গ্রহণ করবে। এই কমিটি তাদের কার্যক্রম পরিচালনার জন্য সরকার থেকে কোনো ধরনের আর্থিক সহযোগিতা বা সুবিধা গ্রহণ করবে না। প্রজ্ঞাপনে উল্লিখিত ৬ বোর্ডে নিবন্ধিত দাওরায়ে হাদিসের মাদরাসাসমূহ “আল-হাইয়াতুল উলইয়া লিল জামিয়াতিল কওমিয়া বাংলাদেশ” সংস্থায় নিবন্ধিত মাদরাসা বলে গণ্য হবে। ৬ বোর্ডের আওতার বাইরে থাকা কোনো মাদরাসা এই সংস্থায় পৃথকভাবে নিবন্ধিত হতে পারবে না। বর্তমানে যে মাদরাসা যে বোর্ডে নিবন্ধিত, এই বছর সেই বোর্ডেই থাকতে হবে। অন্য বোর্ডে যেতে পারবে না। এর বাইরে আরো কয়েকটি দাপ্তরিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়।
বিষয়টি নিশ্চিত করে মুফতি মাওলানা রূহুল আমীন বলেন, আজকের বৈঠকের পর স্বীকৃতির পথ আরো এক ধাপ এগিয়ে গেল। তিনি বলেন, কওমি সনদ বাস্তবায়ন কেন্দ্রীয় কমিটি নির্দেশনা মোতাবেক পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক উপ-কমিটি কাজ শুরু করবে। পরবর্তী এ সংক্রান্ত আরো কোনো উপ-কমিটি করার প্রয়োজন হলে সেটি করা হবে। তিনি বলেন, সারা দেশে অভিন্ন প্রশ্নে পরীক্ষা হবে এবং সবাই একটি নীতিমালার মধ্যে আসবে।
আল্লামা শাহ আহমদ শফী বলেন, কওমি মাদ্রাসা শিক্ষা ব্যবস্থার বিরুদ্ধে দেশি-বিদেশি বহুমুখী ষড়যন্ত্র হয়েছে। এসব ষড়যন্ত্র প্রতিরোধ করে কওমি মাদরাসার স্বকীয়তা শতভাগ অক্ষুণ্ন রেখে স্বীকৃতি পেয়েছি। এটাকে ধরে রাখতে হলে পূর্বের যে কোনো সময়ের তুলনায় এখন অনেক বেশি ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। এটা নিয়ে যারা সমালোচনা করছেন বা বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছেন তারা নিজেদের স্বার্থের চিন্তা থেকেই এমনটা করছেন। বেফাক সভাপতি ওলামায়ে কেরামরা কোনোরূপ বিভ্রান্তি ও অপপ্রচারে কান না দেয়ার আহ্বান জানান তিনি। যে কোনো ধরনের ষড়যন্ত্র বা ছলচাতুরি করতে না পারে, সেজন্য আমাদের সকলের দৃঢ় ঐক্য ও সতর্ক থাকার কথা জানান। তিনি আরো বলেন, কওমি মাদরাসা বোর্ডসমূহ কোনোভাবেই প্রচলিত রাজনীতির সঙ্গে জড়িত নয়। আমরা শান্তিপূর্ণ ও সুশৃঙ্খলভাবে খাঁটি ইসলামী শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করি এবং ঈমান-আক্বিদা, দেশের স্বাধীনতা ও জাতীয় স্বার্থের বিরুদ্ধে কোনো ষড়যন্ত্র বা হুমকি তৈরি হলে আমরা দেশ ও জাতির পক্ষে ইতিবাচক ভূমিকা রাখতে সচেষ্ট হই। এসব বিষয়ে যেকোনো ব্যক্তিবিশেষ, সংগঠন, রাজনৈতিক দলের নেতা বা সরকারের সঙ্গে আলোচনা বা বৈঠককে নেতিবাচক দৃষ্টিকোণ থেকে দেখে বিভ্রান্তি ছড়ানোর কোনোই সুযোগ নেই।
গতকালের বৈঠকে আরো উপস্থিত ছিলেন বাস্তবায়ক কমিটি কো-চেয়ারম্যান মাওলানা আশরাফ আলী, মাওলানা নূর হোসাইন কাসেমী, মাওলানা মুফতী ওয়াক্কাস, মাওলানা আব্দুল কুদ্দুস, মুফতী রূহুল আমীন, মুফতী আরশাদ রাহমানী, মাওলানা আব্দুল হামিদ পীর সাহেব মধুপুর, মাওলানা নূরুল ইসলাম, মাওলানা সাজিদুর রহমান, মাওলানা মুফতী ফয়জুল্লাহ, মাওলানা যোবায়ের আহমাদ চৌধুরী, মাওলানা মুফতী জসীম উদ্দীন, মাওলানা মাহফুজুল হক, মুফতী শামসুদ্দীন জিয়া, মাওলানা মুহাম্মদ আলী, মাওলানা আনাস মাদানী, মাওলানা মুসলিহ উদ্দীন রাজু, মাওলানা মুফতী নূরুল আমীন, মাওলানা উবায়দুর রহমান মাহবুব, মাওলানা এনামুল হক, মাওলানা নূরুল হুদা ফয়েজী, মাওলানা কাজী আখতার হোসাইন, মাওলানা ইউসুফ, মাওলানা ইয়াহইয়া মাহমুদ ও মাওলানা আব্দুল জাব্বার।