নির্বাচিত হলে এলাকাবাসীর সুখে-দুঃখে পাশে থাকবো : আজমাল মাসরুর
আসন্ন ৮ই জুনের পার্লামেন্ট নির্বাচনে বেথনাল গ্রীন ও বো আসনের স্বতন্ত্র এমপি প্রার্থী মিডিয়া ব্যক্তিত্ব আজমাল মাসরুর তাঁকে নির্বাচিত করতে এলাকাবাসীর প্রতি আকুল আবেদন জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘নির্বাচিত হলে এলাকাবাসীর সুখে-দুঃখে সবসময় পাশে থাকবো। নির্বাচনী এলাকার মানুষের ন্যায্য দাবী-দাওয়া আদায়ে পার্লামেন্টে সোচ্চার ভুমিকা পালন করবো। স্থানীয় সমস্যাগুলো পার্লামেন্টে উপস্থাপনের মাধ্যমে সমাধানের চেষ্টা করবো। জাতীয় কোনো সমস্যা স্থানীয় এলাকাবাসীর ওপর প্রভাব সৃষ্টি করতে পারে-এমন বিষয়ে সবসময় সচেতন থাকবো। তিনি নির্বাচনকে সামনে রেখে ৮টি অঙ্গীকারনামা উপস্থাপন করেন।
আজমাল মাসরুর ৮ মে সোমবার দুপুরে পূর্ব লন্ডনের মাইক্রোবিজনেস পার্ক কমিউনিটি সেন্টারে আয়োজিত এক জনাকীর্ণ সংবাদ সম্মেলনে উপরোক্ত কথাগুলো বলেন। তিনি বলেন, বৃটিশ প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে নির্বাচনের ঘোষণা দেয়ার পর আমি আমার এলাকা বেথনাল গ্রীন ও বো’র মানুষের প্রতিনিধিত্ব করতে সংসদে প্রার্থী হওয়ার প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করি। কারণ আমি মনে করি এখানে এমন একজন জনপ্রতিনিধি দরকার যাকে মানুষ তাদের কাছে পাবে। আর আমার নির্বাচনের মূল উদ্দেশ্যই হচ্ছে, এলাকার মানুষের সুবিধা-অসুবিধায় পাশে থেকে তাদের সেবা করে যাওয়া। তিনি বলেন, ২০১০ সালের নির্বাচনে আমি লিবারেল ডেমোক্রেট দল থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করি। এ বছর স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার মূল কারণ হচ্ছে, আমি বেথনাল গ্রীন ও বো আসনের মানুষের কাছে একজন জবাবদিহিমুলক জনপ্রতিনিধি হতে চাই। নির্বাচিত হলে দলীয় বাধ্যবাধকতা না থাকায় শুধু এলাকাবাসীর জন্য নিজেকে নিবেদিত করতে পারবো।
তিনি বলেন, আমি এই এলাকার মানুষের সমস্যা মোকাবেলায় কাজ করতে চাই। বিভক্তি ও বিভাজনের রাজনীতিতে জড়াতে চাই না। আজমাল মাসরুর বলেন, লেবার প্রশাসনের অধীনে টাওয়ার হ্যামলেটসের মানুষ বিভিন্ন ধরনের সমস্যায় কঠিন সময় অতিবাহিত করছে। এই বারার রাজনীবিদেরা ভোটারদের অধিকার রক্ষায় বারবার ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছেন। এটা স্থানীয় সরকারের বেলায় যেমন, তেমনী পার্লামেন্টে প্রতিনিধিত্বের ক্ষেত্রেও তেমন। আমি চাই, এই এলাকায় একটি যুগপৎ পরিবর্তন আনতে। টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিল ও কমিউনিটিতে বিদ্যমান সমস্যাগুলো দূর করতে চাই।
তিনি বলেন, নির্বাচনী ক্যাম্পেইন শুরু করার পর থেকে তিনি প্রতিদিন মানুষের কাছ থেকে স্বতঃস্ফুর্ত সাড়া পাচ্ছেন। টাওয়ার হ্যামলেটসের রাস্তা-ঘাটে হাঁটার সময়ে মানুষ তাঁর ক্যাম্পেইনে এগিয়ে আসছেন। তাঁকে জড়িয়ে ধরে সমর্থন ব্যক্ত করে বলছেন, আপনার মতো একজন ব্যক্তি আমরা আমাদের প্রতিনিধি হিসেবে দেখতে চাই। সংবাদ সম্মেলনে তিনি দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করে বলেন, নির্বাচিত হলে আমি হবো এলাকার মানুষের সবচেয়ে কাছের জনপ্রতিনিধি। তাঁরা আমাকে সবসময় কাছে পাবে। আমি সবসময়ই কাছে থাকবো। একজন এমপি হিসেবে আমার প্রধান দায়িত্ব হবে মানুষের পাশে থাকা, তাদের কথা শোনা। তাদের সুবিধা অসুবিধায় এগিয়ে আসা।
তিনি বলেন, আমি দীর্ঘদিন ধরে বিবিসি, স্কাইসহ মুলধারার মিডিয়া চ্যানেলে বিভিন্ন বিতর্কে অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে বৃটিশ মুসলিম কমিউনিটিকে প্রতিনিধিত্ব করে আসছি। বৃটিশ সরকার ও সরকারের বিদেশনীতিকে বিভিন্নভাবে চ্যালেঞ্জ করে আসছি। এমপি নির্বাচিত হলে, এই এলাকার মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করতে কাজ করবো এবং একজন শক্তিশালী প্রতিনিধি হয়ে পার্লামেন্টে প্রতিনিধিত্ব করবো। সংবাদ সম্মেলনে তিনি তাঁর ৮টি অঙ্গীকার উপস্থাপন করেন।
এক. তিনি নির্বাচিত হলে প্রতিমাসে কমপক্ষে চারটি এডভাইস সার্জারী পরিচালনা করবেন, যা বর্তমান এমপির চেয়ে দ্বিগুণ হবে। তাছাড়া তাঁর অগ্রাধিকার হবে- স্থানীয় মানুষের জন্য কেসওয়ার্কার হিসেবে কাজ করা। তাদের বিভিন্ন প্রয়োজনে সহযোগিতা করা ও পরামর্শ দেয়া।
দুই. টাওয়ার হ্যামলেটসে প্রাইভেট ডেভোলাপাররা ডেভোলাপিং কাজের অনুমতি পেতে হলে অধিক অ্যাফোর্ডেবল এন্ড সোশিয়েল হাউজিং তৈরি করতে হবে। কাউন্সিল যাতে প্রাইভেট ডেভোলাপারদের কাছ থেকে বেশি বেশি করে অ্যাফোর্ডেবল এন্ড স্যোশিয়েল হাউজিং আদায় করে নিতে পারে সে জন্য কাউন্সিলের প্রতি চাপ সৃষ্টি করবেন।
তিন. নাইফ-ক্রাইম বা ছুরিজনতি অপরাধ এবং অসামাজিক কার্যকলাপ বন্ধে পুলিশের সাথে পার্টনারশীপ ভিত্তিতে কাজ করে টাওয়ার হ্যামলেটসে নাইফ অ্যামেনেস্ট্রি ঘোষণা করবেন।
চার. ক্ষুদ্র ব্যবসা ও মার্কেট ব্যবসায়ীদের জন্য আগ্রাসী প্রাইভেট ডেভোলাপমেন্টের বিরুদ্ধে লড়ে যাবেন। তাছাড়া পার্লামেন্টে বিজনেস ট্যাক্স নিয়ে কথা বলবেন, যাতে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা কম ট্যাক্স দেয় আর কর্পোরেট ব্যবসায়ীরা বেশি ট্যাক্স পরিশোধ করে।
পাঁচ. কেন্দ্রীয় সরকারের ফান্ডিংকাটের কারণে টাওয়ার হ্যামলেটসের প্রাইমারী স্কুলগুলোর ফ্রি মিলের বাজেট হুমকীর মুখে রয়েছে। তিনি এমপি নির্বাচিত হলে কাউন্সিলের সাথে ঘনিষ্টভাবে কাজ করবেন। যাতে স্কুল-মিল কখনো বন্ধ না হয়। তাছাড়া সরকারের সাথে লবি করবেন যাতে সরকার থেকে সরাসরি তহবিল দিয়ে টাওয়ার হ্যামলেটসসহ গোটা দেশে ফ্রি স্কুল-মিল কর্মসূচি চালু রাখা যায়।
ছয়. টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিলের চিলড্রেন সার্ভিসকে অপর্যাপ্ত বলে অফস্ট্যাড রিপোর্টে সমালোচনা করা হয়েছে। এমপি নির্বাচিত হলে তিনি কাউন্সিলের সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্মকর্তা ও জনপ্রতিনিধিদের জবাবদিহিতার আওতায় নিয়ে আসবেন।
সাত. বড় বড় ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের সাথে কাজ করে তাদেরকে স্থানীয় তরুণ ও যুবকদেরকে চাকরি দিতে উৎসাহিত করবেন। পাশাপাশি স্থানীয় লোকজনকে পর্যাপ্ত চাকরি না দিলে তাদেরকে জবাবদিহি করতে বাধ্য করবেন।
আট. স্থানীয় ডাক্তার, নার্স ও লোকাল অথরিটির সাথে ঘনিষ্টভাবে কাজ করে এনএইচএস এর প্রকৃত সমস্যা চিাহ্নত করবেন। এরপর সেন্ট্রাল গভর্ণমেন্টের সাথে স্বাস্থ্যখাতে বিনিয়োগের জন্য লবিং করবেন।
উপরোক্ত ৮টি বিষয়ে নির্বাচনী প্রতিশ্রুতির পাশাপাশি আরো তিনটি জাতীয় বিষয়ে সংসদীয় কর্মকাণ্ড ফোকাস করবেন বলে উল্লেখ করেন। সেগুলো হলো- ব্রেক্সিট: তিনি যেকোনো কঠিন ব্রেক্সিট ডিলের বিরুদ্ধে ভোট দেবেন এবং ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের যেসকল নাগরিক যুক্তরাজ্যে বসবাস করছেন তাদের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য লড়ে যাবেন। হেইট ক্রাইম: বর্তমানে গোটা দেশে নাইফ ক্রাইমের মহোৎসব চলছে। নাইফ ক্রাইমের অপরাধীদের বিরুদ্ধে কঠিন আইনের প্রয়োগ ও শাস্তির জন্য ক্যাম্পেইন করে যাবেন। তাছাড়া একটি স্বচ্ছ ও ন্যায়সঙ্গত ফরেন পলিসির জন্য পার্লামেন্টে বলিষ্ট ভুমিকা রাখবেন।