গরু ‘পূজার নামে মানুষ খুন’ গ্রহণযোগ্য নয়
ভারতে গরু রক্ষার নামে একের পর এক খুনের বিরুদ্ধে অবশেষে মুখ খুললেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। সবরমতী শতবার্ষিকী উদযাপনের সূচনা করতে গিয়ে বৃহস্পতিবার তিনি বলেছেন, ‘গরু পূজার নামে মানুষকে খুন করা মেনে নেয়া যায় না। মহাত্মা গান্ধী কখনোই একে সমর্থন করতেন না।’
গো-রক্ষার নামে বা গো-মাংস বিতর্ককে কেন্দ্র করে সারা দেশেই একের পর হিংসাত্মক ঘটনা সামনে আসছে। প্রতিটি ঘটনাতেই নাম জড়াচ্ছে বিজেপির বা কট্টর হিন্দুত্ববাদী সংগঠনগুলোর। এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর নীরব কেন? প্রশ্ন উঠছিল বিভিন্ন শিবির থেকে। অবশেষে প্রধানমন্ত্রী সে বিষয়ে নিজের অবস্থান স্পষ্ট করলেন। খবর পিটিআই’র।
মহাত্মা গান্ধীর সবরমতী আশ্রম প্রতিষ্ঠার শতবার্ষিকী উদযাপনের জন্য বিশেষ কর্মসূচি আয়োজিত হয়েছে মোদির নিজ রাজ্য গুজরাটে। মোদি নিজেই সেই কর্মসূচির উদ্বোধন করেছেন। সেখানে নিজের ভাষণে তিনি গান্ধীর অহিংস নীতির পক্ষে কথা বলেছেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘গো-রক্ষার অর্থ কি একজন মানুষকে খুন করা? কখনোই নয়। অহিংসাই আমাদের জীবনের পথ।’ গো-সম্পদ রক্ষার জন্য হিংসাত্মক পথ নেয়ার প্রয়োজন পড়ে না বলে এ দিন বারবার বার্তা দেয়ার চেষ্টা করেছেন মোদি।
গান্ধীর জীবনদর্শন স্মরণ করিয়ে দিয়ে তিনি বলেন, ‘গো-রক্ষার কথা মহাত্মা গান্ধী বা বিনোবা ভাবের চেয়ে বেশি আর কেউ বলেননি।’ ভারতে বিজেপি ক্ষমতায় আসার পর থেকেই গরু নিয়ে সমাজে তৈরি হয়েছে তীব্র রাজনৈতিক বিভেদ।
বিজেপি বলছে, গরু ভারতীয় হিন্দুদের কাছে খুবই পবিত্র এবং এ গরু রক্ষায় তারা নানা ধরনের কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছে। গরু জবাই নিষিদ্ধ করা হয়েছে অনেক রাজ্যে। এখন গো-হত্যার জন্য মৃত্যুদণ্ডের বিধান করে একটি পার্লামেন্টে আইন পাস করার কথাও ভাবা হচ্ছে।
কিন্তু ভারতের কোটি কোটি মুসলিম, খ্রিস্টান এবং নিন্মবর্গের দলিত শ্রেণীর মানুষ গরুর মাংস খান। কাজেই বিজেপির এসব নীতির ফলে তারা এখন নানাভাবে নিগৃহীত হচ্ছেন।
গত দুই বছরে তথাকথিত হিন্দু গো-রক্ষকদের হাতে অন্তত ১২ জন নিহত হয়েছেন। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই কোনো প্রমাণ ছাড়া শুধুমাত্র গুজবের ওপর ভিত্তি করে মুসলিমদের ওপর এসব হামলা চালানো হয়। অতি সম্প্রতি হরিয়ানায় এবং ঝাড়খণ্ডে গো-রক্ষার নামে সদ্য দুটি ভয়ঙ্কর ঘটনা ঘটে গিয়েছে। তা নিয়ে গোটা দেশে গো-রক্ষা বিতর্ক ফের তুঙ্গে। ‘নট ইন মাই নেম’-এর ডাকে দেশজুড়ে আন্দোলন শুরু হয়েছে।
এবার প্রধানমন্ত্রী নিজেও মুখ খুললেন। গো-রক্ষার নামে কেউ আইন নিজের হাতে তুলে নেয়ার চেষ্টা করলে বরদাস্ত করা হবে না বলে বার্তা দিলেন।