ইষ্ট লন্ডনের বাঙালী এলাকায় এসিড আক্রমন: মিডিয়া, পুলিশ, মেয়রের দায়িত্ব ও আমাদের সাবধানতা!

rejaরেজা আহমদ ফয়ছল চৌধুরী সুয়েব: খুবই বাজে সময় পার করছেন লন্ডনের তথা বৃটেনের মানুষ। এক অজানা শংকা যেন পেয়ে বসেছে সবাইকে। মানুষ যেন থার্ড ওয়ার্ল্ডের কোনো একটি দেশে বসবাস করছে। একের পর এক দুর্ঘটনা ঘটেই চলছে। এ যেন বাংলাদেশের মত অবস্থা।
গত ২৯শে জুন সন্ধ্যার দিকে এক বন্ধু হোয়াটস-আপ এ ম্যাসেজ পাঠান আমার মোবাইলে। পড়ে দেখলাম ইস্ট লন্ডনের বাঙালী অধ্যুষিত এলাকা কমার্শিয়েল রোডের ওয়াটনী মার্কেটের সামনে বৃটিশ এশিয়ান এক যুবককে এসিড এট্যাক করেছে। এবং তার সি ক্লাস মার্সিডিজ গাড়ী নিয়ে গেছে। বর্নবাদী আক্রমন অথবা এসিড আক্রমন হলে গাড়ী নিয়ে যাওয়ার কথা নয়। বন্ধুকে ফোন করবো কি-না ভাবছি, এমন সময় ফোন বেজে উঠে পরিচিত এক ভদ্রলোকের ফোন ভাই কি শুরু হয়েছে আমরা কি থাকতে পারবো এ দেশে? আপনারা যারা মিডিয়ায় আছেন কিছু একটা করুন। এর পর একের পর এক ফোন আসতে থাকে। যারা রাজনীতি করেন তাদেরও কথা হচ্ছে বর্তমান মেয়র এবং এমপি কোথায়? এসিড এট্যাক হয় কি করে? এসিডই-বা সাধারন মানুষ পায় কোথায়? এত সিকিউরিটি থাকা সত্বেও কি করে ওরা এসিড নিয়ে ঘুরে বেড়ায়? এ সব হাজারো প্রশ্ন মানুষের মনে ঘোরে ফিরে আসছে। আপনি একটা টক শোর ব্যবস্থা করেন এবং আজ রাতেই করুন, হট ইস্যু। মানুষ খাবে। নিউজ এখন হয়ে গেছে কোনটা খাবে, আর কোনটা খাবেনা। ফেইসবুক একটা হয়েছে আরেক বাড়তী যন্ত্রনা। সব কিছু এখন ফেইসবুকে ভাইরাল হয়ে যায়।
আমি ভেবে পাইনা কি করবো! আমি যে জায়গায় দাড়িয়ে আছি সেখান থেকে হুট করেই কিছু করতে পারিনা। রাত লন্ডন সময় ১১টার দিকে আমি ফোন করি মেয়রের এডভাইজার সৈয়দ মনসুর উদ্দিন সাহেবকে। না তিনি ফোন ধরলেনননা। এদিকে আমার ফোন অফিসের ফোন বেজেই চলছে। রিপোটিংএ যারা কাজ করেন জিজ্ঞাস করলাম কি বিষয় তারা দায়িত্ব নিয়ে কিছু বলতে পারেনা। বিবিসি, স্কাই এর ওয়েব সাইট দেখলাম কিন্তু সেখানেও কিছু নেই। দুএকজন ফেইসবুকে হালকাভাবে নিউজ করেছেন কেউই দায়িত্ব নিচ্ছেননা। রাত সাড়ে এগারোটার দিকে ফোন করি লন্ডন বাংলা প্রেস ক্লাবের সভাপতি প্রবীন সাংবাদিক সৈয়দ নাহাশ পাশাকে, নাহাশ ভাই বললেন একটি ঘটনার কথা তিনি শুনেছেন।
নাহাশ ভাইকে বললাম পূর্ব লন্ডনের টাওয়ার হ্যামলেটসের মেয়র অফিস থেকে কোনো ষ্টেইটমেন্টস তিনি পেয়েছেন কি-না? নাহাশ ভাই বললেন পাননি। বললেন পেলে তিনি জানাবেন। ফোন করি লেবারপার্টির নেতা আহবাব হোসেনকে। বললাম ভাই আপনাদের মেয়রের এডভাইজার মেয়র এমপি কেউই তো ঘটনার ব্যাপারে কিছু বলছেননা। ফোন করলাম কেউ ফোনও ধরছেননা। আহবাব ভাই বললেন আমি চেষ্টা করি। কিছুক্ষন পর আহবাব ভাইয়ের ফোন বললেন এমপি হাউস অব কমন্সে ছিলেন। আমার কনর্সান এর কথা তিনি যথাযত কর্তপক্ষকে অবহিত করেছেন তারা যোগাযোগ করবেন। শুক্রবার সকাল পর্যন্ত কোনো খবর নেই। ১২টার দিকে একটি এসএমএস লিখলাম মেয়রের এডভাইজারকে। মনুসর ভাই সালাম নিবেন।গতরাতে আপনাকে ফোন করেছিলাম কিন্তু কোনো উত্তর পাইনি।
আমি কমার্শিয়েল রোডের দুর্ঘটনার ব্যাপারে মেয়রের মতামত জানতে চেয়েছিলাম যদি সময় হয় তাহলে আমাকে একটু জানাবেন। এবং আপনারা ব্যস্ত থাকলে মেয়র এমপি, এডভাইজার কার সাথে যোগাযোগ করতে হবে দয়া করে জানালে খুশী হব, ইতি ফয়সল চৗধুরী শোয়েব চ্যানেল আই। মুহুর্তেই ফোন বেজে উঠে। কুশল বিনিময়ের পর মনসুর ভাই বললেন এত গরম ম্যাসেজ কেন? বললাম ভাই বিপদে আাছি, মানুষ জানতে চায় কমার্শিয়েল রোডে কি হয়েছে, এর জন্যই বিরক্ত করা। মনসুর ভাই বললেন পুলিশের সাথে মেয়র কাজ করছেন বরা কমান্ডারের সাথে কথা হয়েছে কিছুক্ষনের মধ্যে তারা ষ্টেইটম্যন্ট রিলিজ করছেন। আমি ফোন রেখে দিব এর ফাক দিয়ে মনসুর ভাই একখানা কথা আমাকে শুনিয়ে দিলেন, বলেছেন মেয়র এপি কি দাড়িয়ে থাকবে নাকি কোথায় কি হলো সেটা দেখার জন্য। আমি কথা বাড়াইনি। জুম্মার নামাজে যাবো এর জন্য লাইন কেটে দিলাম। জুম্মার নামাজ থেকে এসে অপেক্ষার পালা মনুসর ভাই মেয়রের বিবিৃতি পাঠালেন বিকেল ৪ টার দিকে। সেখানে লিখা আছে ব্লিচ এট্যাক করে ছেলেটির গাড়ী ছুরি করে নিয়ে যাওয়ার পথেই পুলিশ ধরে ফেলে। যুবককে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হয়েছে এবং তাকে ছেড়ে দেয়া হয়েছে। এ ব্যাপারে কোনো পেনিক করার দরকার নেই। মেয়র এবং পুলিশ কাজ করছে। মেয়র জন বিগস কমিউনিটির উন্নয়নের জন্য কাজ করছেন।
লন্ডনে বসবাসরত বৃটিশ বাংলাদেশী যারা রয়েছেন তাদের প্রতি আমার বিনীত অনুরোধ খুবই সাবধানে চলাফেরা করবেন। সেদিন ক্যানারীওয়ার্ফের পাশ দিয়ে এক ভদ্রলোককে দেখলাম লম্বা জুব্বা এবং মাথায় টুপি পড়ে তিনি এমন ভাবে হাটছেন এবং দেখছেন মনে হলো ক্যানারীওয়ার্ফ এবং অত্র এলাকা উনার দাদা দান করেছেন। গাড়ী যারা চালান তারা দয়া করে গাড়ীর গ্লাস এবং চাইল্ড লক লাগিয়ে রাখবেন। ছেলে মেয়েদেরকে স্কুলে ড্রপ করবেন এবং বাসায় নিয়ে আসবেন। কোনো অবস্থাতেই যেন বাচ্চারা স্কুল থেকে একা না আসে। অযথা বাড়ী থেকে বের হওয়ার কোনো দরকার নেই। যে সব মসজিদে শুক্রবারে ঈমাম সাহেবরা খুতবা পাঠ করেন তারা যেন বুঝে শুনে কথা বলেন। নর্থ লন্ডনের ফেইন্সবারী পাকের্র ঈমাম সাহেব কে ধন্যবাদ তিনি বৃটেনের মুসলমান কমিউনিটিকে বাচিয়ে দিয়েছেন।
ফেইসবুক সাংবাদিক যারা রয়েছেন তাদের প্রতি বিনীত অনুরোধ হুট করে কিছু ফেইসবুকে আপলোড করা থেকে বিরত থাকুন। আমার আজকের এ লেখার উদ্দেশ্য হচ্ছে একটি অথেনটিক নিউজের জন্য আমাকে মেয়রের ষ্টেইটমেন্টের জন্য অপেক্ষা করতে হয়েছে অন্তত ২২ ঘন্টা। মনে রাখবেন একটি মিথ্য সংবাদ পরিবেশনের কারনে সামপ্রদায়িক দাঙ্গা লেগে যেতে পারে।
-লেখক:  প্রধান সম্পাদক দা সানরাইজ টুডে, ব্যাবস্থাপনা পরিচালক চ্যানেল আই ইউরোপ ও সভাপতি ইউকে বাংলা প্রেস ক্লাব।

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন...
Close
Back to top button