সিরিয়ায় সম্ভাব্য সামরিক অভিযানে বাংলাদেশের শংকা
বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন (বিপিসি) এর আশংকা, সিরিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক হামলা মধ্যপ্রাচ্য থেকে জ্বালানী তেল আমদানিতে মারাত্মক বিরূপ প্রভাব সৃষ্টি করতে পারে। বিপিসি চেয়ারম্যান বলেন, ইতোমধ্যে বিপিসি ডিসেম্বর পর্যন্ত পেট্রোলিয়াম আমদানীর জন্য আলোচনা সমাপ্ত হয়েছে। কিন্তু সিরিয়ার অস্থিতিশীল পরিস্থিতির ব্যাপারে আমরা উদ্বিগ্ন। অন্যান্য সকলের মতো আমরাও তেল আমদানি বাধাগ্রস্ত হওয়ার আশংকা করছি। আন্তর্জাতিক বাজারে সম্ভাব্য জ্বালানী সরবরাহ বাধাগ্রস্ত হওয়ার বিষয়টি আমাদের নিয়ন্ত্রণের বাইরে।
তিনি আরো জানান যে, চলতি সনের জুন ও আগষ্টের মধ্যবর্তী সময়ে স্থিতিশীল থাকার পর গত ক’দিন ধরে তেলের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। জানা গেছে, গত ক’দিনে প্রতিবেশী দেশ ভারতেও পেট্রোলের দাম প্রতি লিটারে ২.৩৫ রুপী বৃদ্ধি পেয়েছে। আন্তর্জাতিক বাজারের প্রভাব ও রুপীর মূল্যমান হ্রাসের ফলে সেদেশে পেট্রোল ডিজেল ইত্যাদির দাম বেড়েছে। অনেকের মতে, সরকার কর্তৃক দেশের তেল কোম্পানীগুলোকে তেলের মূল্য নির্ধারণের অনুমতি অর্থাৎ স্বাধীনতা দেওয়ায় কোম্পানীগুলো পেট্রোল ও ডিজেলের মূল্য বৃদ্ধি করেছে।
বলা বাহুল্য, আন্তর্জাতিক বাজারে পেট্রোল ডিজেল ইত্যাদির মূল্যবৃদ্ধি বাংলাদেশের মতো নাজুক অর্থনীতির দেশে যে বিরূপ প্রভাব সৃষ্টি করবে এতে কোন সন্দেহ নেই। অতীতেও এমনটি দেখা গেছে। অভিজ্ঞ মহল মনে করেন, সিরিয়ায় যদি যুক্তরাষ্ট্র কিংবা পাশ্চাত্যের দেশগুলো সামরিক হামলা চালায় তবে তেলের দাম রাতারাতি অস্বাভাবিক হারে বেড়ে যাবার আশংকা। বিশ্বের প্রায় ২০ শতাংশ তেল সুয়েজ খাল দিয়ে পরিবহন করা হয়। বিশেষভাবে দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার দেশসমূহের তেলের অধিকাংশ আমদানী হয় এই প্রণালী দিয়ে।
তাদের মতে, সিরিয়ার উপর হামলা হলে সেই যুদ্ধে ইরানও জড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা। আর ইরান জড়িত হলে সে প্রথমেই সুয়েজ খাল বন্ধ করে দেয়ার উদ্যোগ নেবে। এতে বিশ্বে রাতারাতি তেলের দাম বেড়ে যাবে। শক্তিশালী অর্থনীতির দেশসমূহ এটা কোনমতে সহ্য করতে সক্ষম হলেও বাংলাদেশের মতো দেশগুলো এতে বিপর্যস্ত হয়ে পড়বে। এসব দেশে নিত্যপণ্যসহ বিভিন্ন পণ্য সামগ্রীর দাম অস্বাভাবিক হারে বেড়ে যাবে। এ অবস্থায় সাধারণ জনগণ চরম দুর্ভোগের সম্মুখীন হবে।
অনেকেই জানেন, বাংলাদেশ থেকে যে ক’টি পণ্য সামগ্রী ভারতে চোরাচালান হয় এর মধ্যে জ্বালানী তেল বিশেষভাবে পেট্রোল অন্যতম। এ অবস্থায় ভারতে পেট্রোল তথা জ্বালানী তেলের মূল্যবৃদ্ধি যে বাংলাদেশ থেকে সেদেশে এ ধরনের পণ্যের চোরাচালান আরো বৃদ্ধি করবে এতে কোন সন্দেহ নেই। ফলে বাংলাদেশে তেল সংকট অধিকতর বৃদ্ধি পাবে। এমন আশংকা অভিজ্ঞ ও সচেতন মহলের। তাই বাংলাদেশসহ বিশ্বের শান্তিকামী জনগণ সিরিয়ায় সামরিক হামলাজনিত অস্থিরতা ও অশান্তি বৃদ্ধিসহ বিশ্বে কোন ধরনের অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টির ঘোর বিরোধী।
তারা মনে করেন, বিশ্বে সকল দেশের বিবেক প্রসূত কর্মকান্ড, ধৈর্য ও সহিষ্ণুতার অনুশীলন এবং শান্তি ও স্থিতিশীলতাই কাম্য।