ঐশী তৈরির হোতাদের কী হবে

Oisheমোহাম্মদ আবু নোমান: ঐশীর শিক্ষাজীবন শুরু হয়েছিল ঢাকার মতিঝিল আইডিয়াল স্কুলে। সেখানকার নিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন তার ভালো লাগেনি। সে ছিল বাবা-মায়ের আদরের মেয়ে। তাই তার সব আবদার পূরণের চেষ্টা করতেন তারা। নৈতিকতা শিক্ষার কোনো চিন্তা না করে ঐশীকে ইংরেজি মাধ্যম স্কুলে ভর্তি করে দেন বাবা-মা। ভর্তি হয়েই পাল্টে যায় কিশোরী ঐশী। বেপরোয়া জীবনযাপন, অনিয়ন্ত্রিত প্রেম এবং ইয়াবার মতো জঘন্য মাদক সেবনে ডুবে যায় সে। এতে বাধা দেন বাবা-মা। মাসে দেড় লাখ টাকার বেশি ছিল কিশোরী ঐশীর হাত খরচ। তাহলে পরিবারটি চলত মাসিক কত খরচে? বিলাসবহুল ফ্লাটের বিপুল ভাড়া জুটল কিভাবে? সরকারি চাকরি করে এত বিলাসিতা কিভাবে সম্ভব?
একজন এসআইর যদি এত বিশাল পরিমাণ মাসিক অবৈধ অর্থের পার্মানেন্ট সোর্স থাকে, তাহলে তার ওপরে যারা কর্তা আছেন, তাদেরকেও তো নিশ্চয় ভাগ দিয়েই চলতে হয়। অবশ্য সবাই দুর্নীতিবাজ নন। ঐশীর মতো পরিবার এখনো থাকতে পারে।
অবৈধ উপায়ে অর্থ উপার্জন এবং বেহিসেবী জীবনযাপন কখনোই ভালো কিছু বয়ে আনতে পারে না। ঐশী এবং জুয়েলার্সের মালিকের ছেলে সাফাতদের পরিবার তার সবচেয়ে বড় উদাহরণ। বড় দেরি করে ফেলেছিলেন ঐশীর বাবা-মা। আর তাতেই ক্ষেপে যায় ঐশী। ভাবতে শুরু করে নিজের পিতা-মাতাকে হত্যার কথা। নেশার জগতে ঐশী এমনি এমনিতেই জড়ায়নি, এর পেছনে কাজ করেছে অভিভাবকের কাছ থেকে অতিপ্রাপ্তি, তারপরই সমস্যা হয়ে দাঁড়ায় অতিনিয়ন্ত্রণ। শুধু দণ্ড দিয়ে এ বিষয়গুলোর সুরাহা সম্ভব নয় বরং অনেক নিষ্ঠুর সত্যকেই ধামাচাপা দেয়া হবে। উল্লেখ্য, স্ত্রীসহ পুলিশের পরিদর্শক মাহফুজুর রহমান হত্যা মামলায় ঐশী রহমানকে মৃত্যুদণ্ডের পরিবর্তে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডাদেশ দিয়েছেন উচ্চ আদালত।
কিন্তু এই হত্যার দায় কী ঐশীর একার? তার পরিবার এবং এই সমাজব্যবস্থার কি কোনো দায় নেই? ঐশীদের যারা তৈরি করেছে তাদেরও কি এমন সাজা হবে? স্কুল ফাঁকি দিয়ে আড্ডা দেয় ছেলে বন্ধুদের সাথে। যোগ দেয় ইয়াবা ও গাঁজার আসরে। এসব আড্ডার আসরেই পরিচয় হয় তো কোনো ডিজের সাথে। তার সাথে কিছুদিন মেলামেশার পর তারই বন্ধুর সাথে ঘনিষ্ঠতা বাড়ায়। এদের মাধ্যমেই মূলত নেশার জগতে প্রবেশ করে। এভাবে মাদকে জড়িয়ে পরিবারের সদস্যদের সাথে খারাপ আচরণ করত ঐশী। গভীর রাতের বেলায় ছেলে বন্ধুকে নিয়ে বাসায় আসত। এসব উচ্ছৃঙ্খল চলাফেরা যখন মা-বাবার নজরে আসে, তখন তারা বোঝানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু ততদিনে যা হওয়ার হয়ে গেছে।
আধুনিকতার নামে অধিক স্বাধীনতা সন্তানের জন্য চরম সর্বনাশ ডেকে আনে। এ থেকে আমাদের মা-বাবারও কি কোনো শিক্ষা নেই? এরকম আরো হাজারো অবাধ্য-বিপথগামী সন্তান এখনো আমাদের সমাজে আছে। একটা টিনএজ ছেলেমেয়ে যদি ছোটবেলাতেই বুঝে যায়, তার বাপের অবৈধ টাকা আছে, তখন তার পক্ষে খারাপ হওয়ার আশঙ্কাই বেশি। এই বাবা-মা কিসের জোরে সন্তানদের শাসন করবেন? একটা ছেলে বা মেয়ে যদি বুঝে যায়, তার বাবা সন্ত্রাসী বা দুর্নীতিবাজ, তাহলে নিশ্চয় সে ভবিষ্যতে ভালো কিছু হওয়ার বা করার স্বপ্ন দেখবে না। সামাজিক ও পারিবারিক মূল্যবোধের শিক্ষার অভাবে এ ধরনের পরিস্থিতি আজ। পুলিশকর্তা সমাজের অপরাধ ঠেকানোর চেষ্টা করবে, তাকেই বলি হতে হলো অপরাধের। তা-ও নিজের মেয়ের হাতে।

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন...
Close
Back to top button