বিশ্বনাথে সবার প্রিয় তজম্মুল স্যার আর নেই
সিলেটের অন্যতম প্রবীণ শিক্ষাবিদ, বিশ্বনাথ উপজেলা সদরের ঐতিহ্যবাহী রামসুন্দর অগ্রগামী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রাক্তণ প্রধান শিক্ষক, আলহাজ্ব তজম্মুল আলী ইন্তেকাল করেছেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)।
তিনি মঙ্গলবার (১১ জুলাই) বাংলাদেশ সময় রাত ১টায় সিলেটে নগরীস্থ তার নিজ বাস ভবনে ইন্তেকাল করেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৭৫ বছর। তিনি এক পুত্র ও দুই মেয়ে, নাতী-নাতনীসহ অসংখ্য ছাত্র -ছাত্রী, ভক্ত-গুণগ্রাহী রেখে গেছেন। তার একমাত্র পুত্র ও দুই মেয়ে, নাতী-নাতনী সকলেই যুক্তরাজ্য প্রবাসী।
বিশ্বনাথের আলোকিত মানুষ ‘হেডস্যার’ তজম্মুল আলীর ইন্তেকালের খবর দ্রুত ছড়িয়ে পড়লে বিশ্বনাথের সর্বত্র শোকের ছায়া নেমে আসে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুক-হোয়াটস্যাপসহ বিভিন্ন অনলাইন গণমাধ্যমে খবরটি প্রচার হওয়ার সাথে সাথে ব্রিটেনসহ পৃথিবীর বিভিণ্ণ দেশে ছড়িয়ে থাকা মরহুমের ছাত্র-ছাত্রীসহ শুভাখাঙ্খিদের মাঝে শোকের ছায়া নেমে আসে। তারা প্রিয় ‘হেডস্যারের’ আত্মার মাগফেরাত কামনা করে ফেইসবুক, ওয়াটসআপ, ভাইবার ও ম্যাসেন্জারসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে খবরটি দ্রুত ছড়িয়ে দেন এবং মরহুমের শুকাহত পরিবার-পরিজনের প্রতি সমবেদনা জানান।
মরহুম তজম্মুল আলীর একমাত্র পুত্র যুক্তরাজ্য প্রবাসী সমাজসেবী মিজানুর রহমান এই মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছেন। তিনি তার পিতার জন্য সকলের কাছে দোয়া কামনা করেছেন।
সানরাইজ সম্পাদকের শোক:
বিশ্বনাথ তথা বৃহত্তর সিলেটের অন্যতম প্রবীণ শিক্ষাবিদ, ঐতিহ্যবাহী রামসুন্দর উচ্চবিদ্যালয়ের প্রাক্তণ প্রধান শিক্ষক তজম্মুল আলীর ইন্তেকালে দা সানরাইজ টুডে’র সম্পাদক (নির্বাহী ) এনাম চৌধুরী গভীর শোক প্রকাশ করেছেন। তিনি মরহুমের রুহের মাগফেরাত কামনা করে শোকসন্তপ্ত পরিবারবর্গের প্রতি সমবেদনা জানান।
নাজিরাবাজার এডুকেশন এন্ড ওয়েলফেয়ার ট্রাস্ট ইউকের শোক:
প্রবীণ শিক্ষাবিদ, ঐতিহ্যবাহী রামসুন্দর উচ্চবিদ্যালয়ের প্রাক্তণ প্রধান শিক্ষক তজম্মুল আলীর ইন্তেকালে যুক্ত্যরাজ্য প্রবাসী বিশ্বনাথ-দক্ষিণসুরমা- ওসমানী নগর (একাংশের) প্রবাসীদের নিয়ে গঠিত শিক্ষা, সামাজিক কল্যাণ ও সেবামূলক সংগঠন নাজিরাবাজার এডুকেশন এন্ড ওয়েলফেয়ার ট্রাস্ট ইউকের চেয়ারম্যান মুহাম্মদ মুশাহিদ হোসাইন, জেনারেল সেক্রেটারি মনির আহমেদ ও ট্রেজারার তহুর আলী গভীর শোক প্রকাশ করেছেন।
এক শোকবার্তায় সংস্থার নেতৃবৃন্দ মরহুম তজম্মুল আলীকে ইতিহাস খ্যাত বিশ্বনাথের আলোকিত মানুষ গড়ার একজন কারিগর উল্লেখ করে বলেন, মরহুম তজম্মুল আলীর মতো মানবতাবাদী নিবেদিত প্রাণ শিক্ষকের জন্য বিশ্বনাথ তথা সিলেট অঞ্চল যেমন শিক্ষা ক্ষেত্রে এগিয়ে গেছে তেমনি আগামী দিনের সমৃদ্ধ মানুষ তৈরির জন্য তিনি একদল সুশিক্ষিত মানুষ তৈরি করে গেছেন। ট্রাস্ট নেতৃবৃন্দ মরহুমের রুহের মাগফেরাত কামনা করে শোকসন্তপ্ত পরিবারবর্গের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।
মাস্টার তজম্মুল আলীর সংক্ষিপ্ত জীবনী:
১৯৪২ সালের ২৯ ডিসেম্বর বিশ্বনাথ সদর ইউনিয়নের মোহাম্মদপুর মোল্লাবাড়ীর ছিপত আলী পন্ডিত ও মোসাম্মৎ সায়রা বানুর ঘরে জন্ম নেন তজম্মুল আলী। কর্মদা প্রাইমারি স্কুলে প্রাইমারি স্কুলে প্রাইমারি শিক্ষা সমাপনী শেষে লালাবাজার হাই স্কুলে জুনিয়র (৮ম শ্রেণী পর্যন্ত) শেষে রামসুন্দর উচ্চবিদ্যালয়ে নবম শ্রেণীতে ভর্তি হন এবং ১৯৫৬ সালে ঐ বিদ্যালয় হতে মেট্রিকুলেশন (এসএসসি), ১৯৫৮ সালে এমসি কলেজ থেকে আই.কম, ১৯৬০ সালে বিএ, ১৯৬৫ সালে টিচার্স ট্রেনিং কলেজ থেকে বিএড এবং ১৯৭১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইন্সস্টিটিউট হতে এম এড শিক্ষা সমাপ্ত করেন।
১৯৬০ সালে রামসুন্দর হাইস্কুলের সহকারী শিক্ষক, পরবর্তীতে সহকারী প্রধান শিক্ষক এবং ১৯৬৩ সাল থেকে প্রধান শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব নিয়ে ২০০৭ সালের ৩১ ডিসেম্বর অবসর গ্রহণের মধ্য দিয়ে দীর্ঘ শিক্ষকতা জীবনের অবসান ঘটান।
বর্ণাঢ্য কর্মময় জীবনের অধিকারী “হেডস্যার” তজম্মুল আলী বিশ্বনাথ উপজেলার শিক্ষাসহ বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় সংগঠনের সাথে অত:পুত ভাবে জড়িত ছিলেন। তিনি বিশ্বনাথ উপজেলার প্রথম উচ্চ শিক্ষায়তন বিশ্বনাথ কলেজের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতাসহ সেখানকার বিভিন্ন মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠায় সক্রিয় ভাবে জড়িত ছিলেন।
জানাযার নামাজ:
বুধবার বিকেল আড়াইটায় মরহুমের প্রথম জানাযার নামাজ তাঁর প্রিয় প্রতিষ্ঠান রামসুন্দর অগ্রগামী মডেল উচ্চ বিদ্যালয় প্রাঙ্গনে অনুষ্ঠিত হয়। এরপর বাদ আসর মরহুমের গ্রামে অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় ও শেষ জানাজার নামাজ শেষে পারিবারিক কবরস্থানে তাঁর মরদেহ দাফন করা হয়। প্রথম জানাযার নামাজে ইমামতি করেন মরহুমের দীর্ঘদিনের সহকর্মী মাওলানা মহসিন আহমদ।
দাদা-বাবা-ছেলের শিক্ষক সবার প্রিয় শিক্ষক আলহাজ্ব তজম্মুল আলীর জানাযার নামাজে ছিল বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষের ঢল। তাঁকে শেষ বারের মতো দেখতে ও শেষ বিদায় জানাতে বিদ্যালয় মাঠে ছুঠে আসেন বিভিন্ন ধর্ম-বর্ণের মানুষ। পুরনো দিনের অনেক সহকর্মী তাঁর মৃত্যুর সংবাদ শুনে ছুটে আসেন তাকে একনজর দেখে জানাযার নামাজে শরিক হতে।
বিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্র ও উপজেলা যুবলীগের যুগ্ম আহবায়ক আলতাব হোসেনের পরিচালনায় জানাযার নামাজ পূর্ব আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন- জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও স্থানীয় সাবেক সংসদ সদস্য শফিকুর রহমান চৌধুরী, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের জাতীয় পরিষদের সদস্য আ.ন.ম শফিকুল হক, জেলা আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি অ্যাডভোকেট শাহ ফরিদ আহমদ, জেলা বিএনপির সহ সভাপতি ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সুহেল আহমদ চৌধুরী, ব্রিটেনের টাওয়ার হ্যামলেটস’র ডেপুটি মেয়র আয়াছ মিয়া, বিশ্বনাথ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) অমিতাভ পরাগ তালুকদার, উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি পংকি খান, সাবেক সভাপতি মজম্মিল আলী, উপজেলা বিএনপির সহ সভাপতি আবুল কালাম কছির, সাধারণ সম্পাদক লিলু মিয়া, বিশ্বনাথ সদর ইউপির চেয়ারম্যান ছয়ফুল হক, দৌলতপুর ইউপির চেয়ারম্যান আমির আলী, বিশ্বনাথ ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ সিরাজুল হক, উত্তর বিশ্বনাথ আমজদ উল্লাহ ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ নেছার আহমদ, সিলেট টিচার্স ট্রেনিং কলেজের অধ্যক্ষ ড. হাসমত উল্লাহ, সৎপুর কামিল মাদ্রাসার সাবেক অধ্যক্ষ মাওলানা শফিকুর রহমান, যুক্তরাজ্য বিএনপির সাবেক সহ সভাপতি তৈমুছ আলী, চিকিৎসক ডা. নুরুল আফসার বদরুল, ব্যাংকার তাজ উদ্দিন, উপজেলা যুবলীগের আহবায়ক মকদ্দছ আলী।
মরহুমের জানাযার নামাজে উপস্থিত ছিলেন উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) আব্দুল হক, লামাকাজী ইউপি চেয়ারম্যান কবির হোসেন ধলা মিয়া, খাজাঞ্চী ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান নিজাম উদ্দিন সিদ্দিকী, রামপাশা ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান আনোয়ার খান, কেন্দ্রীয় খেলাফত মজলিসের সাংগঠনিক সম্পাদক মুনতাসির আলী, জেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা এসএম নুনু মিয়া, জেলা বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক ময়নুল হক, সদস্য জসিম উদ্দিন জুনেদ, জেলা খেলাফত মজলিসের সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা আবদুল ওয়াদুদ, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ম সম্পাদক মো. আসাদুজ্জামান, সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ফারুক আহমদ, শাহ ফয়েজ আহমদ সেবুল, সাবেক সহ প্রচার সম্পাদক বশির আহমদ, উপজেলা খেলাফত মজলিসের সাধারণ সম্পাদক সায়েফ আহমদ সায়েক, উপজেলা জাতীয় পার্টির সাবেক যুগ্ম আহবায়ক জয়নাল আবেদীন, বিশ্বনাথ ডিগ্রি কলেজের প্রভাষক এনামুল হক, মাহমুদুল হাসান মানিক, আবদুশ শহিদ, প্রভাষক অ্যাডভোকেট আলী আহমদ, কামাল বাজার আলীম মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মাওলানা একেএম মনোওর আলী, দেওকলস দ্বি-পাক্ষিক স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ আবদুল মুকিদ, একলিমিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ফখর উদ্দিন, রাগীব-রাবেয়া স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ ছিফত আলী, রামসুন্দর অগ্রগামী মডেল উচ্চ বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সদস্য সাহাবুদ্দিন, সহকারী প্রধান শিক্ষক আবদুল বারী, প্রাক্তন শিক্ষক মহিউদ্দিন আহমদ, প্রবাসী সুনু মিয়া, ওয়াহিদ মিয়া, ব্যাংকার মতিউর রহমান রাসেল, ওসমানী মেডিকেল হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের প্রভাষক ডা. শামছুল ইসলাম, মোহাম্মদিয়া আরাবিয়া মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল মাওলানা শিব্বির আহমদ, জেলা ছাত্রদলের যুগ্ম সম্পাদক আবদুল কাইয়ুম, ইউপি মেম্বার ফজর আলী, জহুর আলী, শাহ নেওয়াজ চৌধুরী সেলিম, হেলাল আহমদ, আবদুল মুমিন মামুন, শফিক আহমদ, ব্যবসায়ী মফিজ আলী, শেখ মনির মিয়া, নুরুল ইসলাম, বীমাকর্মী আবদুল মতিন, চিকিৎসক জহির উদ্দিন, বিএনপি নেতা আসাদুজ্জামান আসাদ, সাবেক কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ নেতা সিতার মিয়া, বিশ্বনাথ প্রেসক্লাবের সভাপতি কাজী মুহাম্মদ জামাল উদ্দিন, সহ সভাপতি তজম্মুল আলী রাজু, যুগ্ম সম্পাদক এমদাদুর রহমান মিলাদ, বিশ্বনাথ নতুন বাজার বণিক কল্যাণ সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক হাজী মঈনুর রহমান, বর্তমান কোষাধ্যক্ষ নবীন সুহেল, কমিশনার নাঈম আহমদ, উপজেলা সেচ্ছাসেবক দলের আহবায়ক কাওছার খান, মহানগর ছাত্রদলের সহ সাংগঠনিক সম্পাদক তানমুল ইসলাম, সদস্য সামছুল ইসলাম, বিশ্বনাথ ক্রিকেট এসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি ছাদ উদ্দিন, সাবেক সাধারণ সম্পাদক শাহজাহান’সহ কয়েক হাজার মানুষ।