ফুলেল ভালোবাসায় সিক্ত কবি আল মাহমুদ
বাংলা ভাষার অন্যতম প্রধান কবি আল মাহমুদের ৮২তম জন্মদিন বন্ধু স্বজন শুভানুধ্যায়ী ও বাংলা কবিতার অনুরাগীদের ফুলেল ভালোবাসার মধ্য দিয়ে উদযাপিত হয়েছে। প্রচণ্ড বৃষ্টি উপেক্ষা করে সকাল থেকেই কবির ভক্ত, অনুরাগী ও শুভানুধ্যায়ীরা কবির মগবাজারের বাসভবনে ভিড় জমান। ফুল, কেক ও জন্মদিনের উপহারসামগ্রী নিয়ে তারা হাজির হন সেখানে।
আল মাহমুদ ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে কেক কেটে মূল আনুষ্ঠানিকতা পালন করা হয়। ঘরোয়া পরিবেশে এ আয়োজনে ভক্তদের কাছে পেয়ে এ সময় আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন দেশের প্রবীণ এ কবি। সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও বিচারপতি মোহাম্মদ আবদুর রউফ, কবি আসাদ চৌধুরী কেক কেটে কবিকে খাইয়ে দেন। সাহিত্যাঙ্গনে আল মাহমুদের অবদানের জন্য রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দাবি করেন তারা।
উপস্থিত থেকে কবিকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন গীতিকার গাজী মাজহারুল আনোয়ার, চিত্রনায়ক উজ্জল, কবি আব্দুল হাই শিকদার, ছড়াকার আবু সালেহ, কবি জাকির আবু জাফর, রেডিও টুডের হেড অব প্রোগ্রাম আরজে টুটুল, জাসাসের সভাপতি মামুন আহমেদ, গীতিকার মনিরুজ্জামান মনির, ছড়াকার আবিদ আজম প্রমুখ।
ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম প্রধান, কবি জাহাঙ্গীর ফিরোজ, কবি কামরুজ্জামান, আবৃত্তি শিল্পী নাসিম আহমেদ প্রমুখ কবিকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানান।
বিচারপতি আবদুর রউফ বলেন, বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের জন্য আল মাহমুদ আজ অপরিহার্য বলে গণ্য হচ্ছেন। কেননা এ দেশ, দেশের মানুষ, প্রকৃতি, গৌরবের ইতিহাস সবই তার কালজয়ী রচনা ঠাঁয় পেয়েছে। তার শ্রম সাধনা, কবিতার প্রতি ভালোবাসা তাকে আজ এ পর্যায়ে নিয়ে আসতে সাহায্য করেছে। তিনিও নিজেকে ইতিহাসের সমান্তরালে নিজেকে নিয়ে আসতে পেরেছেন সার্থকভাবে। কবিতা তাকে খ্যাতি যশ এনে দিয়েছে। তিনি কবিতাকে দিয়েছেন তার অহঙ্কারে অলঙ্কারাবদ্ধ আবেগতাড়িত হৃদয়।
কবি আসাদ চৌধুরী বলেন, অসংখ্য কালজয়ী কবিতার জনক কবি আল মাহমুদ। কবিতার জন্য গোটা জীবন তিনি কাটিয়েছেন। বলা যায়, কবিতা দিয়েই সাজিয়েছেন তিনি নিজের জীবনকে। কবিতাকে তিনি জীবনের একটি অপরিহার্যতা হিসেবে বেছে নিয়েছেন। এর মধ্য দিয়েই তিনি আনন্দ, প্রেম, ভালোবাসা, খ্যাতি, সবই পেয়েছেন। এর মধ্যেই তিনি স্বস্তি খুঁজেছেন। সুখ পেয়েছেন। সুখের সন্ধানে এ কবিতার জন্য তাকে দুঃখকে সঙ্গী করতে হয়েছে।
গীতিকার গাজী মাজহারুল আনোয়ার বলেন, তিন দশক ধরে তুমুল আলোচিত কবি আল মাহমুদ আধুনিক বাংলা কবিতার শহরমুখী প্রবণতার মধ্যেই ভাটি বাংলার জনজীবন, গ্রামীণ আবহ, নদীনির্ভর জনপদ, চরাঞ্চলের জীবনপ্রবাহ এবং নর-নারীর চিরন্তন প্রেম-বিরহকে পরম আন্তরিকতার সাথে তুলে এনেছেন তার কবিতায়। বাংলা কবিতায় লোকজ ও গ্রামীণ শব্দের বুননশিল্পী কবি আল মাহমুদ নির্মাণ করেছেন এক মহিমান্বিত ঐশ্বর্য্যরে মিনার।
কবি আব্দুল হাই শিকদার বলেন, আল মাহমুদ বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন চলাকালে ভাষার ওপর কবিতা লিখে গ্রেফতারির মুখে পড়েন বলে তাকে এলাকা ছাড়তে হয়েছিল। সেই আল মাহমুদই আবার মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছেন সক্রিয়ভাবে। লেখায় লোকজ শব্দের ব্যবহারে অতুলনীয় হয়ে উঠেছে তার সৃষ্টিকর্ম। গণকণ্ঠ পত্রিকা সম্পাদনা করতে গিয়ে তিনি এক বছর কারাভোগ করেন।
সকাল থেকে রাত অবধি চলে সোনালী কাবিনের শুভেচ্ছা জানানোর পালা। এ সময় তরুণ প্রজন্মের উপস্থিতি ছিল উল্লেখ করার মতো। বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও সাহিত্য সংগঠনের প্রতিনিধিদের এক উৎসবময় পরিবেশের সৃষ্টি করে।
দিনব্যাপী কবিকে শুভেচ্ছা জানানো সংগঠনের মধ্যে রয়েছে জাতীয়তাবাদী সামাজিক সাংস্কৃতিক সংস্থা (জাসাস), সাহিত্য সংস্কৃতি কেন্দ্র, বাংলাদেশ কালচারাল একাডেমি, উৎসঙ্গ সৃজন চিন্তন, বিপরীত উচ্চারণ সাহিত্য সংস্কৃতি সংসদ, নবধারা, উক্তি বাচিক উৎকর্ষ, ফুলকুঁড়ি আসর, সাহিত্য পত্রিকা নতুন মাত্রা, মাসিক কিশোরকণ্ঠ, কাজী নজরুল ইসলাম সংসদ, সময়ের জানালা, বাংলাদেশ প্রজন্ম সাহিত্য পরিষদ, দৈনিক যুগান্তর, রেডিও টুডে, সারেগামা অ্যাকাডেমি, চন্দ্রকথা, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন, দফ কালচারাল অ্যাকাডেমিসহ শতাধিক সংগঠন।
জন্মদিন উপলক্ষে কবি আল মাহমুদ তার অনুভূতি প্রকাশ করতে গিয়ে বলেন, আমি খুবই কৃতজ্ঞ। দেশবাসী যে আমাকে ভুলে যাননি, আমার শুভাকাক্সক্ষীরা যে আমাকে ভুলে যাননি তা দেখে আমি সত্যি আপ্লুত। আমি সবার কাছে দোয়া চাই।
জাসাসের শুভেচ্ছা
আধুনিক বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের প্রধান পুরুষ কবি আল মাহমুদের ৮২তম জন্মদিনে শুভেচ্ছা জানিয়েছে জাতীয়তাবাদী সামাজিক সাংস্কৃতিক সংস্থা (জাসাস)। গতকাল বিকেলে মগবাজারের কবির বাসভবনে ফুলেল শুভেচ্ছা জানানোর সময় উপস্থিত ছিলেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব গাজী মাজহারুল আনোয়ার, বিএনপির সাংস্কৃতিক বিষয়ক সম্পাদক আশরাফ উদ্দিন আহমেদ উজ্জল, জাসাসের সভাপতি ড. মামুন আহমেদ, সহসভাপতি মনিরুজ্জামান মনির, সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন রোকন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাকসুদুর রহমান টিপু, ঢাকা মহানগরীর যুগ্ম আহ্বায়ক আব্দুল মালেক সাগর প্রমুখ।