দুর্বল মজুরি প্রবৃদ্ধি নিয়ে উদ্বিগ্ন ব্রিটেন
চলতি বছর মার্চ থেকে মে সময়ে যুক্তরাজ্যে বেকারত্বের হার সত্তর দশকের মাঝামাঝি সময়ের পর সর্বনিম্ন স্তরে নেমে এসেছে। যদিও দেশটির গৃহস্থালি আয় সংকুচিত হচ্ছে। বুধবার প্রকাশিত সরকারি পরিসংখ্যানে এ তথ্য উঠে এসেছে।
ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) থেকে দেশটির বেরিয়ে যাওয়ার সময় যত ঘনিয়ে আসছে, পরস্পরবিরোধী এ তথ্য নীতিনির্ধারকদের অনিশ্চয়তায় আরো জর্জরিত করে তুলছে। সরকারি পরিসংখ্যান অনুসারে, মার্চ থেকে মে মাসের মধ্যে ব্রিটেনের বেকারত্বের হার হ্রাস পেয়ে ৪ দশমিক ৫ শতাংশে দাঁড়িয়েছে, যা ৪২ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন এবং আগের প্রান্তিকের চেয়ে দশমিক ২ শতাংশীয় পয়েন্ট কম।
শ্রমবাজার-সংক্রান্ত মাসিক প্রতিবেদনে অফিস ফর ন্যাশনাল স্ট্যাটিস্টিকস (ওএনএস) জানায়, এপ্রিল পর্যন্ত প্রান্তিকে বেকারত্বের হার ছিল ৪ দশমিক ৬ শতাংশ, যা ১৯৭৫ সালের পর সর্বনিম্ন। মে প্রান্তিকে বেকারের সংখ্যা ৬৪ হাজার কমে দেশটিতে মোট বেকারের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৪ লাখ ৯০ হাজার, যা এক বছর আগের চেয়ে ১ লাখ ৫২ হাজার কম। কর্মরত রয়েছেন এমন ১৬ থেকে ৬৪ বছর বয়সী জনগোষ্ঠীর কর্মসংস্থানের হার ছিল ৭৪ দশমিক ৯ শতাংশ, যা ১৯৭১ সালে এ সংক্রান্ত তথ্যাদি সংরক্ষণের পর সর্বোচ্চ। কর্মসংস্থানে ইতিবাচক চিত্র দেখা গেলেও তা আরো কিছু পরিসংখ্যানের সঙ্গে বৈপরীত্য তৈরি করছে।
কোনো পরিসংখ্যান দেখা গেছে, ব্রিটেনের অর্থনীতি মন্থর হয়ে পড়ছে। বছরের প্রথম প্রান্তিকে ব্রিটিশ অর্থনীতি দশমিক ২ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে, যা নেতৃস্থানীয় সাতটি শিল্পোন্নত অর্থনীতিগুলোর মধ্যে সর্বনিম্ন। বৃহৎ অর্থনীতিতে কর্মসংস্থান পরিসংখ্যান প্রায়ই ধীরগতিতে প্রভাব বিস্তার করে। ফলে আগামী কয়েক মাস সা¤প্রতিক মন্দা অনুভূত নাও হতে পারে। কিন্তু যদি আগামী মাসগুলোয় ব্রিটেনের ব্রেক্সিট-বিষয়ক আলোচনা অগ্রসর হতে ব্যর্থ হয়, তবে এর জোরালো প্রভাব দেখা যেতে পারে।
ওয়ারউইক বিজনেস স্কুলের অধ্যাপক বেন নাইট বলেন, ঐতিহাসিকভাবেই বেকারত্বের হার একটি অলস সূচক। যদি জিডিপি প্রবৃদ্ধির ওপর ব্রেক্সিট প্রভাব উল্লেখযোগ্যভাবে নেতিবাচক হয়, তবে বেকারত্বের হার বাড়তে পারে বলে তিনি মনে করছেন। তার মতে, ব্রেক্সিট ভোটের কোনো প্রভাব উপলব্ধি করতে চলতি বছরের শেষ নাগাদ সময় লেগে যেতে পারে।
অধিকাংশ অর্থনীতিবিদের মতে, সাবেক অংশীদারদের সঙ্গে কোনো বাণিজ্য চুক্তি ছাড়াই ২০১৯ সালের মার্চে ইইউ থেকে ব্রিটেনের বেরিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এ মুহূর্তে এটাই দেশটির জন্য সবচেয়ে বড় হুমকি। এ পরিস্থিতিতে বহু প্রতিষ্ঠান ব্রিটেন ত্যাগ করতে পারে। এ অবস্থায় ব্রিটেন বিশ্ববাণিজ্য সংস্থার নিয়মের অধীনে পরিচালিত হবে, যার ফলে দেশটির বহু রফতানির ওপর শুল্ক আরোপিত হতে পারে।
এদিকে গত বুধবার আন্তর্জাতিক ঋণমানকারী সংস্থা মুডিস সতর্ক করে দিয়ে জানায়, ইউরোপীয় একক বাজারে শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার নিয়ে যদি কোনো চুক্তি না হয়, তবে ব্রিটেনের প্রবৃদ্ধি পূর্বাভাস প্রকৃতপক্ষে দুর্বল হয়ে পড়বে। এর আগে মঙ্গলবার আন্তর্জাতিক ঋণমানকারী সংস্থা স্ট্যান্ডার্ড অ্যান্ড পুওরসও (এসঅ্যান্ডপি) একই কথা জানিয়েছে।
এদিকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সুদহার এ মুহূর্তে বাড়ানো যেতে পারে বলে ব্যাংক অব ইংল্যান্ডের (বিওই) মনিটারি পলিসি কমিটির কয়েকজন সদস্য মনে করছেন; বিশেষ করে বর্তমানে ব্রিটেনের মূল্যস্ফীতি বিওইর লক্ষ্যমাত্রা ২ শতাংশ ছাড়িয়ে ২ দশমিক ৯ শতাংশে হওয়ায় এবং বেকারত্বের হার কমতে থাকায়। তবে বাকি নীতিনির্ধারকদের মতে, দুর্বল মজুরি প্রবৃদ্ধি উদ্বেগের কারণ হয়ে উঠতে পারে। বুধবারের পরিসংখ্যান অনুসারে, এক বছর আগের তুলনায় কর্মীদের বোনাসসহ সাপ্তাহিক আয় বেড়েছে ১ দশমিক ৮ শতাংশ ও বোনাস ছাড়া ২ শতাংশ। উভয়ই বর্তমান মূল্যস্ফীতির নিচে রয়েছে, যা মূলত ব্রিটেনের জীবনমান পতনের আভাস দিচ্ছে।