সিলেটে নির্বাচনে ৫০ নতুন মুখ
ওয়েছ খছরু: রাজনীতিতে নানা সমীকরণের খেলা চলছে সিলেটে। দল গোছাতে প্রধান প্রধান রাজনৈতিক দলগুলো এবার প্রাধান্য দিচ্ছে তরুণদের। আর এ অবস্থায় আগামী সংসদ নির্বাচন নিয়ে সিলেট আওয়ামী লীগ ও বিএনপিতে নানা হিসাব-নিকাশ চলছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা জানিয়েছেন- দল গঠনে নতুনদের যেভাবে প্রাধান্য দেয়া হয়েছে এর ধারাবাহিকতা থাকবে সংসদ নির্বাচনেও। এরই মধ্যে আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টির অর্ধশতাধিক নতুন মুখ মাঠে সক্রিয়। বন্যায় আক্রান্ত সিলেটের ত্রাণ বিতরণ নিয়ে তারা নিজ নিজ নির্বাচনী এলাকায় সরব হয়ে উঠেছেন। এজন্য নতুনদের নিয়ে আলোচনার অন্ত নেই। তাদের নিয়েও প্রতিদিন হচ্ছে শোডাউন। কোথা কোথাও পুরাতনদের সঙ্গে মুখোমুখি হয়ে পড়ছেন নতুনদের সমর্থকরা। উত্তেজনা ছড়াচ্ছে নির্বাচনী এলাকায়। বিএনপি থেকে ইতিমধ্যে সম্ভাব্য প্রার্থীদের কয়েকটি তালিকা ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। এসব তালিকা নিয়ে বিশ্লেষণ চলছে বলে সিলেট বিএনপি’র শীর্ষ নেতারা জানিয়েছেন। আওয়ামী লীগের বর্তমান কয়েকজন সংসদ সদস্য রয়েছেন দোলাচলে। সিলেট-১ আসন নিয়ে অনেক আগে থেকেই জমে উঠেছে নানা আলোচনা। এ আসনে বর্তমান এমপি ও অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বার বারই নিজ মুখে বলছেন- তিনি আগামী নির্বাচনে প্রার্থী হতে আগ্রহী নয়। এজন্য ইতিমধ্যে মাঠে নামানো হয়েছে নতুন মুখ জাতিসংঘ মিশনের সাবেক স্থায়ী প্রতিনিধি ড. একে আবদুল মোমেনকে। বড় ভাই মুহিতের সঙ্গে তিনি সিলেটে ওয়ার্মআপ শুরু করেছেন। এ আসনে আওয়ামী লীগ থেকে আরও কয়েকজন প্রার্থী রয়েছেন সুযোগের অপেক্ষায়। এর মধ্যে রয়েছেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক এডভোকেট মিসবাহউদ্দিন সিরাজ, সাবেক মেয়র বদরউদ্দিন আহমদ কামরান। এ আসনে বিএনপিতেও এবার নতুন মুখ আসছেন এটা নিশ্চিত। ২০০৮ সালের নির্বাচনে বিএনপি’র প্রার্থী ছিলেন সাবেক অর্থমন্ত্রী এম. সাইফুর রহমান। তার মৃত্যুর পর এ আসনে নির্বাচনী মাঠে ছিলেন সমশের মুবীন চৌধুরী। সমশের মুবীন চৌধুরী পদত্যাগের পর এখন মাঠে সক্রিয় রয়েছেন নতুন মুখ খন্দকার আবদুল মুক্তাদির। পাশাপাশি এ আসনে সুযোগের অপেক্ষায় রয়েছেন মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী। দু’দলের সিনিয়র নেতারা জানিয়েছেন- এবার সিলেট সদর আসনে নতুন দুই মুখের লড়াই হবে। এই আঙ্গিকেই তারা নির্বাচনী মাঠ প্রস্তুত করছেন। এ আসনে হঠাৎ চমক হয়ে আসতে পারেন সাবেক নির্বাচন কমিশনার ছহুল হোসেন। সিলেট-২ আসনে নতুন মুখ মাঠে। পুরাতনদের মধ্যে আওয়ামী লীগ দলীয় সাবেক এমপি ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শফিকুর রহমান চৌধুরী মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন। কিন্তু এ আসনে মরণ কামড় দিতে চাইছেন যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আনোয়ারুজ্জামান। বিশ্বনাথ, বালাগঞ্জ ও ওসমানীনগরে আনোয়ারুজ্জামান তার নিজস্ব বলয় তৈরি করেছেন। এ আসনে আওয়ামী লীগ থেকে নতুন মুখ সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মুহিবুর রহমান, জাতীয় পার্টি থেকে আবদুল্লাহ সিদ্দিকীও নির্বাচনী মাঠে রয়েছেন। বিএনপি দলীয় সাবেক এমপি এম. ইলিয়াস আলী গত ৫ বছর ধরে নিখোঁজ। তার অবর্তমানে হাল ধরেছেন স্ত্রী তাহসিনা রুশদীর লুনা। গত সোমবার লন্ডনে চ্যানেল এসকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে লুনা জানিয়েছেন- দল চাইলে তিনি স্বামীর আসনে নির্বাচন করবেন। লুনাকে নিয়ে এলাকায় বিএনপি’র মধ্যে নতুন ইমেজ তৈরি হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় নেতারা। সিলেট-৩ আসনে নতুন মুখের ছড়াছড়ি বেশি। এরপরও দুইবারের এমপি মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরীও রয়েছেন শক্ত অবস্থানে। চলতি বন্যায় তিনি এলাকায় ত্রাণ বিতরণে চমক দেখিয়েছেন। নতুনদের মধ্যে রয়েছেন- আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক এডভোকেট মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ, যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগ নেতা হাবিবুর রহমান হাবিব, সাবেক ছাত্রলীগ নেতা ও সাংবাদিক শাহ মুজিবুর রহমান জকন। পাশাপাশি সাবেক মহিলা এমপি সৈয়দা জেবুন্নেছা হকের নামও শোনা যাচ্ছে। এ আসনে বিএনপি’র সাবেক এমপি শফি আহমদ চৌধুরী তো সক্রিয় রয়েছেনই। পাশাপাশি যুবদলের কেন্দ্রীয় নেতা আবদুল কাইয়ূম চৌধুরী, বিএনপি’র আইন বিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার আবদুুস সালাম, জেলা বিএনপি’র সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুুল আহাদ খান জামাল, বালাগঞ্জ উপজেলা বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক মুজিবুর রহমানও মাঠে সক্রিয়। এর মধ্যে কয়েকজন সাম্প্রতিক সময়ে এলাকায় পোস্টারিংও করেছেন। সিলেট-৪ আসনেও অনেক নতুন মুখ। এ আসনে আওয়ামী লীগের বর্তমান এমপি ইমরান আহমদ। ইতিমধ্যে আওয়ামী লীগ থেকে দুই নতুন মুখের নাম শোনা যাচ্ছে। এর মধ্যে যুক্তরাস্ট্র আওয়ামী লীগ নেতা ফারুক আহমদ গেল নির্বাচনেও মনোনয়ন চেয়েছিলেন। এবারও তিনি মনোনয়ন চাইবেন বলে তার ঘনিষ্ঠজনেরা জানিয়েছেন। পাশাপাশি অধ্যক্ষ ফজলুর রহমানের নামও শোনা যাচ্ছে। কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান আবদুল বাছির মিয়ার নামও এলাকায় জোরেশোরে উচ্চারিত হচ্ছে। বিএনপিতে সাবেক এমপি দিলদার হোসেন সেলিম আগে থেকেই মাঠে। সাম্প্রতিক সময়ে এ আসনে নিজের শক্তি বাড়িয়েছেন কেন্দ্রীয় বিএনপি’র সহ স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক এডভোকেট শামসুজ্জামান জামান। জামানের পক্ষে এলাকায় পোস্টারিং হয়েছে। এছাড়া সিলেট জেলা বিএনপি’র সাবেক আহবায়ক প্রবীন নেতা এডভোকেট নুরুল হক ও গোয়াইনঘাটের উপজেলা চেয়ারম্যান আব্দুল হাকিমের নামও শোনা যাচ্ছে। জাতীয় পার্টি থেকে এ আসনে নতুন কয়েকজনের নাম শোনা যাচ্ছে। গেল নির্বাচনে এ আসন থেকে মনোনয়ন চেয়েছিলেন প্রেসিডিয়াম সদস্য তাজ রহমান। এবারো তিনি মাঠে। এছাড়া সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান সিরাজ উদ্দিন, পার্টির কেন্দ্রীয় সদস্য আশিক উদ্দিন ও ছাত্র সমাজের সাবেক কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক সাংবাদিক মুজিবুর রহমানও মাঠে সক্রিয় রয়েছেন। সিলেট-৫ আসনে আওয়ামী লীগ থেকে নতুন মুখ হিসেবে জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মাসুকউদ্দিন, যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ড. আহমদ আল কবির, কৃষকলীগের কেন্দ্রীয় উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য মুমিন চৌধুরী, হাইকোর্টের আইনজীবী এডভোকেট মোস্তাক আহমদ মাঠে সক্রিয়।
বিএনপি থেকে যাদের নাম শোনা যাচ্ছে তারাও নতুন মুখ। এর মধ্যে রয়েছেন- জেলা বিএনপি নেতা মামুনুর রশীদ (চাকসু মামুন) ও উপজেলা চেয়ারম্যান আশিক উদ্দিন। দু’জনের অবস্থানই এলাকায় শক্তিশালী। জাতীয় পার্টি থেকে সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান শাব্বির আহমদ ও জাকির হোসেনের নাম শোনা যাচ্ছে। জাতীয় পার্টি থেকে নির্বাচিত এমপি হুইপ সেলিম উদ্দিনও মাঠে রয়েছেন। সিলেট-৬ আসনে এবার আওয়ামী লীগ ও বিএনপিতে অনেক নতুন মুখ। আওয়ামী লীগ থেকে এ আসনে বর্তমান সংসদ সদস্য শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। তাকে টক্কর দিয়ে মাঠে সক্রিয় হয়ে উঠেছেন কানাডা আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি সরওয়ার হোসেন ও লন্ডন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক আফসার খান সাদেক। চলতি বন্যায় সরওয়ার হোসেন এলাকায় বাজিমাত করেছেন। নিজ তহবিল থেকে গোলাপগঞ্জ ও বিয়ানীবাজারে পর্যাপ্ত ত্রান বিতরণ করেছেন। গত বৃহস্পতি ও শুক্রবার গোলাপগঞ্জ ও বিয়ানীবাজারে সরওয়ার হোসেনকে নিয়ে শোডাউন করেছে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগের একাংশ। এ আসনে বিএনপিতেও রয়েছেন একাধিক নতুন মুখ। এর মধ্যে রয়েছেন- সিলেট জেলা বিএনপি’র সভাপতি আবুল কাশের শামীম, বিএনপি নেতা ফয়সল আহমদ চৌধুরী, জেলা বিএনপি নেতা মাওলানা রশিদ আহমদ, জেলা বিএনপি’র সাংগঠনিক সম্পাদক এমরান আহমদ, জাসাসের কেন্দ্রীয় সাধারন সম্পাদক হেলাল খান ও কুনু মিয়া।