সৌদি থেকে দেশে ফিরছেন ৫০ হাজার বাংলাদেশি
সৌদি সরকারের সাধারণ ক্ষমার আওতায় ৫০ হাজারের বেশি বাংলাদেশি শ্রমিক দেশে ফিরে আসতে আবেদন করেছেন। ২৫শে জুলাই মঙ্গলবার এ খবর দিয়েছে সৌদি গেজেট। আগামী সোমবার সৌদি সরকারের সাধারণ ক্ষমার মেয়াদ শেষ হচ্ছে।
সৌদি গেজেটের খবরে বলা হয়েছে, বৈদেশিক শ্রমিক সংক্রান্ত যেসব শাখা সৌদি আরবের উত্তরাঞ্চলের আরার এবং দক্ষিণাঞ্চলের আসির অঞ্চলসহ সর্বত্র রবিবার উপচে পড়া ভিড় লক্ষ্য করা যায়।
মক্কা শহরের হার্মিং এক্সপ্রেস রোডে অবস্থিত সুমাইসি ডিপোর্টেশন সেন্টার। এটি সৌদি আরবের বৃহত্তম প্রবাসী শ্রমিক প্রত্যাবাসন কেন্দ্র। এখানে গত রবিবার বিভিন্ন দেশের শ্রমিকদের সারিবদ্ধ দীর্ঘ লাইন চোখে পড়ে। একটি সূত্র বলেছে, জেদ্দার ইন্দোনেশীয় কনস্যুলেটে নিবন্ধন করার মাধ্যমে ৭ হাজার ৪২১ জন ইন্দোনেশীয় শ্রমিক সৌদি আরব ত্যাগ করেছেন।
২০১৩ সালে অনুরূপ অ্যামনেস্টি ঘোষণার পরে যে পরিমাণ ইন্দোনেশীয় সৌদি আরব ত্যাগ করেছিল তার থেকে এবারের এই সংখ্যা তিনগুণের থেকেও কম। ইন্দোনেশীয় কনস্যুলেটের ইনফরমেশন সোশ্যাল এবং কালচারাল বিষয়ক ভাইস কনসাল উমর বদরসিয়া সৌদি গেজেটকে বলেছেন, বহুসংখ্যক অবৈধ শ্রমিক আগামী হজকে সামনে রেখে এখন পর্যন্ত আশা করছেন যে, সৌদি সরকার অ্যামনেস্টির মেয়াদ আরেক দফা বাড়াতে পারেন। এসব বিদেশি শ্রমিকদের অনেকেই হজ মৌসুমে সৌদিতে অবস্থান করতে চান। কারণ এ সময়টায় একটা বাড়তি উপার্জন নিশ্চিত করা সম্ভব। মি. বদরসিয়া উল্লেখ করেন যে, ইন্দোনেশীয় কনস্যুলেট জেনারেল তাদের দেশের বৈধ কাগজপত্র না থাকা শ্রমিকদের এই মর্মে উৎসাহিত করার চেষ্টা করেছেন যে, অ্যামনেস্টির আওতায় যে প্যাকেজ দেয়া হয়েছে, তা গ্রহণ করে দেশে ফিরে যাওয়া উত্তম। কিন্তু তাতে করে দেশে ফিরে যেতে আগ্রহীদের নিবন্ধন সংখ্যা তেমন বৃদ্ধি পায়নি।
কিছু ইন্দোনেশীয় নাগরিক সরকারের ঘোষিত অ্যামনেস্টি থেকে কোনো সুবিধা পায়নি। কারণ তারা তাদের অবস্থানের বিষয়ে পুলিশকে অবহিত করেছিল। আর অন্যরা সৌদি আরবের বিদেশি শ্রমিকদের জন্য যে কম্পিউটারের ডাটা এন্ট্রির ব্যবস্থা রয়েছে তাতে ত্রুটিপূর্ণভাবে নিজেদের নাম অন্তর্ভুক্ত করেছিল।
সৌদি গেজেটের ওই রিপোর্টে আরো বলা হয়েছে, রিয়াদের ইন্দোনেশীয় দূতাবাসের কর্মকর্তারা বলেছেন, ইন্দোনেশীয় কূটনৈতিক মিশন জেদ্দা এবং রিয়াদে তাদের নাগরিকদের ১৩ হাজারের বেশি ট্রাভেল ডকুমেন্ট ইস্যু করেছে। জেদ্দায় অবস্থিত ইয়েমেন কনস্যুলেট নাজরান প্রদেশের সীমান্ত ফাঁড়ি শাহোরা হয়ে দেশে ফিরে যেতে প্রতিদিন গড়ে তিন শ’ ইয়েমেনিকে অনুমতিপত্র দিচ্ছে। অবশ্য বেশকিছু সংখ্যক ইয়েমেনি সৌদি আরব ত্যাগের প্রক্রিয়া শেষ করতে এখন পর্যন্ত অপেক্ষমাণ তালিকাভুক্ত রয়ে গেছেন। প্রায় ৬০ হাজার ইথিওপিও নাগরিক শুধু জেদ্দা অঞ্চল থেকে দেশে ফিরে যেতে দরখাস্ত করেছেন। জেদ্দায় ইথিওপিয়ার কন্সাল জেনারেল উবিশেট দিমিজ বলেছেন, তথ্যের অভাবে আমরা আসলে বিভ্রান্ত।
সুদানও তাদের শ্রমিকদের সৌদি আরব থেকে দেশে পাঠাতে প্রচেষ্টা ত্বরান্বিত করেছে। ৪৬ হাজারের বেশি সুদানি প্রত্যাগতদের মধ্যে রিয়াদ থেকে ৩২ হাজার এবং জেদ্দা থেকে ১৪ হাজার রয়েছেন। তারা সবাই নিজ দেশে ফিরে যাচ্ছেন। একসময় তারা সৌদি আরবে মেষপালক এবং কৃষিকর্মী হিসেবে এসেছিলেন।
জেদ্দার পাকিস্তানি কূটনৈতিক সূত্রগুলো বলেছে, রিয়াদ এবং জেদ্দায় ৭৫ হাজারের বেশি পাকিস্তানি দেশে ফিরতে ট্র্যাভেল ডকুমেন্ট চেয়ে দরখাস্ত করেছে।
ওই রিপোর্টে আরো উল্লেখ করা হয়েছে যে, বাংলাদেশি কূটনৈতিক সূত্রগুলোর মতে ৫০ হাজারের বেশি বাংলাদেশি দেশে ফিরে যাবার দরখাস্ত করেছে। প্রায় ৪৫ হাজার বাংলাদেশি তাদের স্বদেশে ফেরার প্রক্রিয়া সৌদি আরবেই সম্পন্ন করতে পেরেছে। এ পর্যন্ত মোট ২০ হাজার বাংলাদেশি শ্রমিক সৌদি আরব ত্যাগ করেছে।
প্রায় ৩১ হাজার ভারতীয় অ্যামনেস্টির আওতায় দেশে প্রত্যাবর্তনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। তাদের অনেকেই ইতিমধ্যে সৌদি আরব ত্যাগ করেছেন। কিন্তু এসব তথ্য সত্ত্বেও নতুন অ্যামনেস্টির আওতায় কোন দেশের কতজন ফিরে যাচ্ছেন, তার কোনো সঠিক পরিসংখ্যান পাওয়া যায় নি।