বাংলাদেশকে কড়া বার্তা ইউরোপীয় কমিশনের

EUইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট জ্যাঁ-ক্লদ জাঙ্কার বাংলাদেশি অভিবাসীদের ইতালি থেকে ফিরিয়ে নিতে ঢাকা কোনো পদক্ষেপ না নিলে বাংলাদেশিদের জন্য ইইউ ভিসা সীমিত করার হুমকি দিয়েছেন। ইতালীয় প্রধানমন্ত্রী পাওলো জেন্তিলনিকে গত মঙ্গলবার দেয়া এক চিঠিতে মি. জাঙ্কার ওই হুমকির বিষয়টি উল্লেখ করেন।
তিনি ইতালীয় নেতাকে আরো জানান যে, ইতালিতে বর্তমানে অবস্থানরত বাংলাদেশি অভিবাসীদের প্রত্যাবসন নিয়ে আলোচনার জন্য তিনি ব্রাসেলসে একটি বিশেষ ‘কন্টাক্টস টিম’ গঠন করেছেন। গতকাল এ খবর দিয়েছে ভয়েজ অব আমেরিকা।
রিপোর্টে বলা হয়, ইতালি দিয়ে ইউরোপে পলায়নরত অভিবাসীদের অধিকাংশই হচ্ছে নাইজেরিয়া, বাংলাদেশ এবং গিনির নাগরিক।
ভোয়ার ওই রিপোর্টে আরো উল্লেখ করা হয় যে, মি. জাঙ্কার এ মর্মে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন যে, বাংলাদেশকে তার অভিবাসীদের ফিরিয়ে নিতে তিনি ঢাকার উপরে চাপ প্রয়োগ করবেন। কারণ প্রত্যাগত বাংলাদেশিদের অধিকাংশই আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী কোনো সুরক্ষা পাওয়ার অধিকারী নন। তিনি এই দক্ষিণ এশীয় দেশটি যদি কোনো পদক্ষেপ না নেয়, তাহলে তিনি বাংলাদেশিদের ইইউ ভিসা লাভ সীমিত করে দিতে উদ্যোগী হবেন।
গত ৫ই মে বৃটেনের ইন্ডিপেন্ডেন্ট রিপোর্ট বলেছে, বাংলাদেশই এখন বৃহত্তম ‘কান্ট্রি অব অরিজিন’ যেখান থেকে এখন সবথেকে বেশি অভিবাসী সমুদ্র পথে ইউরোপে ঢুকছেন। গত বছর প্রথম তিন মাসে ইতালিতে একজন বাংলাদেশি প্রবেশ করেছিল। এবছরের প্রথম তিন মাসে সেই সংখ্যা ২৮০০ তে উন্নীত হয়েছে।
উল্লেখ্য যে, ইউরোপীয় কমিশন নতুন করে ভূমধ্যসাগরীয় অভিবাসী সংকট মোকাবিলায় ইতালিকে আরো ১১৬ মিলিয়ন ডলার প্রদানের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। কমিশনের এ নতুন প্রতিশ্রুতির ফলে ইতালিকে দেয়া ইউরোপীয় কমিশনের সহায়তা অতিরিক্ত সাড়ে ১২ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে এখন ১শ’ কোটি ডলার ছাড়িয়ে গেছে।
রিপোর্টে বলা হয়, ২০১৭ সালের প্রথম ভাগে ইতালিতে সমুদ্র পথে প্রায় ৮৪ হাজার অভিবাসী এসেছেন। এই সংখ্যা গত বছরে আসা অভিবাসীদের চেয়ে ২০ শতাংশ বেশি। সারা ইতালিতে ডিটেনশন সেন্টার এবং অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে বিভিন্ন দেশ থেকে আসা অভিবাসীদের উপস্থিতি সংখ্যায় ইতোমধ্যে দুই লাখ ছাড়িয়ে গেছে। এখন আর তাতে ধারণ ক্ষমতা নেই। এর বাইরেও অবৈধভাবে অভিবাসীরা ইতালির শ্রম বাজারে সক্রিয় রয়েছে।
এদিকে গত মঙ্গলবার ভূমধ্যসাগরের বুক থেকে উদ্ধারকর্মীরা গর্ভবতী নারীসহ ১৩ জনের লাশ উদ্ধার করেছেন। স্প্যানিশ এনজিও ‘প্রোঅ্যাক্টিভা ওপেন আর্মস’ এক টুইটার বার্তায় জানিয়েছে, মোট লাশের সংখ্যা ১৩ জন। ওই দিন ১৬৭ জনকে জীবিত উদ্ধার করা হয়। সেভ দ্যা সিলড্রেন পরিচালিত একটি জাহাজ প্রায় ৭০ জন অভিবাসীকে একটি ক্ষুদ্র নৌকা থেকে উদ্ধার করেছে একই দিনে। তারা এই ক্ষুদ্র নৌকায় চড়ে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দেয়ার চেষ্টা করেছিল।
অন্যদিকে ইউনিসেফ এক রিপোর্টে বলেছে, আফ্রিকা থেকে পলায়নরত শিশুরা ইউরোপে যেতে চাইছে না। একটি নতুন সমীক্ষায় দেখানো হয়েছে, ৭৫ শতাংশ শিশু কারও সাহায্য ছাড়াই নিজ নিজ দেশ ত্যাগের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। প্রাথমিকভাবে ইউরোপে আসা তাদের উদ্দেশ্য নয়। কিন্তু তারা নিকটবর্তী দেশগুলোতে কাজ পাওয়ার চেষ্টা করে থাকে। শত শত উদ্বাস্তু অভিবাসী শিশু ইউনিসেফ ইতালিকে বলেছে, লিবিয়ায় অপহরণ, গ্রেপ্তার এবং কারাবাস ছাড়াও অন্যান্য অভিবাসীদের প্রতি সহিংসতা প্রত্যক্ষ করে তারা সমুদ্র পাড়ি দিয়ে ইউরোপে পৌঁছানোর ঝুঁকি নিয়েছে। অন্তত ১২ হাজার ২শ’ শিশু চলতি বছরের প্রথম ভাগে ইতালিতে পৌঁছায়।

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন...
Close
Back to top button