সংকোচিত হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসের সুযোগ
পরিবারিক কোটায় গ্রিন কার্ড নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে স্থায়ী বসবাসের সুযোগ সীমিত করা, শরণার্থীর সংখ্যা কমানো ও ডিভি (ডাইভারসিটি ভিসা) লটারি বন্ধ করতে নতুন একটি বিল উঠেছে যুক্তরাষ্ট্র সিনেটে।
সাঁড়াশি অভিযান চালিয়ে অবৈধ অভিবাসনে রাশ টানার পর বৈধ অভিবাসী কমানোর দিকে মনোযোগী ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনের ইচ্ছাপূরণে রিপাবলিকান দলীয় দুই সিনেটর বুধবার বিলটি তুলেছেন।
আরকানসর সিনেটর টম কটন ও জর্জিয়ার সিনেটর ডেভিড পারডুর তোলা ‘রিফর্মিং আমেরিকান ইমিগ্রেশন ফর অ্যা স্ট্রং ইকোনমি (রেইজ) অ্যাক্ট’ শীর্ষক এই বিল আইনে পরিণত হলে পারিবারিক কোটায় যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক অথবা গ্রিনকার্ডধারীরা কেবলমাত্র তাদের স্বামী-স্ত্রী ও ২১ বছরের কম বয়সী সন্তানেরা যুক্তরাষ্ট্রে আনতে পারবেন। বোন, ভাগ্নে-ভাগ্নি, দুলাভাই, দাদা-দাদী-নানা-নানীকে আনার বর্তমান সুযোগ বন্ধ হয়ে যাবে।
যুক্তরাষ্ট্রের অর্ধশত বছরের বেশি পুরনো ‘ইমিগ্রেশন অ্যান্ড ন্যাশনালিটি অ্যাক্ট’ সংশোধন করে কানাডা ও অস্ট্রেলিয়ার আদলে তৈরি বিলটি আইনে পরিণত হলে ১০ বছরে অভিবাসী ভিসায় যুক্তরাষ্ট্রে আগমনের ৫০ শতাংশ কমে যাবে। নতুন আইনে কেবলমাত্র ইংরেজিভাষী, দক্ষ ও আর্থিকভাবে সক্ষম বিদেশিরা বৈধ ভিসায় যুক্তরাষ্ট্রে আসার সুযোগ পাবেন।
বিলটি আইনে পরিণত হলে স্থায়ীভাবে বসবাসের ভিসা পাওয়ার ক্ষেত্রে শিক্ষাগত যোগ্যতা, ইংরেজিতে দক্ষতা, উচ্চ বেতনে চাকরির অভিজ্ঞতা, তুলনামূলকভাবে কম বয়স ও পেশাগতভাবে বিশেষ যোগ্যতাসম্পন্নরা অগ্রাধিকার পাবেন। সেইসঙ্গে বছরে ৫০ হাজারের বেশি শরণার্থীকে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করতে দেওয়া হবে না।
এই ধরনের একটি বিল ফেব্রুয়ারিতে প্রথম দফায় সিনেটে তোলার পর ডেমক্রেটিক পার্টি দূরের কথা অনেক রিপাবলিকান কংগ্রেসম্যান কিংবা সিনেটররা তা আমলে না নেওয়ায় আবার তোলা হলো।
ট্রাম্প ও তার নীতি নির্ধাকরা বলছেন, এই বিল আইনে পরিণত হলে যুক্তরাষ্ট্রের খেটে খাওয়া মানুষদের বেকারত্বের হার কমবে এবং একইসঙ্গে মজুরিও বাড়বে। পাশাপাশি মেধাবী ও দক্ষ বিদেশিরা যুক্তরাষ্ট্রে এসে দেশের উন্নয়নে অবদান রাখতে পারেবে।
বিলের উত্থাপক সিনেটর কটন বলেন, আমেরিকার অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির প্রশ্নে যে ধরনের অভিবাসন নীতির প্রয়োজন, তা বহুদিন থেকে নেই। এর ফলে কঠোর পরিশ্রমী আমেরিকানরা ন্যায্য পারিশ্রমিক থেকে চরমভাবে বঞ্চিত হচ্ছেন। এখন সময় এসেছে সব কিছুকে জনগণের কল্যাণে ঢেলে সাজানোর।
আমরা একটি অভিবাসন ব্যবস্থা চালু করতে চাই, যেখানে শ্রমিকেরা ন্যায্য পারিশ্রমকি পাবেন, কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে এবং প্রতিটি আমেরিকানই অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি অর্জনে সক্ষম হবে।
সিনেটর পারড্যু বলেন, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের অন্যতম নির্বাচনী অঙ্গীকার আমেরিকার অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ঘটানো এবং বহু বছরের ভঙ্গুর অভিবাসন ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজানো। বিদ্যমান অভিবাসন ব্যবস্থা কোনোভাবেই সময়ের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ নয়।
আমাদের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির ক্ষেত্রেও সহায়ক নয়। যারা যুক্তরাষ্ট্রে এসে নিজেদের ভাগ্য গড়তে চায়, তেমন মেধাবী বিদেশিদের আমরা স্বাগত জানানোর মত অভিবাসন ব্যবস্থা চাই। রেইজ অ্যাক্ট সে স্বপ্নেরই পরিপূরক, যা যুক্তরাষ্ট্রের উন্নয়ন-অগ্রগতিতে অবদান রাখতে দক্ষ বিদেশীদের স্বাগত জানাবে।
এই বিল পাশ হলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে বাংলাদেশিরা। প্রায় একযুগ ধরে পারিবারিক কোটায় গ্রিন কার্ড নিয়ে বছরে কমপক্ষে ২৫ হাজার বাংলাদেশি যুক্তরাষ্ট্রে আসছে।