মালয়েশিয়ায় মহাবিপাকে দেড় লাখ বাংলাদেশি
আলতাব হোসেন, মালয়েশিয়া থেকে ফিরে: অবৈধ শ্রমিক ধরতে মালয়েশিয়া সরকার স্মরণকালের সবচেয়ে বড় চিরুনি অভিযান শুরু করেছে। এতে মহাবিপাকে পড়েছেন মালয়েশিয়ায় অবৈধভাবে কাজ করা দেড় লাখের বেশি বাংলাদেশি শ্রমিক। এসব শ্রমিক বৈধ হতে দালালদের মাধ্যমে টাকা ও পাসপোর্ট দিয়ে প্রতারণার শিকার হয়েছেন। পাসপোর্ট না থাকায় এখন তারা পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। গ্রেফতার আতঙ্কে দূতাবাস থেকে আউটপাস নিয়ে দেশেও ফিরতে পারছেন না এসব হতভাগ্য শ্রমিক।
রোববার শুরু হওয়া অভিযানের প্রথম দিনেই ৫৪৬ অবৈধ শ্রমিক ধরা পড়েছেন, যার মধ্যে ৩৭ জন বাংলাদেশি। অবৈধ শ্রমিক ধরতে মালয়েশিয়ার অভিবাসন দফতর, পুলিশ, সিভিল ডিফেন্স, আর্মড ফোর্স, জাতীয় নিবন্ধন কর্তৃপক্ষসহ বিভিন্ন সংস্থার প্রায় ১ লাখ ৩৫ হাজার সদস্য এ অভিযানে অংশ নিচ্ছেন।
মালয়েশিয়ার অভিবাসন দফতরের পরিচালক আলিয়াস আহমাদ জানিয়েছেন, এ অভিযান আগামী তিন মাস চলবে।
বাংলাদেশ সরকারের হিসাবমতে, মালয়েশিয়ায় মোট পাঁচ লাখের মতো বাংলাদেশি শ্রমিক কমর্রত আছেন, যাদের বড় একটি অংশ বৈধতার জন্য সে দেশের সরকারের দেওয়া সুযোগ এরই মধ্যে কাজে লাগিয়েছে। বাকি প্রায় ৩০ থেকে ৪০ হাজারের মতো শ্রমিক এ সুযোগ নিতে ব্যর্থ হয়ে এখনও অবৈধ অবস্থায় দেশটিতে রয়েছেন বলে জানিয়েছে মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশ হাইকমিশন।
ধরপাকড়ের খবরে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে বাংলাদেশি অবৈধ শ্রমিকদের মধ্যে। কুয়ালালামপুরের কাছেই ক্লাং শহরে একটি বিপণিবিতানে কাজ করেন যশোরের চাষাঢ়া এলাকার আবুল কাশেম। তিনি জানান, অভিযানের কারণে তারা আতঙ্কে আছেন। তিনি বলেন, বৈধতার জন্য সব ধরনের চেষ্টা চালিয়েছেন। বৈধতার পারমিট তো হয়ইনি, উল্টো পুলিশ এখন তাদের খুঁজছে। তারা এখন কোথায় যাবেন, কী করবেন? তারা একটা আতঙ্কের মধ্যে আছেন। তিনি জানান, তারা ১৭ জন ওই বিপণিবিতানে কাজ করেন। এর মধ্যে মাত্র তিনজনের বৈধ কাগজ রয়েছে।
কুয়ালালামপুরের জালান পুর্তার একটি হোটেলে কাজ করেন নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের হাবিবুর রহমান। তিনি বলেন, দেড় বছর আগে স্টুডেন্টস ভিসায় তিনি মালয়েশিয়ায় আসেন। পরে বৈধ হতে তিনি বাংলাদেশ দূতাবাসের সামনে ঢাকার আমির হোসেন নামের এক দালালকে দুই লাখ টাকা ও পাসপোর্ট দিয়েছেন। কিন্তু ওই দালাল তাকে ভুয়া কাগজপত্র দিয়েছে।
তার মতো আরও প্রায় ৭০ জন বাংলাদেশিকে ওই দালাল দূতাবাসের জাল কাগজ দিয়ে সর্বনাশ করেছে। দালালের সঙ্গে দূতাবাসের কর্মচারীদের যোগসাজশ রয়েছে বলে তিনি দাবি করেন।