ঐতিহ্যের অনন্য নিদর্শন বার্লিনের মসজিদগুলো

barlineজার্মানির রাজধানী বার্লিনে ৮০টিরও বেশি মসজিদ রয়েছে। ক্লাসিক বা আধুনিক যে ধরনেরই হোক না কেন, এই মসজিদগুলো বার্লিনের নানা অঞ্চলের এবং নানান সময়ের চিহ্ন বহন করে।
জার্মানির সবচেয়ে পুরনো মসজিদটি হচ্ছে বার্লিনের শহরে কেন্দ্রে অবস্থিত আবাসিক এলাকা ভিলমার্সডর্ফে। এই আহমেদিয়া মসজিদটি জার্মান স্থপতি কার্ল আগুস্ট হ্যারমানের পরিকল্পনায় এবং ভারতের বিখ্যাত ‘তাজমহল’-এর মডেলে তৈরি করা হয়। মসজিদটির উদ্বোধন করা হয় ১৯২৮ সালে।
এই মসজিদটি উদ্বোধন করার সময় প্রতিবাদের ঝড় উঠলেও পরে তা মেনে নেয়া হয়। মেনে নেয়ার উদ্যোগের পেছনে ছিল হাইনার্সডর্ফের সংগঠন ‘হাইনার্সডর্ফ তোমার দরজা খোলো’ এবং প্রথম ইমাম আবদুল বাসিত তারিকের মোটো ছিল, ‘কারো জন্য ঘৃণা নয়, সবার জন্য ভালোবাসা’- এই নীতিবাক্য। নারী স্থপতি মুবাশরা ইলিয়াস বেশ সাদামাটাভাবেই এই মসজিদের কাজ করেছেন। এখানে ২৫০ জন মুসল্লির নামাযের ব্যবস্থা রয়েছে। মসজিদের প্রধান ঘরটির ঠিক ওপরেই মহিলাদের জন্যও রয়েছে আলাদা ঘর।
বার্লিনের নয়ক্যোলন এলাকার এই মসজিদটিকে মুলমানদের সাংস্কতিক মিলনকেন্দ্র হিসেবেও ব্যবহার করা হয়। বার্লিনের সবচেয়ে বড় এই মসজিদে দেড় হাজার মানুষ একসঙ্গে নামায আদায় করতে পারেন। মসজিদটিতে বিশেষ আয়োজনের জন্য আলাদা জায়গাও রয়েছে। ২০১২ সালে জার্মান প্রেসিডেন্ট ইওয়াখিম গাউক তার দায়িত্ব গ্রহণের পরপরই মসজিদটি পরিদর্শন করেন। মুসলমানের জন্য যে কবরস্থান রয়েছে, ঠিক তার পাশেই ১৯৮০ সালে এই মসজিদ তৈরি করা হয়। পরে অবশ্য এটা আরও বড় করা হয়েছে, বাড়ানো হয়েছে এটির পরিধি।
জার্মানির তুর্কি সম্প্রদায়ের মানুষরা অন্যান্য ধর্মের মানুষদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করার চেষ্টা করে। এখানে ইসলাম ধর্ম এবং অন্যান্য ধর্মের নানা আচার-অনুষ্ঠান নিয়ে আলোচনা হয়। যারা এখানে আসেন তাদের পুরো মসজিদটা ঘুরে দেখানো এবং ইসলাম সম্পর্কে ধারণা দেয়া হয়। প্রথম দেখে বোঝাই যায় না যে এটা একটা মসজিদ। উমর আল-ইবনে খাতাব মসজিদটি বার্লিনের আবাসিক এলাকা ক্রয়েৎসব্যার্গের মধ্যমণি। বলা বাহল্য, এই এলাকা তুর্কি অধ্যুষিত। মসজিদের ভেতরে নামাজের ঘরগুলোর আশেপাশে ছোটখাটো দোকান, কফি শপ, ট্রাভেল এজেন্সি ইত্যাদি রয়েছে। ২০০৮ সালে শুরু হওয়া এই মসজিদটিতে একটি মাদরাসাও রয়েছে।
মাসহারি সেন্টারের মসজিদের বেজমেন্ট, অর্থাৎ মাটির নিচের একটি ঘরে তৈরি করা হয়েছে এই সুন্দর ওজু ঘরটি। এখানে পুরুষ এবং নারীরা আলাদাভাবে ওজু করতে পারেন, অর্থাৎ পাঁচ ওয়াক্ত নামাযের আগে শারীরিক ও মানসিকভাবে নিজেকে বিশুদ্ধ করার ব্যবস্থা রয়েছে এই মসজিদে। ঝাড়বাতির নিচে নামাযের এই ঘরটিতে একসঙ্গে এক হাজার জন মুসলমান নামায পড়তে পারেন। তুর্কি বংশোদ্ভূত মানুষ ছাড়াও মসজিদে নামায পড়তে আসেন আরব, আফ্রিকান, বসনীয় ও অন্যান্য দেশের মুসলমানরা। প্রতি শুক্রবার ঐতিহ্যগতভাবে জুম্মার নামায হয় আরবি ভাষায়। তবে সবার সুবিধার্থে দেয়ালে লাগানো মনিটরে আরবি এবং তুর্কি ভাষাতেও পড়ে নেয়া যায় অনুবাদ করা আয়াতগুলো।

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন...
Close
Back to top button