যুক্তরাজ্যই সিরিয়াকে রাসায়নিক অস্ত্র দিয়েছিল
সিরিয়ায় রাসায়নিক অস্ত্রের নার্ভ গ্যাস রপ্তানি করেছিল যুক্তরাজ্য। যুক্তরাজ্যভিত্তিক একটি কোম্পানিকে নার্ভ গ্যাসের রাসায়নিক রপ্তানিতে অনুমোদন দিয়েছিল বলে কড়া অভিযোগ উঠেছে দেশটির ক্যামেরনের সরকারের বিরুদ্ধে। রাসায়নিক গ্যাস নার্ভের ব্যবহারের দায়ে যখন সিরিয়ায় হামলার তুমুল উত্তেজনাকর প্রস্তুতি নিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমাশক্তিগুলো, ঠিক তখন সিরিয়াকে সেই গ্যাস সরবরাহ করেছে বলে অভিযোগ ওঠে খোদ ব্রিটিশ সরকারের বিরুদ্ধে।
কর্মকর্তারা জানান, ২০১২ সালে ব্রিটেন একটি কোম্পানিকে পটাশিয়াম ফ্লোরাইড ও সোডিয়াম ফ্লোরাইড রপ্তানির অনুমোদন দেয়। এ দুই রাসায়নিক দিয়েই ‘সারিন’র মত মারাত্মক ধরনের নার্ভ গ্যাস তৈরি করতে হয়। যুক্তরাজ্য সরকার কেন সিরিয়াকে এ ধরনের রাসায়নিক রপ্তানিতে অনুমোদন দিয়েছিল মঙ্গলবার ব্রিটিশ পার্লামেন্টে এ নিয়ে ব্যাপক বিতর্ক জমে ওঠে। মারাত্মক ক্ষোভের মুখে পড়ে ডেভিড ক্যামেরনের সরকার। ব্রিটিশ পার্লামেন্টের এমপিরা বাণিজ্যমন্ত্রী ভিন্সি ক্যাবলকে এ বিষয়ে জবাবদিহি করতে বলেছেন। ২০১২ সালে যখন সিরিয়ায় ভয়াবহ গৃহযুদ্ধ চলছে ঠিক এরকম একটি সময়ে দেশটিকে কেন এধরনের মারাত্মক গ্যাস রপ্তানির অনুমোদন দেয়া হয়েছিল মন্ত্রীর কাছে এর ব্যাখ্যা চেয়েছেন তারা। অবশ্য এর আগে বাণিজ্যমন্ত্রী কেবল স্বীকার করেন, তার কর্মকর্তারা অনির্ধারিত এসব রাসায়নিক রপ্তানির অনুমোদন দিয়েছিল একটি কোম্পানিকে। ২১ আগস্ট সিরিয়ার রাজধানী দামেস্কের উপশহরে হামলায় সরকারি বাহিনীর বিরুদ্ধে রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহারের অভিযোগ ওঠে। ওই হামলায় অন্তত ১৫ শ বেসামরিক লোক নিহত হন। যাদের মধ্যে ৪২৬ শিশু রয়েছে। সিরিয়ার বিরোধী দল এ হামলায় আসাদের বাহিনীর বিরুদ্ধে রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহারের অভিযোগ তোলে। এ অভিযোগের পর রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহারের দায়ে যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলো সিরিয়ার বিরুদ্ধে সামরিক হস্তক্ষেপের কথা বলে আসছে। শুরু থেকেই যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম মিত্র ছিল যুক্তরাজ্য। সিরিয়ায় হামলার ব্যাপারে একপায়ে খাড়া ছিলেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন। তবে পার্লামেন্টে ক্যামেরন সিরিয়ায় হামলার প্রস্তাব তুললে ভোটে হেরে যান। অধিকাংশ এমপিরাই সিরিয়ায় হামলার বিপক্ষে ভোট দেন। জাতিসংঘের অস্ত্র পরিদর্শকদল তদন্ত শেষ করে সিরিয়া ছেড়ে চলে গেছে। তবে রাসায়নিক অস্ত্রের ব্যবহার হয়েছে কিনা সে বিষয়ে নিশ্চিত হতে জাতিসংঘের প্রতিবেদনের জন্য আরো কয়েক সপ্তাহ অপেক্ষা করতে হবে। কিন্তু এরই মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র দাবি করছে, আগস্টের ওই হামলায় সিরিয়ার আসাদ বাহিনী রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহার করেছে বলে তাদের কাছে প্রমাণ আছে।
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি ঘোষণা দিয়ে বলেছেন, নার্ভ এজেন্টের প্রমাণ আছে। যু্ক্তরাষ্ট্র দাবি করছে, সিরিয়ায় ওই হামলায় শিকার লোকজনের শরীর থেকে সংগ্রহ করা চুল ও রক্তের নমুনা পরীক্ষা করে তারা ‘সারিন’ গ্যাসের প্রমাণ নিশ্চিত করতে পেরেছে। তবে যুক্তরাজ্যের বাণিজ্য, উদ্ভাবন ও দক্ষতা বিষয়ক মন্ত্রণালয় অনুমোদন দেয়ার কথা স্বীকার করলেও এ অভিযোগ অস্বীকার করেছে। মন্ত্রণালয়টি এ বিষয়ে ব্যাখ্যা দিয়ে জানিয়েছে, ২০১২ সালের জানুয়ারিতে যুক্তরাজ্যের একটি অজ্ঞাত কোম্পানিকে দেয়া ওই লাইসেন্সটি মঞ্জুর করা হয়েছিল। তবে মন্ত্রণালয় জোর দিয়ে বলছে, এসব মারাত্মক রাসায়নিক উপাদান সিরিয়ায় পাঠানো সম্ভব হয়নি। কারণ ঘটনাক্রমে ওই বছরের জুলাইয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়ন সিরিয়ার বিরুদ্ধে অবরোধ শক্তিশালী করে। আর এসব উপাদান এ অবরোধের আগে পাঠানো যায়নি বলে জানায় মন্ত্রণালয়। সূত্র: দি ইন্ডিপেন্ডেন্ট
http://www.independent.co.uk/news/uk/politics/revealed-uk-government-let-british-company-export-nerve-gas-chemicals-to-syria-8793642.html