ইউরোপে উগ্র-জাতীয়তাবাদ বিস্তারে সতর্কতা
বিশ্বের বিভিন্ন দেশের পাশাপাশি সাম্প্রতিক সময়ে ইউরোপেও উত্থান ঘটছে উগ্র জাতীয়তাবাদের। এ নিয়ে আশঙ্কায় রয়েছেন মূলধারার রাজনীতিকরা। তাই জনগণকে নাৎসিবাদের নিপীড়নের কথা মনে রেখে সতর্ক হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) নেতারা।
গত ২৩ আগস্ট ছিল জার্মান-সোভিয়েত অনাক্রমণ চুক্তির বার্ষিকী। ১৯৩৯ সালে তৎকালীন সোভিয়েত রাশিয়ার রাষ্ট্রনায়ক জোসেফ স্ট্যালিন এবং নাৎসি জার্মানির অ্যাডলফ হিটলারের মধ্যে এই চুক্তিকেই ধরে নেয়া হয় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরুর লক্ষণ হিসেবে।
ইউরোপের নাগরিকদের সেই দুঃসহ স্মৃতিই মনে রাখার পরামর্শ দিয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন। পাশাপাশি উগ্র জাতীয়তাবাদ, বিদেশিদের সম্পর্কে অহেতুক ভয় সৃষ্টি এবং ঘৃণা ছড়ানো বক্তব্য থেকেও সাবধান থাকার আহ্বান জানিয়ে একটি বিবৃতিও দিয়েছে সংস্থাটি।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘মানুষের মর্যাদাবোধ, মৌলিক অধিকার, গণতন্ত্র ও আইনের শাসন এবং উগ্র জাতীয়তাবাদের মতো মানবিক মূল্যবোধের ওপর ভিত্তি করেই গড়ে উঠেছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন। এই অধিকার ও স্বাধীনতা রক্ষায় আমাদের প্রতিনিয়ত লড়াই চালিয়ে যেতে হবে।’
কয়েকটি সন্ত্রাসী হামলার পর ‘চরমপন্থা, জাতীয়তাবাদ, বিদেশিভীতি এবং ঘৃণার কথা এখনো ইউরোপে বিভিন্ন আয়োজনে শোনা যায়। শুধুমাত্র ক্ষতিগ্রস্তদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতেই অতীত স্মৃতিচারণ নয়, বরং এই ধরনের ঘটনা যাতে আর না ঘটে, সে জন্যই এই মতবাদকে প্রতিহত করা উচিত।’ শোষণ-নির্যাতনের কোনো স্থান ইউরোপীয় ইউনিয়নে নেই বলেও জানানো হয়েছে সংস্থার বিবৃতিতে।
ইউরোপীয় ইউনিয়ন মনে করিয়ে দিয়েছে, সোভিয়েত-নাৎসী অনাক্রমণ চুক্তির এক সপ্তাহের মধ্যে পোল্যান্ড আক্রমণ করে বসে হিটলারের বাহিনী। আর অন্যদিক থেকে এগিয়ে আসে সোভিয়েত বাহিনীও। পূর্ব-পশ্চিম দুই দিক থেকে আসা সেই আক্রমণ সামলাতে পারেনি অপ্রস্তুত পোল্যান্ড। তাই আক্রান্ত হওয়ার ৩৬ দিনের মাথায় পরাজয় স্বীকার করে নেয় দেশটি।
এরপর তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়ন এবং জার্মানি মিলে ভাগ করে নেয় পোল্যান্ড। অল্প একটু অংশ পায় সস্নোভাকিয়া। সেই ভাগাভাগির পর পাঁচ বছর ধরে গণহত্যার শিকার হয় পোলিশ নাগরিকরা। বিভিন্ন পরিসংখ্যান বলছে, ওই গণহত্যায় প্রাণ হারায় প্রায় পাঁচ লাখ সাধারণ মানুষ।
এই চুক্তি দুই বছর স্থায়ী হয়। ১৯৪১ সালের জুনে হিটলার বাহিনী রাশিয়া আক্রমণ করলে ভেস্তে যায় সেই অনাক্রমণ চুক্তি। বিভিন্ন দেশে পোলিশ দূতাবাস স্মরণ করেছে এই দিনটিকে।
তবে রুশ গণমাধ্যমে এই বিষয়টির বদলে গুরুত্ব পেয়েছে ১৯৪৩ সালের একটি ঘটনা। সেই বছরের ২৩ আগস্ট কুস্র্কের যুদ্ধে সোভিয়েত বাহিনীর হাতে নাৎসী বাহিনীর পরাজয় হয়। কুস্র্কের যুদ্ধকে মানব ইতিহাসের সবচেয়ে বড় সম্মুখযুদ্ধের একটি বলে মনে করা হয়।
২৩ আগস্ট ইউরোপের বিভিন্ন দেশে সমাজতান্ত্রিক শাসনের সময় সংগঠিত ‘অপরাধের’ বিচার নিয়ে একটি সম্মেলনের আয়োজন করে এস্তোনিয়া। তবে ইউরোপের একমাত্র দেশ হিসেবে গ্রিস এই সম্মেলনে অংশগ্রহণে অস্বীকৃতি জানায়। এই দিনটিকে ঘিরে গ্রিক বিচারমন্ত্রীর একটি বক্তব্যও বেশ গুরুত্ব পেয়েছে রুশ পত্র-পত্রিকায়। তিনি বলেছিলেন, ‘নাৎসীবাদের মতো সমাজতন্ত্রকে আমরা চরমপন্থি মতবাদ বলে মনে করি না।’ -ডয়চে ভেলে