বিএনপি ক্ষমতায় এলে দেশ আবারো পিছিয়ে পড়বে : উখিয়ার জনসভায় প্রধানমন্ত্রী

Hasina‘রিক্ত আমি সিক্ত আমি দেয়ার কিছু নাই, আছে শুধু ভালোবাসা দিলাম আজি তাই’। উখিয়ার জনসভায় প্রধানমন্ত্রী তার ৩০ মিনিটের ভাষণ শেষ করার সময় এই কবিতাই শুনালেন জনসাধারণকে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, এখন সরকারের বিদায় বেলা। তাই দেয়ার প্রতিশ্রুতি নয়। তবে আগামী নির্বাচনে আবারো নৌকায় ভোট দেয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, আপনারা নৌকায় ভোট দেবেন কি না আমার সাথে ওয়াদা করেন। এ সময় উপস্থিত কয়েক হাজার মানুষ হাত তোলে প্রধানমন্ত্রীর কাছে ওয়াদাবদ্ধ হন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে পুরোপুরি ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত করতে চাই এবং এ জন্য আওয়ামী লীগকেই রাষ্ট্র্র ক্ষমতায় থাকতে হবে। কারণ আওয়ামী লীগ মানেই উন্নয়ন, কিন্তু বিএনপি ক্ষমতায় এলে দেশ আবারো পিছিয়ে পড়বে। তিনি মঙ্গলবার বিকেলে উখিয়া উচ্চবিদ্যালয় মাঠে স্থানীয় আওয়ামী লীগ আয়োজিত এক জনসভায় প্রধান অতিথির ভাষণে এসব কথা বলেন। তিনি বিকেল সোয়া ৪টায় একটি হেলিকপ্টারে উখিয়ার জনসভাস্থলে পৌঁছেন। এরপর তিনি সুইচ টিপে ৩৮টি উন্নয়ন প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর ও উদ্বোধন ঘোষণা করেন। দুপুর থেকে থেমে থেমে গুঁড়িগুঁড়ি বৃষ্টির মধ্যেই প্রধানমন্ত্রী প্রায় ৩০ মিনিট বক্তব্য রাখেন। এ সময় তিনি বলেন, বিদায় বেলায় তেমন কিছু দেয়ার সময় নয় তবে কক্সবাজারের মানুষের জন্য যত উন্নয়ন করা দরকার আমরা সেটি করব। আওয়ামী লীগ মানে দেশের উন্নয়ন আর বিএনপি-জামায়াত হচ্ছে দেশকে পিছিয়ে দেয়া এবং জঙ্গিবাদী রাষ্ট্র হিসেবে বিশ্বের মধ্যে পরিচিত করা। প্রধানমন্ত্রী তার সময়ের বিভিন্ন উন্নয়ন চিত্র তোলে ধরে বলেন, আমরা ক্ষমতায় এসে দেশে কঠোর হাতে জঙ্গিবাদ দমন করেছি। দেশের ব্যাপক উন্নয়ন করেছি। দেশকে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ করেছি। মিয়ানমারের সাথে সমুদ্র জয় করেছি। ২০১৪ সালে ভারতের সাথেও সমুদ্র জয়ের দৃঢ় আশাবাদ ব্যক্ত করে প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, এটি কেবল আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় থাকলে পারবে। তিনি শিক্ষা ক্ষেত্রে ব্যাপক উন্নয়নের বর্ণনা দিয়ে বলেন, আমরা দেশের প্রতিটি মানুষকে শিক্ষিত করে একটি শিক্ষিত জাতি তৈরি করে বিশ্বের দরবারে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে চাই। দেশের ছেলেমেয়েরা যেন মানুষের মতো মানুষ হতে পারে সে জন্য পাঁচ লাখ ৩৩ হাজার শিক্ষার্থীকে বৃত্তি দিয়ে সরকার আর্থিক সহায়তা দিচ্ছে। দেশকে ডিজিটালাইজ করার বর্ণনা দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপি একটি মোবাইল সেট এক লাখ ৩০ হাজার টাকা বিক্রি করেছিল। আমরা সেই মোবাইল সেট অল্প পয়সায় মানুষের হাতে হাতে পৌঁছে দিয়েছি। প্রতিটি ইউনিয়নে তথ্য সেবা কেন্দ্র করেছি। মানুষ এখন ঘরে বসেই সব সেবা পাচ্ছে। তিনি বিরোধীদলীয় নেত্রী খালেদা জিয়ার প্রতি ইঙ্গিত করে বলেন, ওনি ৪৮ ঘণ্টার আলটিমেটাম দিয়ে বললেন, আমরা নাকি পালাবার পথ পাব না। আর বড় হুজুর (আল্লামা আহমদ শফী) ‘তেঁতুল তত্ত্ব আর ১৩ দফা দিয়ে এ দেশের অর্ধেক নারীকে শিক্ষায় পিছিয়ে রাখতে চায়। তারা দেশকে জঙ্গিবাদী রাষ্ট্রে পরিণত করতে চায় বলে নারী শিক্ষায় বাধা সৃষ্টি করছে।
খালেদা জিয়াকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, ওনি সর্বসাকুল্যে মেট্রিক পরীক্ষা দিয়েছিলেন। উর্দু ও অঙ্ক ছাড়া আর সব বিষয়ে ফেল করেছেন। অঙ্কে তিনি সেই সময় থেকে ভালো বলেই এখন দুর্নীতিতে পারদর্শী। ক্ষমতায় গেলে তিনি শুধু পরিবার-পরিজন নিয়ে দুর্নীতি করে টাকা কামাই করতে জানেন। বিএনপি ক্ষমতায় আসতে চায় ব্যবসায় করার জন্য। তিনি আরো বলেন, ইসলামের কথা বলে হেফাজত-জামায়াত মসজিদে আগুন দিয়েছে। শত শত কুরআন শরিফে আগুন দিয়েছে। তিনি বলেন, আমি ওই হুজুরকে জিজ্ঞেস করি যিনি প্রথম ইসলাম কবুল করেন তিনি একজন নারী, যিনি প্রথম শহীদ হন তিনিও নারী। কিন্তু ইসলামের কথা বলে কেন তিনি এখন নারীদের শিক্ষা ও অগ্রগতিতে বাধা দিচ্ছেন। বক্তব্যের শেষ পর্যায়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, একজন মানুষ একটা শোকের যন্ত্রণা সইতে পারে না। আমি মা-বাবাসহ পরিবারের সবাইকে হারানোর যন্ত্রণা নিয়েও দেশের জন্য কাজ করতে রাজনীতিতে এসেছি এবং শেষ পর্যন্ত বাংলার মানুষের মুখে হাসি ফুটাবই।
উখিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আদিল উদ্দিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত জনসভায় বক্তব্য রাখেন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রী ইয়াফেস ওসমান, উখিয়া টেকনাফ আসনের এমপি আবদুর রহমান বদি, সাফিয়া খাতুন এমপি, অধ্যাপিকা এথিন রাখাইন এমপি, কক্সবাজার জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মোস্তাক আহমদ চৌধুরী, বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের সভাপতি নাজমুল আহসান পাপন, হাসিনা মান্নান এমপি, যুবলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি ওমর ফারুক চৌধুরী, চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোসলেম উদ্দিন আহমদ, কক্সবাজার জেলা সভাপতি অ্যাডভোকেট এ কে আহমদ হোসাইন, সহসভাপতি অধ্যাপক মোহাম্মদ আলী, সাধারণ সম্পাদক সালাহ উদ্দিন আহমদ সিআইপি, নজরুল ইসলাম চৌধুরী, কক্সবাজার জেলা প্রশিক্ষিত ইমাম সমিতির সভাপতি মওলানা সিরাজুল ইসলাম, জেলা জাসদ সভাপতি নইমুল হক চৌধুরী টুটুল, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা পিয়ারুল ইসলাম, ছিদ্দিকী নাজমুল আলম, কৃষক লীগ নেতা সোহেল রানা, চকরিয়া উপজেলা চেয়ারম্যান রেজাউল করিম, টেকনাফ উপজেলা চেয়ারম্যান আলহাজ শফিক মিয়া, অ্যাডভোকেট সিরাজুল মোস্তফা, অ্যাডভোকেট রনজিত দাশ, জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মোহাম্মদ শাহজাহান, স্থানীয় নেতা মাহমুদুল হক চৌধুরী, ইউপি চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর কবির চৌধুরী প্রমুখ। প্রসঙ্গত, উখিয়ার জনসভা হলেও বৃহত্তর চট্টগ্রাম ও আশপাশের এলাকা থেকে বিপুলসংখ্যক দলীয় নেতাকর্মীরা জনসভায় যোগ দেয়।
প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, গত নির্বাচনে আপনারা নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে আমাদের নির্বাচিত করেছেন। আমি এর জন্য উখিয়াবাসীর কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। তিনি আগামী নির্বাচনে নৌকা মার্কায় আবারো ভোট চান। নির্বাচিত হলে উখিয়া কলেজকে সরকারি করার প্রতিশ্র“তি দেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, গত ২৯ সেপ্টেম্বর কিভাবে সাম্প্রদায়িক হামলা চালানো হয়েছে আপনারা দেখেছেন; কিন্তু আমার আওয়ামী লীগের কর্মী ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাদের সুরা করেছে। বাংলাদেশ একটি সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ, এ দেশে সব ধর্মের মানুষের সমান অধিকার রয়েছে। তিনি দাবি করেন, আওয়ামী লীগ সরকার যে উন্নয়ন করেছে অতীতের কোনো সরকার তা করতে পারেনি।
প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গী হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহিউদ্দিন খান আলমগীর, শিল্পমন্ত্রী দিলীপ বড়ুয়া, বন ও পরিবেশমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত ড্যান মজিনা, ভারতের রাষ্ট্রদূত পংকজ শরণ, রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত আলেকজান্ডার এ নিখোলাএভ। –জি এ এম আশেক উল্লাহ, গোলাম আজম খান ও হুমায়ুন কবির জুশান উখিয়া থেকে

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন...
Close
Back to top button