মিয়ানমার সীমান্তে ‘ল্যান্ড মাইন’ ব্যবহার বন্ধে অ্যামনেস্টির দাবি
বাংলাদেশের সঙ্গে রাখাইন রাজ্যের সীমান্তে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর পুঁতে রাখা ল্যান্ড মাইন সীমান্তবর্তী সাধারণ মানুষের জন্য খুবই ঝুঁকিপূর্ণ উল্লেখ করে সেই মাইনের ব্যবহার অবিলম্বে বন্ধের দাবি জানিয়েছে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল।
শনিবার প্রকাশিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল বলেছে, বাংলাদেশের সীমান্তের কাছাকাছি মিয়ানমার নিরাপত্তাবাহিনীর বসানো ল্যান্ড মাইন বিস্ফোরিত হয়ে গত এক সপ্তাহে একজন নিহত এবং দুই শিশুসহ তিনজন গুরুতর আহত হয়েছে বলে নিশ্চিত হয়েছে তারা। রাখাইনের উত্তর-পশ্চিমের যে সীমান্ত ধরে মাইন বসানো হয়েছে, সেদিক দিয়েই মূলত গত প্রায় ১৫ দিনে জাতিসংঘের হিসেব মতে ২ লাখ ৭০ হাজারের মতো রোহিঙ্গা পালিয়ে বাংলাদেশে ঢুকেছে।
অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের সঙ্কট মোকাবিলা বিষয়ক পরিচালক তিরানা হাসান বলেন, ‘রাখাইনে চলমান ভয়াবহ পরিস্থিতির মধ্যে এটা আরেক হীনতার পরিচয়। সীমান্তের সঙ্গে লাগোয়া জনাকীর্ণ একটা চলার পথের কাছে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর অবিবেচকের মতো মারাত্মক অস্ত্রের নির্বিচারী ব্যবহার সাধারণ মানুষের জীবনকে প্রচণ্ড ঝুঁকির মধ্যে ফেলে দিচ্ছে।’রোহিঙ্গা-ল্যান্ড মাইন-মিয়ানমার
তিরানা বলেন, ‘প্রকাশ্যে অ্যান্টিপার্সোনেল ল্যান্ড মাইন ব্যবহার করছে, বিশ্বজুড়ে নর্থ কোরিয়া ও সিরিয়াসহ এমন হাতে গোনা কয়েকটি রাষ্ট্রীয় সামরিক বাহিনীর একটি মিয়ানমারের সেনাবাহিনী। নিপীড়ন থেকে আগেই পালিয়ে বাঁচার চেষ্টারত নিরীহ মানুষদের বিরুদ্ধে এই জঘন্য কাজ কর্তৃপক্ষকে অবিলম্বে বন্ধ করতে হবে।’
বর্তমানে তিনি বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তের কাছাকাছি অবস্থান করছেন।
বিবৃতিতে বলা হয়, বেশ কিছু ল্যান্ড মাইন বাংলাদেশের সঙ্গে রাখাইনের সীমান্তের একেবারে প্রান্তে অবস্থিত টং পিও লেত ওয়াল এলাকার কাছে পাওয়া গেছে। সেখানকার বেশিরভাগ রোহিঙ্গা পালিয়ে বাংলাদেশের শরণার্থী শিবিরসহ বিভিন্ন স্থানে আশ্রয় নিয়েছে।
কিন্তু বারবারই তারা সেদিক দিয়ে সীমানা পেরিয়ে যাতায়াত করছে ঘরবাড়ি থেকে প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম আনতে, বা কখনো অন্যদের পালিয়ে বাংলাদেশে আসতে সাহায্য করার উদ্দেশ্যে। এর ফলে ল্যান্ড মাইনের শিকার হচ্ছে অনেকে। কেউ কেউ আবার জীবন বাজি রেখে অন্যদের বাঁচানোর জন্য মাটি খুঁড়ে পুঁতে রাখা মাইনগুলো তোলার চেষ্টা করছে।
বিবৃতিতে তিরানা হাসান বলেন, মিয়ানমারের উচিত মিথ্যের আড়াল থেকে বেরিয়ে আসা। কেননা পুরো বিশ্ব সত্যটা জানে। দেশটির সেনাবাহিনী ল্যান্ড মাইন বসাচ্ছে যা শুধু বেআইনিই নয়, সাধারণ জনগণ সেগুলোয় আক্রান্ত হচ্ছে।রোহিঙ্গা-মিয়ানমার-সেফ জোন-ল্যান্ড মাইন
রোহিঙ্গা ইস্যুকে ‘জাতিগত নিধন’ উল্লেখ করে এসব কর্মকাণ্ড বন্ধ করতে এবং মানবাধিকার বিষয়ক সংগঠনগুলোকে অবাধ প্রবেশাধিকার দিতে মিয়ানমার সরকারের প্রতি দাবি জানিয়েয়ে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল।
মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর সঙ্গে সেনাবাহিনীর বহুদিন ধরে চলমান সংঘর্ষ-সহিংসতা সঙ্কট সমাধানে ২০১৬ সালের আগস্টে গঠিত হয় অ্যাডভাইজরি কমিশন অন রাখাইন স্টেট। জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব কফি আনানের নেতৃত্বে ওই কমিশন এক বছরের তদন্তের চূড়ান্ত প্রতিবেদন মিয়ানমারের ক্ষমতাসীন দলের প্রধান অং সান সু চির কাছে জমা দেয় চলতি বছরের ২৪ আগস্ট।
৬৩ পৃষ্ঠার এই প্রতিবেদন জমা দেয়ার কয়েক ঘণ্টা পরই ২৪ আগস্ট দিবাগত রাতে ত্রিশটি পুলিশ ও সেনাচৌকিতে রহস্যজনক হামলার ঘটনা ঘটে। হামলায় নিহত হয় নিরাপত্তা বাহিনীর ১২ সদস্য। তারপরই হামলার জন্য রোহিঙ্গা ‘জঙ্গি’দের দায়ী করে জবাব হিসেবে সেনাবাহিনী পুরো অঞ্চলে হত্যাযজ্ঞ শুরু করে।রোহিঙ্গা-ল্যান্ড মাইন-মিয়ানমার
সেনাবাহিনীর ওই হামলায় এখনও পর্যন্ত ৪শ’র বেশি মারা গেছে, আর প্রাণভয়ে লাখো মানুষ সীমান্ত পেরিয়ে পাড়ি জমাচ্ছে বাংলাদেশে। নৌপথে পালিয়ে আসার পথে নৌকাডুবিতেও বাড়ছে মৃতের সংখ্যা।
আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, আনান কমিশনের রিপোর্ট বাস্তবায়ন না করার উদ্দেশ্যেই মিয়ানমারের সেনাবাহিনী এই হত্যাকাণ্ড শুরু করে। -চ্যানেল আই